মোঃ আবুল কাশেম, বিশ্বনাথ (সিলেট) থেকে :: জেকোবিন, আমেরিকান ফেনটাইল, জার্মান শিল্ড, ইন্ডিয়ান লক্ষা, বোখারা ও শার্টিন নামের উচ্চমূল্যের বিদেশি কবুতর পালন করে সাফল্য পেয়েছেন সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার সৌখিন যুবক শেখ আফজাল হোসেন। প্রথমে শখ করেই শিরাজী ও শার্টিন জাতের ছয় কবুতর ক্রয় করেন তিনি।
এরপর অন্যান্য জাতের কবুতরগুলোও সংগ্রহ করেন দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে। ধীরে ধীরে আফজালের শখের কবুতর পালন রূপ নেয় ‘এসকে পিজিয়ন লফট’ নামের খামারে।
সরেজমিনে সদর ইউনিয়নের উত্তর ধর্মদা গ্রামে আফজালের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বসত ঘরের ছাদে রয়েছে তার কবুতরের খামার। নানা ধরনের খাঁচার মধ্যে থাকা নানা জাতের বিদেশি কবুতরকে পরম যত্নে মুখে খাবার তুলে দিচ্ছেন আফজাল। কথা হয় তার সাথে, তিনি জানান, ছোটবেলা থেকেই দেখে এসেছি, আমাদের ঘরে দেশিকবুতর পালন করা হয়। আমিও শখের বসে সেগুলো পালন শুরু করি। এক সময় বিদেশি কবুতর দেখে সেগুলো পালনের শখ পেয়ে বসে।
সিলেটের এমসি কলেজ থেকে ম্যানেজমেন্টে মাস্টার্স করে ব্যবসা করার ইচ্ছে ছিল বিশ্বনাথের উত্তর ধর্মদা গ্রামের শেখ আফজাল হোসেনের। উপজেলা সদরের নতুন বাজারে একটি ‘খেলাঘর’র মাধ্যমে সে ইচ্ছের কিছুটা বাস্তবায়ন হয়েছে তার।
তবে, তাদের পারিবারিকভাবে দেশি কবুতর পালনের বিষয়টি সৌখিন যুবক আফজলের মনে দাগ কাটে। লেখাপড়াতে থাকাবস্থায়ই মনোযোগ দেন দেশি কবুতর লালন-পালনের কাজে। এগুলো কিনতে গিয়ে খোঁজ পান বিভিন্ন জাতের বিদেশি কবুতরের। এর মধ্যে তিন জোড়া শিরাজী ও শার্টিন কবুতর দিয়ে যাত্রা শুরু হয় তার বিদেশি জাতের কবুতর পালন। ক্রয় করেন আরও কয়েক জাতের বিদেশি কবুতর। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে এদের সংখ্যা। বাচ্চা এবং বিক্রয় উপযোগী কবুতর অনলাইনে বিক্রয় শুরু করেন আফজাল। বিশ্বনাথে প্রথম বিদেশি কবুতরের বাণিজ্যিক ফার্ম হিসেবে যাত্রা শুরু করে তার ‘এসকে পিজিয়ন লফট’। চার বছর পূর্বে শুরু করা তার এই ফার্ম থেকে প্রতি মাসে আয় হচ্ছে ২৫ হাজার টাকার মতো।
বর্তমানে তার ফার্মে জেকোবিন, বোখারা, ইন্ডিয়ান লক্ষা, আমেরিকান ফেনটাইল, জার্মান শিল্ড, শার্টিন-এই ছয় জাতের ৬০টির অধিক বিদেশি কবুতর আছে। যার বাজার মূল্য কয়েক লাখ টাকা। এর মধ্যে জেকোবিন জাতের মূল্য অনেক বেশি। বিক্রয় উপযোগী এক জোড়া জেকোবিনের দাম ৯০ হাজার থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত। এই জাতের এক জোড়া বাচ্চার দাম ২৫ হাজার টাকা থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত। তবে, অন্যান্য জাতের মধ্যে সর্বনিম্ন ১৫০০ টাকা দামের কবুতরও রয়েছে তার খামারে।
শেখ আফজাল আরও জানান, তার বিদেশি জাতের কবুতরকে খাবার হিসেবে গম, ডাবলি, মোটর, চিনা, বাজরা, কুসুমফুল ইত্যাদি মিশ্রন করে খাওয়াতে হয়। এতে করে মাসে ব্যয় হয় ৫ হাজার টাকার মতো।
অপরদিকে, অনলাইনের মাধ্যমে কবুতর ও কবুতরের বাচ্চা বিক্রয় করে মাসে আয় হয় প্রায় ২৫ হাজার টাকা। অনলাইনে তার কবুতর বেশির ভাগই ভারত, ঢাকা, খুলনা ও চট্রগ্রামেই বিক্রয় করা হয়। ধীরে ধীরে ‘এসকে পিজিয়ন লফট’-এর পরিধি বাড়ানোর ইচ্ছে আছে বলেও জানান তিনি।
উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম কলেন, যারা কোয়ালিফাইড, তারাই এসব ক্ষেত্রে ভাল করছে, সফল হচ্ছে। বিদেশি জাতের কবুতরের ফার্ম নিঃসন্দেহে ব্যতিক্রমী ও অধিক লাভজনক। আমরা শিগগিরই শেখ আফজালের ফার্ম পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় সার্পোট দেবো।
এ ব্যাপারে কথা হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অমিতাভ পরাগ তালুকদার বলেন, এটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। ওই উদ্যোক্তার মতো অন্য যুবকরাও এসব কাজে আগ্রহী হলে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি হবেই।
from সিলেট – দ্যা গ্লোবাল নিউজ ২৪ http://ift.tt/2AIYU2y
November 15, 2017 at 05:31PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন