সুরমা টাইমস ডেস্ক:: এক বছর ধরে সহায়ক সরকারের দাবি তোলা বিএনপি নেতারা কেন আবার নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি তুলছেন সেটা বুঝতে পারছে না আওয়ামী লীগ। ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপি আসলে কি চায় সেটাই জানতে চান তারা।
নূর হোসেন দিবসে শুক্রবার সকালে রাজধানীর জিরো পয়েন্টের নূর হোসেন চত্বরে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানিয়ে সাংবাদিকদের এ কথা ওবায়দুল কাদের।
১৯৮৭ সালের ১০ই নভেম্বর এরশাদবিরোধী আন্দোলনে আওয়ামী লীগের কর্মসূচিতে বুকে পিঠে ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক’ স্লোগান লিখে অংশ নিয়েছিলেন নূর হোসেন। পুলিশের গুলিতে তিনিসহ তিনজন সেদিন প্রাণ হারান। সেই থেকেই এই দিনটি নূর হোসেন দিবস হিসেবে পালিত হয়।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপি এখন কখনো সহায়ক, কখনো তত্ত্বাবধায়কের দাবি করে। আসলে তারা কী চায়, সেটাই আমরা জানতে চাই।’
নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি পূরণ না হওয়ায় বিএনপি ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন বর্জন করে। নির্বাচন বানচালে তাদের সহিংস আন্দোলন এবং সরকারের এক বছর পূর্তির পর সরকার পতনের আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার পর বিএনপি আর তত্ত্বাবধায়কের দাবি তোলেনি। বরং ২০১৬ সালের ১৮ই নভেম্বর খালেদা জিয়ার সংবাদ সম্মেলনে যথা সময়ে নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের রূপরেখা দেয়ার কথা জানান হয়। এরপর থেকে প্রায় এক বছর ধরে বিএনপি সহায়ক সরকারের দাবিতে সোচ্চার ছিল।
কিন্তু সম্প্রতি দলের নেতারা জানান, তারা সহায়ক সরকারের রূপরেখা দেবেন না। বরং আগের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে ফিরে গেছে বিএনপি।
অবশ্য বিএনপি নেতারা এবার নির্বাচন বর্জনের কথা বলছেন না। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ বলেছেন, বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে, সরকার পারলে যেন এটা ঠেকায়।
এই অবস্থায় বিএনপিকে নির্বাচনে আসতে আওয়ামী লীগ কোনো আহ্বান জানাবে কি না, জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপিকে আহ্বান করলেও তারা নির্বাচনে আসবে, না করলেও আসবে।’
‘তাদের নেতারাই বলছেন তারা নির্বাচনে আসবে। কাজেই এখানে আহ্বানের তো কোন প্রয়োজন নেই।’
আওয়ামী লীগ প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন চায় জানিয়ে কাদের বলেন, ‘বিএনপি একটা বড় দল, তারা অংশ নিলে নির্বাচনটা প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হবে। সেজন্য আমরা চাই বিএনপি নির্বাচনে আসুক।’
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আগের মতো এখনও মানা হবে না-এমন ইঙ্গিত দিয়ে কাদের বলেন, ‘পাগল আর শিশু ছাড়া কেউ নিরপেক্ষ নয়, এ কথা কি শেখ হাসিনার? এ কথা খালেদা জিয়ার।’
গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির অংশ না নেয়ার বিষয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘৫ই জানুয়ারির নির্বাচনে বিএনপি আসেনি বলে গণতন্ত্রের কী দোষ? গণতন্ত্র নেই বলে তারা বিষোদগার করে সরকারের বিরুদ্ধে। কিন্তু তাদের মনে রাখা উচিত গণতন্ত্র না থাকলে ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়ন, কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি এসোসিয়েশনের কনফারেন্স বাংলাদেশে হতো না।
আগামী নির্বাচন নিয়ে বিএনপির সঙ্গে সংলাপের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেন কাদের। বলেন, ‘সংলাপ কেন? দরকার তো নেই।’
৭ই নভেম্বর স্মরণে বিএনপিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বুধবার কেন সমাবেশের অনুমতি দেয়া হয়নি, তারও কারণ জানান কাদের। বলেন, ‘সমস্যা হচ্ছে তাদের এ যাবত এমন একটি জনসভাও হয়নি, যেখানে কোন বিশৃঙ্খলা হয়নি। এই বিশৃঙ্খলাগুলোকে ভয় পাই বলেই আমরা এই বিষয়টা নিয়ে দ্বিধাগ্রস্থ ছিলাম।’
‘আমরা অনুমতি সব সময় দিতে চাই’ এমন মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ‘তারা (বিএনপি) একটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল, তাদের অবশ্যই সভা সমাবেশ করার অধিকার রয়েছে।’
রবিবার বিএনপির সমাবেশের অনুমতি দেয়া হয়েছে জানিয়ে কাতের বলেন, ‘শেখ হাসিনা সরকার কতটা গণতান্ত্রিক এই অনুমতি দিয়ে আবারো প্রমাণিত হলো।’
বিএনপিকে সমাবেশের অনুমতি দিয়ে সরকার তাদের প্রতি নমনীয় হচ্ছে কি না-এমন প্রশ্নে কাদের বলেন, ‘এটা কোন নমনীয়তার ব্যাপার না। ব্যাপার হচ্ছে, যে বিএনপি সমাবেশের অনুমতি চেয়েছে। অনুমতি দেয়ার ব্যাপারে কোন বাধা তো কখনো ছিল না।’
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, একেএম এনামুল হক শামীম, কৃষি বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, কার্যনির্বাহী সদস্য এসএম কামাল হোসেন, এবিএম রিয়াজুন কবির কাওছার, আনোয়ার হোসেন প্রমুখ।
from Sylhet News | সুরমা টাইমস http://ift.tt/2iIQuk9
November 10, 2017 at 03:31PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন