কাইয়ুম উল্লাস:: ‘সাধু গৌতমের সাথে দেড় বছর হলো আমার প্রেমের সম্পর্ক। বিয়ের আশ্বাসে সে প্রেমের সম্পর্ককে শারীরিক পর্যায়েও নিয়ে গেছে। কিন্তু এখন বিয়ে করতে চায় না। আমার জীবন নষ্ট করেছে সাধু গৌতম। আমি সামাজিক স্বীকৃতি চাই।’ কথাগুলো বলছিলেন বৃহস্পতিবার সিলেটের রামকৃষ্ণ মিশনে এসে মহারাজের কাছে বিচারপ্রার্থী হওয়া একজন নারী চিকিৎসক। তিনি বলেন, ‘এই মিশনের সাধু গৌতম তার সাথে প্রেম করেছেন, বিয়ের কথা বলে যৌন মিলনও করেছেন, কিন্তু এখন প্রতারণা করছেন। এ বিষয়ে মহারাজের কাছে বিচারপ্রার্থী হলে তারা বিষয়টি না দেখে দিয়ে উল্টো অপমান করেছেন।’
ঘটনার শিকার ওই তরুণী জানান, প্রায় দেড় বছর হলো তিনি রামকৃষ্ণ মিশনে ছোট মহারাজ সাধু গৌতুমের কাছে আসা-যাওয়া করেন। তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তিনি পেশায় একজন চিকিৎসক। বালাগঞ্জ উপজেলায় ডাক্তারি করেন। নগরীর পাঠানটুলা এলাকায় পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। মায়ের সাথে রামকৃষ্ণ মিশনে এসে সাধু গৌতুমের সাথে তার পরিচয়। প্রথমে ভক্ত হিসেবে আসা-যাওয়া। তারপর সাধুর সাথে প্রেম। নিয়মিত মুঠোফোনে কথা বলা হতো। একপর্যায়ে সাধু গৌতুমের চাপাচাপিতে তা শারীরিক সম্পর্ক পর্যন্ত গড়ায়। যখন বিয়ের কথা বলা হয়, তখন গৌতম এড়িয়ে যান। গেল কিছুদিন বিয়ে নিয়ে তাদের মধ্যে মনোমালিন্য হচ্ছিল। গৌতম তাকে বিয়ে করবেন না বলে জানাচ্ছেন। সম্পর্ক অস্বীকার করে প্রতারণা করছেন। তিনি রামকৃষ্ণ মিশনে এসে প্রথমে সাধু গৌতমের সাথে আলাপ করেন। তিনি তাকে বিয়ে করতে রাজি নন বলে জানান। পরে এ ব্যাপারে বড় মহারাজের সাথে কথা বলেন। এসময় মহারাজসহ ৫ জন মিলে তাকে অকথ্য ভাষায় অপমান করেন। তিনি এ বিষয়ে সামাজিকভাবে সামাজিক স্বীকৃতি চান। যদি কোনো সুরাহা না আসে তিনি আইনগত ব্যবস্থায় যাবেন।
জানতে চাইলে সাধু গৌতম অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, ওই নারী চিকিৎসকের সাথে তার দেড় বছরের জানাশোনা। তিনি বিষন্নতায় ভুগছেন। তার মায়ের সাথে তিনি রামকৃষ্ণ মিশনে আসেন। তিনি তাকে বিষন্নতা কাটাতে বোঝান। গেল কিছুদিন তিনি লক্ষ করেছেন মেয়েটি তার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়েছে। সে তাকে ভালোবাসে বলেছে। কিন্তু তিনি একজন ভক্ত হিসেবে তাকে ভালোবাসেন, প্রেমিকা হিসেবে নয়। আর তিনি সন্ন্যাস জীবন থেকে বিবাহিত জীবনেও যেতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন। এরপর থেকে তিনি তার সাথে মুঠোফোনে কথা বলা বন্ধ করে দেন। এতে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে ওই তরুণী এসে সরাসরি তার কক্ষে ঢুকে পড়েন। তাকে বিয়ের কথা বলেন। বিয়ে না করলে তিনি সাথে থাকা ছুরি বের করে আত্মহত্যারও হুমকি দেন।
ওই তরুণীর পরিবার বলছে, তাদের মেয়ের পূর্বে একটি বিয়ে হয়েছে। ডিভোর্স হয়ে গেছে। কোনো বাচ্চা নেই। পরে মেয়েটি বিষন্ন ছিল। তাই রামকৃষ্ণ মিশনে মেয়েকে নিয়ে আসতেন। এখন মেয়েটি বলছে, গৌতম মহারাজের সাথে তার প্রেমের সম্পর্ক।
রামকৃষ্ণ মিশনের বড় মহারাজ জানান, গৌতম মহারাজ একজন সাধু। সে সবেমাত্র সন্ন্যাস জীবন এসে পড়েছে। সে বিয়ের কথা ভাবছে না। মেয়েটি তাদের কাছে বলেছে, গৌতমের সাথে তার সম্পর্কের কথা। বড় মহারাজ তার কথা শোনে পরিবারের সাথে বিষয়টি নিয়ে আলাপ করেন। মেয়েটিকে কোনো অপমান করা হয়নি।
এ ব্যাপারে পুলিশ পরিদর্শক অঞ্জন দাস বলেন,‘ ওই নারী বিষন্নতাঅভিযোগ করছেন সাধু গৌতমের সাথে তার প্রেমের সম্পর্ক, তাকে বিয়ে করবেন বলে এখন প্রতারণা করে আসছেন। কিন্তু গৌতম দাবি করছেন, তার সাথে সে ধরনের কোনো সম্পর্ক নেই। এখন ওই নারী যদি আইনি কোনো ব্যবস্থায় যান পুলিশ বিষয়টি দেখবে। আপাতত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।
ঘটনার খবর পেয়ে রামকৃষ্ণ ছুটে যান সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান। তিনি মেয়ে ও তার পরিবারের সাথে কথা বলেন। তারপর বলেন, ‘যদি ছেলেটির সাথে সম্পর্কের প্রমাণ তাকে সবাই মিলে তাকে সহযোগিতা করব।’
এসএমপি পুলিশের উপকমিশনার (সাউথ) বাসুদেব বণিক বলেন, ‘সম্পর্কের বিষয়টি তাদের ব্যক্তিগত। যদি আইনি বিষয় আসে পুলিশ দেখবে। আপাতত তাকে পরিবারে জিম্মায় পৌঁছে দিতে পুলিশকে বলা হয়েছে।’
সূত্র : দৈনিক সবুজ সিলেট
from Sylhet News | সুরমা টাইমস http://ift.tt/2A60CKV
November 03, 2017 at 08:40PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Click to see the code!
To insert emoticon you must added at least one space before the code.