সুরমা টাইমস ডেস্ক :: সংবিধান অনুযায়ী ২০১৮ সালের শেষের দিকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কথা থাকলেও আগাম নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি প্রার্থী ও ভোটারবিহীন নির্বাচন নিয়ে ‘বিতর্ক’ এখনো পিছু ছাড়েনি। দেশের সুশীলসমাজ ও বিশেষজ্ঞরা ছাড়াও জাতিসংঘ, প্রভাবশালী দেশ, উন্নয়ন সহযোগী দেশ ও সংস্থাগুলো জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিতে দূতিয়ালি করছে। এরই মধ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে ‘নির্বাচনী রোডম্যাপ’ অনুযায়ী অগ্রসর হচ্ছে নির্বাচন কমিশন।
গতকালও প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা বলেছেন, সরকার চাইলে আগাম নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত নির্বাচন কমিশন। এর আগে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত রেনসে টিরিংকের নেতৃত্বে দুই সদস্যের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সংসদ নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতি ও অগ্রগতি নিয়ে আলোচনার পর সিইসির সঙ্গে কথা হয় সাংবাদিকদের।উল্লেখ্য, ৫ জানুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনের পর দশম সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরু হয় ২০১৪ সালের ২৯ জানুয়ারি। সেক্ষেত্রে ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারির আগের ৯০ দিনের মধ্যে একাদশ সংসদ নির্বাচনের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
এর আগে সিইসি জানিয়েছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের জন্য নির্বাচন কমিশন প্রস্তুত নয়। বিভিন্ন স্থানীয় সরকার নির্বাচনে পরীক্ষামূলকভাবে ইভিএম ব্যবহার করা হবে। তবে সময়মতো সেনা মোতায়েনের বিষয়ে ইসি সিদ্ধান্ত নেবে বলেজানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার সিইসি নূরুল হুদা। গত বুধবার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন ভবনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে সিইসি স্পষ্ট ভাষায় বলেন, ইসি সবার গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। চাইলেই আগাম নির্বাচনও হতে পারে।
কয়েক দিন আগে আগামী জাতীয় নির্বাচনে সেনা মোতায়েন হবে কি না জানতে চাইলে সিইসি নূরুল হুদা বলেন, এখনো সিদ্ধান্ত নেইনি। প্রত্যেক জাতীয় নির্বাচনেই সেনাবাহিনী মোতায়েন থাকে। এটা একটা বাস্তবতা। কিন্তু আমরা কমিশন এখন পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নেইনি। অনেক সময় আছে। এত তাড়াতাড়ি আপনারা এই সিদ্ধান্ত চান কেন? অনেক সময় আছে। এখনো এক বছরের বেশি সময় আছে সেই অবস্থানে পৌঁছতে। এত আগে তো সেই সিদ্ধান্ত দেয়া যাবে না। সময়মতো সেনা মোতায়েনের বিষয়ে ইসি সিদ্ধান্ত নেবে।
কয়েকদিন আগে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার সাংবাদিকদের বলেন, আগামী নির্বাচনে সেনা মোতায়েন হবে। তবে কোন প্রক্রিয়ায় হবে, তা এখনো ঠিক হয়নি। এ খবর প্রকাশ হওয়ার পর সিইসি নূরুল হুদা সরকারি বার্তা সংস্থা বাসসকে বলেন, নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত হয়নি। নির্বাচন কমিশনারদের এ ধরনের বক্তব্যে তাদের মধ্যে বিভক্তি ফুটে উঠছে কি না সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নূরুল হুদা বলেন, বিভক্তির কারণ নেই। তিনি (মাহবুব তালুকদার) হয়তো বলেছেন। তিনি (মাহবুব) কিন্তু বলেছেন, এটা কমিশনের সিদ্ধান্ত না।
মাহবুব তালুকদার মনে করেন, নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন করার প্রয়োজন হবে, এটা তার ব্যক্তিগত মত। কমিশনের সভার বরাত দিয়ে তিনি এ কথা বলেননি। পরের দিন সিইসি অবশ্য নিজের মতামত পাল্টিয়ে বলেন, নির্বাচনে সেনা মোতায়েন একটা বাস্তবতা। তবে এখনো সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় আসেনি। নির্বাচন কমিশনার ২৮ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জে এক বৈঠকে বলেছেন, সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেয়ার মতো সময় এখনো আসেনি।
তবে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ সেনা মোতায়েন প্রসঙ্গে বলেছেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর পরিস্থিতি বিবেচনা করে সেনা মোতায়েনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। নির্বাচনের এখনো এক বছর বাকি। কমিশন এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।
একটি রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে দলীয় নেতা-কর্মীদের আগাম নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক। সেই ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন আগাম নির্বাচনের জন্য কতটুকু প্রস্তুত জানতে চাইলে সিইসি গতকাল বলেন, সেটা করা যাবে। নির্বাচনের জন্য তো ৯০ দিন সময় থাকে। এটা তো সরকারের ওপর নির্ভর করে আগাম নির্বাচনের বিষয়। তারা যদি আগাম নির্বাচনের জন্য বলে, তখন আমরা পারব। শুধু পেপার ওয়ার্কগুলো লাগবে। সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে আমাদের কোনো আপোষ নেই। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য তাদের কোনো পরামর্শ ছিল কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, না। তারা বলেছেন তোমাদের সাথে কথা বলে আমরা অনেক খুশি।
চলতি বছরের গত ১৫ জুলাই একাদশ সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। সাতটি কর্মপরিকল্পনা সামনে রেখে বই আকারে এই রোডম্যাপ প্রকাশ করে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এ রোডম্যাপ সব রাজনৈতিক দল ও সংশ্লিষ্টদের কাছে পাঠানো হবে। ইসির রোডম্যাপে যে সাতটি কর্মপরিকল্পনা রয়েছে সেগুলো হচ্ছে- আইনি কাঠামোগুলো পর্যালোচনা ও সংস্কার। নির্বাচন প্রক্রিয়া সহজীকরণ ও যুগোপযোগী করতে সংশ্লিষ্ট সবার পরামর্শ গ্রহণ। সংসদীয় এলাকার নির্বাচনী সীমানা পুনঃনির্ধারণ। নির্ভুল ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও সরবরাহ। বিধি অনুসারে ভোটকেন্দ্র স্থাপন। নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন এবং নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের নিরীক্ষা এবং সুষ্ঠু নির্বাচনে সংশ্লিষ্ট সবার সক্ষমতা বৃদ্ধির কার্যক্রম গ্রহণ।
রোডম্যাপে আগামী নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দলের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করে জনআকাক্সক্ষা পূরণের লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলসহ ছয় ধরনের অংশীজনের সঙ্গে সংলাপ করা হয়। ইসি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে। ৩১ জুলাই সুশীলসমাজের প্রতিনিধি, বিশিষ্টজন, সম্পাদক, সিনিয়র সাংবাদিক এবং টিভি মিডিয়ার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে সংলাপ করে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন গ্রহণযোগ্য করতে তাদের মতামত নেয়া হয়।
from Sylhet News | সুরমা টাইমস http://ift.tt/2j335Ql
November 30, 2017 at 03:12PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Click to see the code!
To insert emoticon you must added at least one space before the code.