সিউল, ২১ নভেম্বর- লন্ডন ও টোকিওসহ আরও কয়েকটি শহরের সঙ্গে যুক্ত হলো নতুন একটি নাম আনসান। দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলের অদূরে আনসান শহরের অবস্থান। বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি ছাড়াও চাইনিজ, ইন্দোনেশীয়, ভিয়েতনামিজ ও শ্রীলঙ্কানসহ অন্যান্য জাতি-গোষ্ঠী মিলে শহরটি যেন বহু ভাষা, বহু সংস্কৃতির মিলনমেলা। এই শহরের মাল্টিকালচারাল পার্কে দক্ষিণ কোরিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. জুলফিকার রহমানের উদ্যোগে দেশটির মাটিতে গড়ে তোলা হয়েছে প্রথম স্থায়ী শহীদ মিনার। ২০০ বর্গফুটের বেদির ওপর নির্মিত ও আট ফুট উচ্চতার মিনারটি স্টিল দিয়ে তৈরি। শহীদ মিনারের জন্য জায়গা বরাদ্দ ও নকশা অনুমোদন থেকে শুরু করে নির্মাণের পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে মাত্র এক বছর সময় লাগে। এ বিষয়ে সর্বাত্মক সহযোগিতা করে আনসান সিটি। গত রোববার (১৯ নভেম্বর ২০১৭) শহীদ মিনারটির শুভ উদ্বোধন হয়ে গেল। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মো. জুলফিকার রহমান ও আনসান সিটির মেয়র জে জং গিল। নভেম্বরের কনকনে শীত উপেক্ষা করে প্রাণের শহীদ মিনার উদ্বোধনের এই ঐতিহাসিক মুহূর্তের অংশ হতে একত্রিত হয়েছিলেন বাংলাদেশি বিভিন্ন সামাজিক-রাজনৈতিক সংগঠনের নেতারাসহ অগণিত প্রবাসী। মাতৃভাষা ও মাতৃভূমির প্রতি গভীর মমত্ববোধ ও ভালোবাসার টানে তারা ছুটে এসেছিলেন দূর-দুরান্ত থেকে। বাংলাদেশ ও কোরিয়ার জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। মো. জুলফিকার রহমান অন্যান্য সম্মানিত অতিথিদের সঙ্গে নিয়ে শহীদ মিনার উন্মোচন করেন। এরপর মো. জুলফিকার রহমান, জে জং গিল ও বিভিন্ন সামাজিক-রাজনৈতিক সংগঠনের নেতারা ভাষাশহীদদের সম্মানে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। বক্তৃতা পর্বে মো. জুলফিকার রহমান কোরীয় ভাষায় মহান ভাষা আন্দোলনের পটভূমি তুলে ধরে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের ইতিহাস ও তাৎপর্যের ওপর আলোকপাত করেন। তার বক্তব্যে ১৯৪৮ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ভাষা আন্দোলনের সূত্রপাত, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে শহীদদের আত্মাহুতি এবং এ থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সূত্রপাত, জাতির জনকের নেতৃত্বে রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা যুদ্ধে ত্রিশ লাখ প্রাণের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জন, ১৯৯৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ইউনেসকো কর্তৃক শহীদ দিবসকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মর্যাদা প্রদান এবং তার মাধ্যমে দিবসটি সারা বিশ্বের সব ভাষা রক্ষার প্রতীক হয়ে ওঠা ইত্যাদি বিষয় উঠে আসে। এ ছাড়া তিনি শহীদ মিনার তৈরির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে, বিশেষভাবে আনসান সিটি করপোরেশনকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানান। জে জং গিল তার বক্তব্যে বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলন ও জাপানি দখলদারিতে থাকাকালে কোরিয়ার ভাষা-সংস্কৃতি রক্ষার সংগ্রামের মধ্যে সাযুজ্যগুলো নিয়ে আলোচনা করেন। আনসান শহরে এ বৈশ্বিক প্রতীক শহীদ মিনারটি স্থাপন করায় তিনি আনসানবাসীদের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রদূতকে ধন্যবাদ জানান। এ উপলক্ষে দূতাবাসের সাংস্কৃতিক দলের মনোমুগ্ধকর পরিবেশনা সবাইকে মোহিত করে। শহীদ মিনারটি তৈরির মাধ্যমে কোরীয় প্রবাসী বাংলাদেশিদের দীর্ঘ দিনের লালিত স্বপ্ন পূরণ হলো। বাংলাদেশের গর্বের প্রতীক আজ কোরিয়ার বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। সবার প্রত্যাশা এই মিনার আগামী দিনগুলোতে বাঙালি অন্যান্য ভিনদেশি ভাষা ও সংস্কৃতিচর্চার কেন্দ্রে পরিণত হবে। তথ্যসূত্র: প্রথম আলো এআর/২০:৫০/২১ নভেম্বর
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2Amqu9q
November 22, 2017 at 02:48AM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন