মানুষের খাদ্য নিয়ে আমরা কাউকে খেলতে দেব না-শেখ হাসিনা

সুরমা টাইমস ডেস্ক::

চালের মজুদদারীর বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, মানুষের খাদ্য নিয়ে আমরা কাউকে খেলতে দেব না।

প্রধানমন্ত্রী রবিবার দশম জাতীয় সংসদের সপ্তদশ অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে একথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘কোথাও কেউ চাল কোনরকম মজুদ রেখে এ ধরনের ঘটনা ঘটাচ্ছে কি না- অবশ্যই সেটা আমরা তল্লাশি করবো এবং তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেব। কারণ মানুষের খাদ্য নিয়ে কাউকে আমরা খেলতে দেব না। এখানে কারা এই খেলাটা খেলছে সেটা আমাদের বের করতে হবে।’

সরকার ইতোমধ্যেই বিদেশ থেকে চাল কিনে যেকোন ধরনের ঘাটতি পূরণের উদ্যোগ নিচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যত লাগে (চাল) আমরা কিনে নিয়ে আসবো। কিন্তু ইনশাল্লাহ মানুষকে খাদ্য নিয়ে কষ্ট পেতে দেব না।

প্রধানমন্ত্রী চালের সংকট নিয়ে পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের উল্লেখ করে বলেন, কয়েকদিন আগে পত্র পত্রিকায় হুলস্থুল হয়েছিল আমাদের খাদ্য নিয়ে। খাদ্য নাই, খাদ্যের অভাব, চালের দাম বেড়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, চালের দাম বাড়ার কোন যৌক্তিকতাই আমি দেখিনা। এখানে কারা এই খেলাটা খেলছে সেটা আমাদের বের করতে হবে। কারণ বাংলাদেশের একটা দুর্ভাগ্য যে কখনো কখনো কিছু মানুষ, মানুষকে নিয়েই খেলে। যেটা আমরা ’৭৪ সালেও দেখেছিলাম এবং তখন যিনি খাদ্য সচিব ছিলেন তাকে পরবর্তীকালে জিয়াউর রহমান মন্ত্রী বানিয়েছিল। ’৭৪-এর দুর্ভিক্ষ আর ’৭৫-এর পরে ঐ খাদ্য সচিবকে মন্ত্রী বানানোর যোগসূত্রটা কি সেটাও দেখতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখান থেকেও আমাদের কিন্তু সতর্ক হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।

তিনি বলেন, চলতি মওসুমে ২৭ লাখ মে.ট. আউশ চাল উৎপাদনের কথা রয়েছে। কাজেই এই ২৭ লাখ মে.ট. চাল যদি উৎপাদন হয়, তাহলে তো আমাদের অভাব থাকার কথা নয়।

সরকার প্রধান বলেন, সারা বাংলাদেশের কোথায় কোন্ গোডাউনে কতটুকু চাল আছে এবং কৃষকদের ঘরে ও মিল মালিকদের কাছে কোথায় কত চাল আছে তার একটা হিসাব আমরা নিচ্ছি।

এক্ষেত্রে দেশবাসীর সহযোগিতা কামনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা এই ধরনের কর্মকান্ড করছে (মজুদদারি) তারা কারা। তাদের যেন খুঁজে বের করে দেন।

মিয়ানমারের শরণার্থী প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গতকাল এটি নিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে আলোচনা হয়েছে। নিরাপত্তা পরিষদ থেকে যে স্টেটমেন্টটা দেয়া হয়েছে সেখানে মিয়ানমারকেই এই নির্যাতন, হত্যাকান্ড বন্ধের কথা বলা হয়েছে। একইসঙ্গে বাংলাদেশ যে এই নির্যাতিত মানুষগুলোকে আশ্রয় দিয়েছে তার জন্য বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসা করেছে। জাতিসংঘ মহাসচিবও মিয়ানমারকে এই নির্যাতন বন্ধের আহবান জানিয়েছে এবং তাদের নাগরিকদের স্বদেশে ফিরিয়ে নেয়ার কথাও জাতিসংঘ বলেছে।

প্রধানমন্ত্রী মিয়ানমারের শরণার্থীদের দুরাবস্থার কথা তুলে ধরে বলেন, সব থেকে মানবেতর অবস্থায় রয়েছে শিশুরা। কয়েকটা শিশুর সাথে কথা বললাম চোখের পানি রাখা যায় না।

শেখ হাসিনা উখিয়া শরণার্থী শিবিরের অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়ে বলেন, একটি শিশুর চোখের সামনে তার বাবা-মাকে মেরে ফেলেছে। সে তার দাদা-দাদির সাথে কোনমতে এপারে চলে এসেছে। তার নিজের শরীরেও আঘাতের ক্ষত। দু’টি মেয়ে-তাদেরও বাবা-মা কেউই বেঁচে নেই, আপনজন সবাইকে হারিয়ে এপারে চলে এসেছে দুই বোন, আরেকটা ছোট মেয়ে তার ছোট্ট ভাইটাকে নিয়ে অন্যলোকদের সঙ্গে চলে আসলেও ভাইটা যে কোথায় হারিয়ে গেছে সে জানে না। এ ধরনের করুণ কাহিনী সেখানে গিয়ে আমার শুনতে হয়েছে। যা কিনা আমাদের পক্ষে সহ্য করা সম্ভব নয়। কারণ আমরাওতো আপনজন, ঘরবাড়ি হারিয়েছি। পাকিস্তানী হানাদাররা আমার দাদা বাড়ি, নানা বাড়ি সব জ্বালিয়ে দেয়ার পর নানা-নানি নৌকায় আশ্রয় নিয়েছিল, পুরো গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়া হয়।

’৭৫-এ রিফিউজি হিসেবে বিদেশে থাকার স্মৃতি রোমন্থন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনজন হারিয়ে রিফিউজি হিসেবে আমাদেরতো থাকতে হয়েছে, তাই এই কষ্টটা আমি বুঝি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাই এদেও দুঃখ, দুর্দশা দেখে আমরা তাদের আশ্রয় দেয়ার ব্যবস্থা করেছি, তাতে আমাদের যত কষ্টই হোক। এর ফলে আজকে মিয়ানমারের ওপরে আন্তর্জাতিক চাপ আসছে এসব শরণার্থীকে তাদের দেশে ফিরিয়ে নেয়ার।

এদের নাগরিকত্ব নিয়ে মিয়ানমারের প্রশ্ন তোলার কোন সুযোগ নেই উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারাতো মিয়ানমার থেকেই এখানে এসেছে এবং তাদের ভাষাওতো দুর্বোধ্য। আমাদের সাধ্যমত সবরকমের ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি। আর আমি আমাদের দেশবাসীকেও বলবো এরা বিপদে পড়ে আমাদের কাছে আশ্রয় নিয়েছে, কাজেই তাদের যেন কোন কষ্ট না হয়। স্থানীয় জনগণ যারা আছেন, আমাদের রাজনৈতিক দলগুলি আছে, প্রশাসন- সকলেই যেন এই বিষয়টাতে বিশেষভাবে দৃষ্টি দেয়।

তিনি বলেন, সেইসাথে আরেকটি নির্দেশ সেখানে আমি দিয়ে এসেছি এই জনস্্েরাতের সাথে আবার যারা মূল দোষী, যারা ঘটনাটার সূত্রপাত করেছে তারা যেন এখানে (বাংলাদেশে) কোনভাবে ঢুকতে না পারে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা ত্রাণ নিয়ে যাবে এবং সেই ত্রাণে কি কি আছে সেটাও আমি বলেছি স্ক্যান করে দেখতে। আর ত্রাণ দিয়ে যারা চলে আসবেন তাদের গাড়িগুলোও আমি পরীক্ষা করতে বলেছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ আমরা মোকাবেলা করি এবং বাংলাদেশ দুর্যোগ মোকাবেলায় সিদ্ধহস্ত। কিন্তু এই মানুষের যে কষ্ট, যে দুর্দশা তা দেখে আমাদের যত কষ্টই হোক না কেনÑ যদি প্রয়োজন হয় আমরা আমাদের খাবার ভাগ করে খাব তাদের সাথে। যে সাধারণ মানুষেরা আসছে আমাদের কাছে আশ্রয়ের জন্য আমরা তাদের ফেলে দিতে পারি না।



from Sylhet News | সুরমা টাইমস http://ift.tt/2zSjjWt

November 13, 2017 at 04:14PM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top