নিজস্ব প্রতিনিধি:: সিলেটের জৈন্তাপুরে ২০১৮ সনের অনুষ্ঠিতব্য এসএসসি পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে ফরম পূরনের নামে অতিরিক্ত ফি আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। অতিরিক্ত ফি আদায় করলেও বিদ্যালয় গুলো কোন রশিদ দিচ্ছেন না শিক্ষার্থীকে।
সরজমিনে জৈন্তাপুর উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঘুরে আসন্ন এস.এস.সি পরীক্ষায় অংশগ্রহনকারী শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সাথে আলাপকালে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা জানায় আমরা বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করছি, কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মোতাবেক ফরম পূরণ করতে হয়, ফরম পূরনের টাকা পরিশোধ করলেও রশিদ পাচ্ছি না।
শিক্ষার্থীরা জানান আমরা পরিবার থেকে টাকা নিয়ে আসি কিন্তু ফরম পূরনের টাকা জমা দিয়ে গেলেও অভিভাবকদের টাকা জামাদানের রশিদ দেখাতে পারি না। অনেক শিক্ষার্থীর ফরম পূরনের টাকা পরিশোধের জন্য অভিভাবকরা মহাজনের নিকট হতে চড়া সুধে অথবা ধার কর্জ করে টাকা সংগ্রহ করে ফরম পূরনের টাকা পরিশোধ করছেন বলে জানান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অভিভাবকরা জানান একই উপজেলায় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন ভাবে ফি আদায়ে লিপ্ত রয়েছে। তাদের এহেন কার্যক্রমের বিরুদ্ধে কথা বলতে গেলে নিজেদের সন্তাদের ক্ষতি হবে। এই কারনে তারা মুখ বুঝে সহ্য করে যাচ্ছেন। বিষয়টি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর তদারকি করলে এমনটি হত না বলে জানান সচেতন অভিভাবকরা। যদিও সরকারে উচ্চ পর্যায় হতে বার বার কোচিং বানিজ্য ও অতিরিক্ত ফি আদায় বন্দের নিদেশ দিলেও উপজেলা পর্যায়ে কোন ভাবে তা বন্দ হচ্ছে না বলেই মন্তব্য করেন।
বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের সাথে আলাপকালে জানা যায় কোন কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ৫হাজার টাকা পর্যন্ত ফি আদায় করছে। এবিষয়ে জানতে রাংপানি ক্যাপ্টেন রশিদ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিজন চন্দ্র বিশ্বাস জানান- বিজ্ঞান বিভাগে ৩,৩৫০টাকা এবং মনবিক ও বানিজ্য বিভাগে ৩,২৫০টাকা করে নেওয়া হচ্ছে, তার মধ্যে ৩মাসের কেচিং ফি ১হাজার টাকা নেওয়া হচ্ছে।
সারীঘাট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ বদিউল আলম জানান- ৩,৬০০টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। তার মধ্যে বোর্ড ফি ১৬৫০টাকা, উন্নয়ন ফি ৫শত টাকা, আনুসাঙ্গীক ফি ১৫০টাকা, কোচিং ফি ৩মাসে ১২শত টাকা। জৈন্তাপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ আবুল হাসেম জানান- তারা ২,৮৫০টাকা করে নিচ্ছে, তার মধ্যে বোর্ড নির্ধারিত ফি ১,৫৫০টাকা, সেন্টার ফি ৩শত টাকা এবং বিশেষ ক্লাস ফি বাবত ১হাজার টাকা।
জৈন্তাপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা আফরোজা বেগমের সাথে একাধিক বার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি, তবে সহকারী প্রধান শিক্ষক গোলাম মোস্তাফা জানান- বিজ্ঞান বিভাগে ৪,২৫০এবং বানিজ্য ও মানবিক শাখায় ৪,১৫০টাকা হারে ফি আদায় করছেন, তার মধ্যে কোচিং ফি ১২শত টাকা নেওয়া হচ্ছে।
সেন্ট্রাল জৈন্তা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ শরীফ উদ্দিন জানান- আপনি সাংবাদিক, আমি জেনে আপনাকে জানাতে পারি, তবে অফিস সিদ্ধান্ত নিয়ে ফি আদায় করছে, আমি এবিষয়ে কিছু জানি না। হরিপুর বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ নাজির আলী সরকার জানান- বিজ্ঞান বিভাগে ৩,১০০টাকা এবং মানবিক ও বানিজ্য বিভাগে ৩হাজার টাকা করে আদায় করা হচ্ছে, তার মধ্যে কোচিং ফি ৮শত টাকা।
অপরদিকে একই উপজেলা বাউরভাগ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ আব্দুল জলিলের মোবাইল ফোনে একাধিক বার যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করনেনি তবে সহকারী শিক্ষক ময়নুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান- আমরা বোর্ড নির্ধারিত ফি ও সেন্টার ফি ব্যতিত অন্য কোন ফি আদায় করছি না।
বিগ্রেডিয়ার মজুমদার বিদ্যানিকেতন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু সাইদ তালুকদার জানান- বোর্ড নির্ধারিত ফি, উন্নয়ন ফি ও সেন্টার ফি ব্যতিত অন্য কোন ফি আদায় করছি না। অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরীক্ষাথীদের কাছ থেকে ২০১৮ সনের জুন মাস পর্যন্ত মাসিক ফি আদায় করার অভিযোগ রয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা জানান স্কুল পরিচালনা কমিটি ও শিক্ষকদের যৌথ মতামতের ভিত্তিত্বে বোর্ড ফির অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হচ্ছে।
এবিষয়ে জানতে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ সোলেমান হোসাইন জানান-আমার কাছে অতিরিক্ত ফি আদায়ের বিষয়ে কোন অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ পেলে আমি খতিয়ে দেখব। সরকারি নির্দেশনাটি আমি সকল বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষদের কাছে পৌছে দিয়েছি যাহাতে কেউ অতিরিক্ত ফি আদায় না করে। তবে অভিভাবকদের সাথে আলোচনা স্বাপেক্ষে বিশেষ ক্লাস ফি বা কেচিং ফি আদায় করতে পারে।
from Sylhet News | সুরমা টাইমস http://ift.tt/2i9Jiy6
November 13, 2017 at 09:59PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন