কলকাতা, ২৭ নভেম্বর- বিকিনি পরতে আমি ভয় পাই না। আমার স্কিন দেখতে লোকে ভালোবাসে। সেটা আমার বেশ ভালো লাগে। অবলীলায় কথাগুলো বলে গেল ১৯ বছরের একটা মেয়ে। ইউরোপা ভৌমিক। আর পাঁচটা সাধারণ বাঙালি মেয়ের থেকে সে একেবারে আলাদা। ইউরোপা ভৌমিক। মহিলা বডি বিল্ডার। ১৯ বছরের এই মেয়েটা ইতিমধ্যে ভারত তথা এশিয়ার মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ পেশাদার দেহ সৌষ্ঠব প্রতিযোগিতায় খ্যাতি অর্জন করেছে। সত্যি কথা বলতে কী, মনোহর আইচ কিংবা গুণময় বাগচির নাম আমরা বেশ কয়েকবার শুনেছি। কিন্তু, কোনও বাঙালি মহিলা বডি বিল্ডারের নাম আমাদের কানে আসেনি। এবার সেই না-শোনার চৌকাঠটাই অতিক্রম করল নিউটাউনের ইউরোপা। বলা ভালো, পেশি শক্তি সঞ্চালনের জগতে ইউরোপা প্রথম বাঙালি মহিলা, যে আন্তর্জাতিক মঞ্চে দেশের নাম উজ্জ্বল করল। তথাকথিত সুন্দরী বঙ্গ ললনাদের সাধারণ মাপকাঠিতে যেমন চেহারা হয়, ইউরোপা ঠিক তার উলটো। উচ্চতা ৪ ফুট ১০ ইঞ্চি। পেশিবহুল চেহারা। পরিমার্জিত চুলের স্টাইল। প্রথম সাক্ষাতেই মনে হবে, আধুনিক ফ্যাশনের একজন কিশোরী। কথায় কথায় উঠে এল ইউরোপা নামের প্রসঙ্গ। একটু অদ্ভুত নাম। কিন্তু, এর পিছনে কারণটা কী? উত্তরে ইউরোপা জানাল যে তাঁর জীবনটা অনেকটা লাইফ অফ পাই সিনেমার মত। ইউরোপার বাবা পরিমল ভৌমিক জাহাজের ক্যাপ্টেন। মা সুপর্ণা ভৌমিক গৃহবধূ। মেয়ের জন্মের সময় দুজনেই নাকি জাহাজে ছিলেন। জাহাজের নাম ছিল স্যামপোল ইউরোপা। জাহাজের নাবিকরা ঠিক করেছিলেন ছেলে হলে নাম হবে স্যাম ও মেয়ে হলে নাম থাকবে ইউরোপা। জন্ম হয় ইউরোপার। অর্থাৎ জন্ম থেকেই ইউরোপা সবার থেকে আলাদা। শৈশবটা আর পাঁচটা মেয়ের মতোই ছিল ইউরোপার। শিক্ষিত পরিবারের মেয়ে। ছোটোবেলা থেকে নামকরা বেসরকারি স্কুলে পড়াশুনো করেছে। কিন্তু, প্রথমে নিজের শরীর নিয়ে একেবারে আত্মবিশ্বাসী ছিল না। সেকারণে ১২ বছর বয়সে জিমে যোগ দেয়। এরপর কয়েকমাসের মধ্যে শরীরের গঠনে রূপান্তর আসতে শুরু করে। ধীরে ধীরে বডি বিল্ডিংয়ের প্রতি একটা ভালোবাসা জন্মায়। এরপর ট্রেনারের সঙ্গে জিম করতে করতেই পেশাদার বডি বিল্ডিংয়ে চলে আসে ইউরোপা। চলতি বছর জাতীয় বডি বিল্ডিং প্রতিযোগিতায় তৃতীয় স্থান অধিকার করেছে ইউরোপা। পাশাপাশি এশিয়া বডি বিল্ডিং চ্যাম্পিয়নশিপে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছে। প্রশ্ন : তোমার লক্ষ্য কী? ইউরোপা : আমার লক্ষ্য আন্তর্জাতিক মহিলা বডি বিল্ডিং (পেশাদার) জয়লাভ করা। পাশাপাশি মিস ফিজ়িক অলিম্পিয়া এবং মিস রাইজ়িং ফিনিক্স খেতাব জয় করা। অর্থাৎ মহিলাদের বডি বিল্ডিংয়ে আন্তর্জাতিক মানের সব খেতাবই আমি জিততে চাই। প্রশ্ন : বাঙালি মহিলারা তো সেভাবে বডি বিল্ডিংয়ে আসে না। তা তুমি হঠাৎ করে এটা বেছে নিলে কেন? ইউরোপা : আমি ছোটোবেলায় অনেকটা মোটা ছিলাম। মা বলতেন রোগা হতে। তাই জিমে যাওয়া। যেখানে আমি খুব রোগা হয়ে যাই। তারপর বডি বিল্ডিং শুরু করি। এখন এটাই নেশা। প্রশ্ন : আচ্ছা, বডি বিল্ডিং এত ভালো লাগে কেন? ইউরোপা : আমি চাই লোকে আমাকে দেখুক। আমি শরীর তৈরি করেছি লোককে দেখানোর জন্য। শুরুর দিকে বিকিনি পরার ভয়ে কিছুটা অস্বস্তি ছিল। সেকারণে আমার মধ্যে আত্মবিশ্বাসেরও অভাব দেখা গিয়েছিল। পরে বুঝলাম সবটাই তো আমার শরীর দেখানোর জন্য। কে খারাপ ভাবল, তা নিয়ে এখন আর আমি চিন্তা করি না। প্রশ্ন : মহিলাদের কি বার্তা দিতে চাও? ইউরোপা : নিজের চামড়া নিয়ে আত্মবিশ্বাসী হও। ইন্ডাস্ট্রিতে সুন্দর মহিলাদের একটা নিজস্ব সংজ্ঞা রয়েছে। সৌন্দর্য মানে তো শুধুমাত্র শরীরের আকৃতি কিংবা বিভঙ্গ নয়। সৌন্দর্য দেখানোর আলাদা রাস্তাও রয়েছে। প্রশ্ন : ভবিষ্যৎ নিয়ে কী চিন্তা করছ ? ইউরোপা : আমি ২০১৭ সালে স্কুলের গণ্ডি অতিক্রম করেছি। এখন কিছু করছি না। আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই মাদ্রিদ চলে যাচ্ছি। মূলত বডি বিল্ডিংয়ের জন্যই ওখানে যাওয়া। ওখানেই পড়াশুনা করব। এখানে আমার জিম ছেড়ে, আমার পরিবার ছেড়ে যেতে কষ্ট হবে। কিন্তু, ভবিষ্যতের কথা ভেবে এটা আমাকে করতেই হবে। প্রশ্ন : জীবনের সেরা মনে রাখার মত কোনও ঘটনা ? ইউরোপা : আনিনা পোপ একজন বিশ্ব বিখ্যাত মহিলা বডি বিল্ডার। উনি আমায় ইনস্টাগ্রামে ফলো করেন। আমি এশিয়া রানার আপ হয়ে আসার পর উনি আমায় নিজে মেসেজ করে উৎসাহ দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, ১৮ বছর বয়সেই আমার পেশির ঘনত্ব ওর থেকে অনেকটাই বেশি। প্রশ্ন : শেষ প্রশ্ন। তোমার কী মনে হয়, মহিলারা আসতে চায় না কেন এই পেশায় ? ইউরোপা : বেশিরভাগ মেয়েরা শরীর দেখাতে ভয় পায়। বিকিনি পরতে ভয় পায়। এটা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আমি সবসময় প্রত্যেককে মোটিভেট করি। আমাকে সবাই দেখবে এটাই তো আমি চাই। তা সে ভালো চোখে হোক কিংবা খারাপ চোখে। আর/১৭:১৪/২৭ নভেম্বর



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2ABdUmY
November 27, 2017 at 11:36PM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top