মধ্যপ্রাচ্যে যৌন নির্যাতনের শিকার হন অধিকাংশ নারী কর্মী

কুমিল্লার বার্তা ডেস্ক ● বিদেশে নারী শ্রমিকের চাহিদা বাড়তে থাকায় পাঁচ বছরের ব্যবধানে প্রবাসী নারী কর্মীর সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। স্বল্প সময়ের প্রশিক্ষণ নিয়েই তারা স্বপ্ন পূরণে পাড়ি জমাচ্ছেন বিভিন্ন দেশে। সরকারি হিসেব মতে, এ পর্যন্ত প্রবাসী বাংলাদেশি নারী কর্মীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ৬ লাখ ৬২ হাজার। তবে নানা হয়রানি আর নির্যাতনের কারণে নির্ধারিত সময়ের আগেই ফিরে আসতে বাধ্য হন এসব নারী কর্মীর অনেকেই।

প্রবাসে যে সংখ্যক নারী কর্মী রয়েছে তার বেশিরভাগ রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে। এরমধ্যে এক লাখ আশি হাজার সৌদি আরবে, আরব আমিরাত ও জর্ডানে এক লাখ ২৫ হাজার, লেবাননে এক লাখ তিন হাজার এবং ওমানে আছেন প্রায় ৬২ হাজার কর্মী। সৌদি আরব, লেবাননসহ বিভিন্ন দেশে নারী শ্রমিকের চাহিদা বাড়লেও, বিদেশে গিয়ে নানা হয়রানির পাশাপাশি শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন অধিকাংশ নারী কর্মী। চুক্তি অনুসারে কর্মীদের দেয়া হচ্ছে না নির্ধারিত বেতন, সাপ্তাহিক ছুটি এবং চিকিৎসাসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা।

বিশেষজ্ঞদের মতে, নিয়োগ কর্তাকে চুক্তির শর্ত মানতে বাধ্য করাসহ, দায়ী ব্যবসায়ী ও দালালদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া না গেলে নির্যাতন বন্ধ হবেনা। লেবাননে নির্যাতনের শিকার গৃহকর্মী ফাতেমা বেগম বলেন, ‘আমার মনে হয়েছিল আর কোনোদিন বাংলাদেশের মাটিতে ফিরতে পারবো না।’ দিনের পর দিন শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, চুরির মিথ্যা অভিযোগ আর যৌন হয়রানির প্রতিবাদ করায় তিনতলা থেকে ফেলে দেয়া হয় তাকে।

কোনভাবে প্রাণে বেঁচে গেলেও, ভাঙ্গা হাত-পা ও মেরুদন্ডের চিকিৎসায় এখন মাসের পর মাস কাটছে বিছানায় শুয়ে। প্রায় এক দশক ধরে বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিদেশ ফেরত কর্মীদের তথ্য সংগ্রহ করছে বেসরকারি সংস্থা ওকাপ এর কর্মীরা। তাদের মতে, বিদেশে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়ে অন্ত:স্বত্তা হয়ে পড়ায় লজ্জা আর অপমানে পরিবার ও সমাজ থেকেও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন অনেক নারী কর্মী।

ওকাপের একজন মাঠকর্মী বলেন, এসব বিদেশ ফেরত নারীদের অনেক সময় তাদের স্বামীরা মেনে নেন। কারণ তাদের স্বামীরা তো জানেন অভাবের তাড়নায় তাদের স্ত্রীদের বিদেশ পাঠিয়েছিলেন তারা। ওকাপের আরো একজন মাঠকর্মী বলেন, ‘আমার দেখা মতে অনেকেই গর্ভবতী হয়ে দেশে ফিরেছেন। সমাজেও তাদেরকে হীন দৃষ্টিতে দেখা হয়। আমরা এমআর এর মাধ্যমে তাদের এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি দিয়েছি।’

ওকাপ এর তথ্যমতে, যৌন নির্যাতনের শিকার নারী কর্মীদের ৩০ শতাংশই অন্ত:সত্ত্বা হয়ে দেশে ফেরেন।

চিকিৎসকের পরামর্শে এদের মধ্যে ৮০ শতাংশ গর্ভপাতের সুযোগ পেলেও বাকীরা অনাকাঙ্ক্ষিত সন্তান প্রসবে বাধ্য হন। বেসরকারি একটি গবেষণা মতে , নারী কর্মীদের ওপর শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতন, নির্ধারিত বেতন না দেয়া, দিনে ১৬ থেকে ১৮ ঘণ্টা কাজে বাধ্য করা, অসুস্থ হয়ে পড়াসহ নানা কারণে তারা ফিরে আসতে বাধ্য হন। তবে, সরকারি পর্যায়ে এ বিষয়ে সঠিক কোন তথ্য নেই। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, প্রবাসী কর্মীদের ফিরে আসার প্রকৃত কারণ খতিয়ে দেখে নারী শ্রমিকের সুরক্ষায় ব্যবস্থা নেয়া দরকার।

বামরুর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারপারসন ড. তাসনীম সিদ্দিকী বলেন, ‘প্রবাসে নারীরা ঘরের ভিতরে কাজ করেন বিধায় সেখানে নিগ্রহের বিষয়টি তদারকি কষ্টসাধ্য। দ্বিপক্ষীয় যে চুক্তি রয়েছে তার মাধ্যমেই সেখানকার আইনের মাধ্যমেই কিন্তু এ সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।’ বায়রার যুগ্ম মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমান বলেন, ‘আমাদের উচিত কঠিন পদক্ষেপগুলো নেয়া। এগুলো যদি করতে পারি তাহলে নির্যাতনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি আর ঘটবে না।’

এদিকে, প্রবাসে নির্যাতনের শিকার নারী কর্মীদের আইনি সহায়তার ক্ষেত্রে অনেক বাধার কথা বিভিন্ন সময় জানিয়েছেন প্রবাসী কল্যাণ সচিব ড. নমিতা হালদার। তবে এমন পাশবিক নির্যাতন থেকে নারী কর্মীদের বাঁচাতে অভিযুক্ত দেশে কর্মী পাঠানো নিষিদ্ধ হতে পারে বলেও জানান প্রবাসী কল্যাণ সচিব।

The post মধ্যপ্রাচ্যে যৌন নির্যাতনের শিকার হন অধিকাংশ নারী কর্মী appeared first on Comillar Barta | দেশ সেরা আঞ্চলিক অনলাইন পত্রিকা.



from Comillar Barta | দেশ সেরা আঞ্চলিক অনলাইন পত্রিকা http://ift.tt/2y21foo

November 04, 2017 at 08:56PM
04 Nov 2017

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

:) :)) ;(( :-) =)) ;( ;-( :d :-d @-) :p :o :>) (o) [-( :-? (p) :-s (m) 8-) :-t :-b b-( :-# =p~ $-) (b) (f) x-) (k) (h) (c) cheer
Click to see the code!
To insert emoticon you must added at least one space before the code.

 
Top