মোঃ আবুল কাশেম, বিশ্বনাথ প্রতিনিধি :: কেন্দ্রীয় বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিলেট-২ আসনের সাবেক এমপি ইলিয়াস আলী নিখোঁজের ৬৭মাস পূর্ণ হচ্ছে আজ শুক্রবার। ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল রাতে ঢাকার বনানী থেকে ব্যক্তিগত গাড়ীচালক আনসার আলীসহ রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হন ইলিয়াস আলী। এরপর দেশব্যাপী গড়ে উঠে কঠোর আন্দোলন। ইলিয়াসের ভালবাসায় প্রাণ দেন বিশ্বনাথের তিন বিএনপির কর্মী। ফিরে পাওয়ার আন্দোলন করতে গিয়ে হামলা-মামলা শিকার হন হাজার হাজার বিএনপি-জামায়াত কর্মী ও সাধারণ মানুষ। মামলায় কারাবরণ করেন বিএনপি নেতাকর্মীসহ শত শত সাধারণ মানুষ। তবুও আন্দোলন থেকে পিছু হঠেনি ইলিয়াস প্রেমিরা। ২০১২ সালের ২৩ এপ্রিল রণক্ষেত্রে পরিণত হয় বিশ্বনাথ উপজেলা সদর। সারা দেশে আতঙ্কের জনপদ হিসেবে পরিচিতি পায় এই উপজেলা। সেদিন ইলিয়াস আলীর সন্ধান দাবিতে আন্দোলন করতে গিয়ে ত্রি-মুখী সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারান জাকির, মনোয়ার ও সেলিম নামের তিন ইলিয়াস সমর্থক। কিন্তু একে একে নিখোঁজের ৬৭মাস পূর্ণ হলেও আজ পর্যন্ত তার কোনো সন্ধান দিতে পারেনি দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এপরও নিখোঁজ বিএনপি নেতা ইলিয়াসের জন্য অন্তহীন অপেক্ষা চলছে বিশ্বনাথবাসীর। সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান মারা যাওয়ার পর ইলিয়াস আলী হয়ে উঠেন সিলেট বিএনপির একমাত্র কান্ডারী। শুধু সিলেট নয়, গোটা বিভাগের একজন অবিভাবক হিসেবে তিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন। এ অবস্থায় পরিবার থেকে শুরু করে সকল শ্রেণীর পেশার মানুষের মাঝে অসস্তোষ বিরাজ করছে। আজও জানা যায়নি তিনি কোথায়? তদুপরী তাঁর নির্বাচনী এলাকা বিশ্বনাথ, বালাগঞ্জ ও ওসমানীনগর বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ এখনো বিশ্বাস করেন ইলিয়াস আলী জীবিত ও সুস্থ অবস্থায় আবার জনতার মাঝে ফিরে আসবেন। ইলিয়াসকে ফিরে পেতে আন্দোলনের নানা কর্মসূচীর ধারাবাহিকভাবে চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। বেশ কয়েক মাস ধরে ইলিয়াস আলীর সন্ধান দাবিতে মাঠ ছাড়া হয়ে পড়ে বিশ্বনাথ বিএনপি। তবে ইলিয়াসের সন্ধান কামনায় প্রতি মাসের ১৭ তারিখ স্থানীয় বিএনপি আলোচনা সভা ও দোয়ামাহিফল অনুষ্ঠান পালন করে আসছে। দীর্ঘদিন পর ইলিয়াসের সন্ধান দাবিতে ফের মাঠে নামছে বিশ্বনাথ বিএনপি। আজ শুক্রবার বিশ্বনাথ উপজেলা বিএনপির দুটি গ্রুপ ইলিয়াস আলীর সন্ধান দাবিতে উপজেলা সদরের পৃথকভাবে মিছিলের ঘোষনা দিয়েছে। ইতিমধ্যে উভয় গ্রুপ মিছিল সফলের লক্ষে প্রস্তুতি সভা করে। মিছিলে কয়েক হাজার নেতাকর্মী অংশগ্রহন করবেন বলে উভয় গ্রুপের নেতারা জানিয়েছেন। বিশ্বনাথে বর্তমানে দুটি গ্রুপে বিভক্ত রয়েছে বিএনপি। সিলেট জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ও বিশ্বনাথ উপজেলা চেয়ারম্যান সুহেল আহমদ চৌধুরী, উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি তাহিদ মিয়া চেয়ারম্যান, মনির হোসেন, যুগ্ম-সম্পাদক আবদুল হাইসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ মিলে একটি বলয় ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি জালাল উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক লিলু মিয়া, জেলা বিএনপির সদস্য ও উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ নূর উদ্দিনসহ অন্যান্যা নেতৃবৃন্দ মিলে অপর বলয় রয়েছে। ইতি মধ্যে উভয় গ্রুপ পৃথকভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে। আজ শুক্রবার নিখোঁজ বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর সন্ধান দাবিতে উভয় গ্রুপ মিছিল বের করতে অনড় রয়েছে।
এদিকে,গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ও ইউনিয়ন নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থীরা ইলিয়াস নিখোঁজ ইস্যুকে কাজে লাগিয়ে জয়লাভ করেন। এছাড়াও ইলিয়াসপত্নী তাহসিনা রুশদীর লুনাও দলীয় প্রার্থীদের বিজয় নিশ্চিত করতে মাঠ চষে বেড়ান। ফলে বিশ্বনাথ,বালাগঞ্জ ও ওসমানীনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান-ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিএনপি প্রার্থীরা নির্বাচিত হন। এতে বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিতি পায় বিশ্বনাথ-বালাগঞ্জ ও ওসমানীনগর উপজেলা। ইলিয়াস আলীর অনুপস্থিতিতেও এ বিজয়ের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে চান বিএনপি কর্মীরা। কিন্তু ইলিয়াস নিখোঁজের পর স্থানীয় বিশ্বনাথ বিএনপিতে দেখা দেয় দ্বিধা বিভক্তি। এই দ্বন্ধেদ্বর জের ধরে একাধিকবার হামলা, সংঘর্ষ ও মামলার ঘটনা ঘটেছে। ফলে সাংগঠনিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠন। এ সুযোগে রাজপথের দখল নেয় ক্ষমতাসীনদল আওয়ামী লীগ। স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীরা মনে করেন ইলিয়াস নিখোঁজের পর যোগ্য নেতৃত্বের অভাবে বিএনপিতে প্রকাশ্যে কোন্দল সৃষ্টি হয়েছে।
অপরদিকে, চলমান সরকারবিরোধী আন্দোলনের প্রথমে উপজেলা বিএনপি মনোবল বেশ চাঙা থাকলেও বর্তমানে দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে কিছুটা হলেও হতাশা বিরাজ করছে। বিশেষ করে তৃণমূল নেতাকর্মীরা শীর্ষস্থানীয় নেতাদের অনৈক্য, বিভেদ দেখে ক্ষুব্দ। তৃণমূল নেতাকর্মীরা মনে করছেন, শীর্ষ নেতাদের অনৈক্যের কারণেই বিশ্বনাথ বিএনপি আন্দোলনের শুরুর ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারেনি। চলমান আন্দোলনে তাদের তেমন কোনো তৎপরতা উপজেলায় দেখা যায়নি। গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা বিজয়ী হলে নেতারা ফুরফুরে মেজাজে ছিলেন। কিন্তু বর্তমানে তাদের মধ্যে অনৈক্য দেখা দিয়েছে। ইলিয়াস আলী নিখোঁজ হওয়ার আগ পর্যন্ত বিশ্বনাথ বিএনপিতে ছিল না কোনো দ্বন্দ, ক্ষোভ, ছিলনা কোনো বিভেদ। দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা তখন ঐক্যবদ্ধভাবে সকল কর্মসূচী পালন করতেন। কিন্তু ইলিয়াস আলী নিখোঁজ হওয়ার পর বিশ্বনাথে বিএনপিতে অনৈক্য দেখা দেয়।
বিশ্বনাথ উপজেলা বিএনপির সভাপতি জালাল উদ্দিন বলেন, সিলেটের কোটি মানুষের নেতা ইলিয়াস আলী। দীর্ঘদিন ধরে নিখোঁজ রয়েছেন তিনি। কিন্তু আজও সরকার তার সন্ধান দিতে পারেনি। তাই আমাদের প্রিয় নেতার সন্ধান দাবিতে আমরা আজ শুক্রবার বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করেছি।
দলের কোনো গ্রপিং নেই দাবি করে তিনি বলেন, বিএনপি একটি বিশাল বড় দল হওয়ায় নেতাকর্মীর মধ্যে কিছুটা মতপ্রার্থক্য থাকতে পারে।
জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ও বিশ্বনাথ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সুহেল আহমদ চৌধুরী বলেন, আমাদের নেতা ইলিয়াস আলীকে ফিরে পাওয়ার আন্দোলন ফের অব্যাহত রাখার জন্য মিছিলের আয়োজন করা হয়েছে। দলের তৃণমূল নেতাকর্মীর মতামতের ভিত্তিত্বে আজ শুক্রবার কোটি মানুষের নেতা ইলিয়াস আলীর সন্ধান দাবিতে মিছিল অনুষ্ঠিত হবে। এতে কয়েক হাজার নেতাকর্মীর সমাগম ঘটবে বলে তিনি জানান।
from সিলেট – দ্যা গ্লোবাল নিউজ ২৪ http://ift.tt/2mxU6dU
November 17, 2017 at 02:38PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন