কলকাতা, ১৩ ডিসেম্বর-লটারির টিকিট বুকে সেঁটে সারারাত স্বপ্ন দেখেন ভানু। স্বপ্নে লটারির টিকিট জিতেই কত কাণ্ড! চাকদহের শানু ভানু পেল লটারি সিনেমাটা দেখেননি। কিন্তু সোমবার সারারাত দুচোখের পাতা এক করতে পারেননি বছর একুশের ওই যুবক। কারণ সেই লটারি! পুরস্কারের অঙ্ক ২৬ লক্ষ টাকা! সরকারি কর বাদছাদ দিয়ে হাতে যা পাওয়া যাবে সেটাও কম নয়। তবে টাকা হাতে না পেতেই তামাম এলাকায় ভিআইপি হয়ে গিয়েছেন শানু দাস। বাজারে যাওয়ার পথে বিমাকর্মীর অনুরোধ, তরুণবাবু, আমার কাছে কিন্তু একটা পলিসি করতেই হবে। অনুরোধে নয়, বহু বছর পরে অন্যের মুখে নিজের ভাল নাম শুনে রীতিমতো ভ্যাবাচাকা খেয়েছেন শানু। মাছের বাজারে গিয়ে শুনতে হয়েছে, বড় মাছ তো কী হয়েছে! নিয়ে যান। টাকা না হয় আমি বাড়ি থেকে নিয়ে আসব। এখন তো আপনি মশাই লাখপতি! ইয়ারদোস্তরা গোঁ ধরেছে, শুধু চা-মিষ্টিতে কিন্তু আমরা ভুলছি না ভাই। বেশ বড় করে একটা পিকনিক করতে হবে। শানুর কিন্তু সব কথা মাথায় ঢুকছে না। হঠাৎ করে কী যে হয়ে গেল! এখনও তিনি ধাতস্থ হতে পারছেন না। সেই কবে একজন বলেছিলেন, শানু, মাঝেমধ্যে লটারির টিকিট কিনবি। তোর প্রাপ্তিযোগ আছে। কথাটা শানুর যে বিশ্বাস হয়েছিল, এমন নয়। ফেলতেও পারেননি। মাঝেমধ্যে টিকিট তিনি কাটতেন। কিন্তু নম্বর মেলানোর পরে ফক্কা। সোমবার সকালে বগুলায় কাজে যাচ্ছিলেন পেশায় কাঠমিস্ত্রির জোগাড়ে শানু। পালপাড়া স্টেশনে ট্রেন ধরবেন বলে অন্য সহকর্মীদের সঙ্গে দাঁড়িয়েছিলেন। ট্রেন আসতে দেরি হচ্ছে দেখে তিনি ঢুঁ মারেন স্টেশনের পাশের একটি লটারির কাউন্টারে। তিরিশ টাকা দিয়ে একটি টিকিটও কিনে ফেলেন। সেই টিকিট মেলানোর পরে শানুর নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। এ তো হুবহু এক নম্বর। টিকিট বিক্রেতা হাসতে হাসতে বলেন, কী ভায়া, কেমন লাগছে এখন? চাকদহের ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাজিপাড়ায় ছোট্ট একটা টিনের ঘর। সেখানেই থাকেন শানু, তাঁর বছর পাঁচেকের ছোট বোন আর বাবা-মা। বাবা তপন দাস রাজমিস্ত্রির জোগাড়ে। অভাবের সংসারে হাল ধরতে গিয়ে নবম শ্রেণির পরে শানুকে লেখাপড়ায় ইতি টানতে হয়। বাপ-ব্যাটা কাজ করে মাসে সাত থেকে সাড়ে সাত হাজার টাকা আয় হয়। তা দিয়েই টেনেটুনে চলে অভাবের সংসার। সেই সংসারে হঠাৎ করে এই প্রাপ্তিযোগই অস্থির করে তুলেছে শানুকে। তিনি বলছেন, কেমন যেন ভয় করছে, জানেন! রাতে ঘুমোতে পারছি না। শানুর পড়শি, প্রাক্তন ব্যাঙ্ককর্মী অশোক সরকার বলছেন, শানু তো আমাদের বাড়িতেই বড় হয়েছে। লটারিতে টাকা বাধার পরে শানু আমার কাছে এসেছিল। ওকে বলেছি, টাকাটা নষ্ট না করে ভাল কাজে ব্যয় করতে। সিনেমার ভানু স্বপ্নেই টের পেয়েছিলেন লটারির বিড়ম্বনা। সকালে সেই লটারি পাওয়ার স্বপ্ন সত্যি হয়েছিল। ভানু জানিয়েছিলেন, টাকা সবার মধ্য ভাগ করে দিতে। সবাই পেলে তিনিও পাবেন। বাস্তবের শানু বলছেন, বাবা-মাকে আর কাজ করতে দেব না। বোনকে খুব ভাল করে লেখাপড়া শেখাব। ওরা ভাল থাকলে আমিও ভাল থাকব। এমএ/০২:৫০/১৩ ডিসেম্বর
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2BZJcR2
December 13, 2017 at 09:00PM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন