ঢাকা, ৩০ ডিসেম্বর- মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলে, নাখালপাড়া বাস। শিল্প- সংস্কৃতির উপর হঠাৎ মন মজলো। পৃথিবীর কাছে নিজেকে উপস্থাপন করার একটি চেষ্টা। তার জন্য স্থান বেছে নিলেন শাহবাগ। আমার প্রথম ইচ্ছে ছিল কবি হব। গোপনে অনেক কবিতাও লিখেছি। লজ্জায় কোথাও দিতে পারিনি। পরে কিছু কবিতা ছেপেছিলামও। কবিতার সঙ্গে নির্মাণের কীভাবে সম্পর্ক হলো? শাহবাগে গিয়ে আমার অনেক বন্ধুবান্ধব হলো। তার মধ্যে নুরুল আলম আতিক ছিল। ও আমাকে নিয়ে যেত ধানমন্ডি দুই নাম্বার রোডে ইন্ডিয়ান হাইকমিশনের কালচারাল সেন্টারে। ওখানে গিয়ে নিয়মিত সিনেমা দেখতাম। ভাবতাম বাহ! ভালোই তো লাগে। দেখতে দেখতে একটা সময় মনে হলো আরে এটা তো আমিও পারবো। প্রতিদিন সিনেমা দেখে রিকসা করে আমরা শাহাবাগ এলাকায় আসতাম। প্রতিদিন চাপাবাজি করে আতিককে একটা গল্প শোনাতাম। প্রতিদিন একটা করে গল্প উৎপাদন করতাম। সেটা করতে করতেই সিনেমার প্রতি একটা ঝোক আসলো। আমাদের সময় ব্যাপারটা ছিল সিনেমা বানাবা, এটা অসম্ভব একটা কাজ। এগুলো যারা বানায় তারা অন্য গ্রহের লোক। সিনেমা বানানো এত সহজ না। আমাদের মাথার উপরে এমন একটা নেগেটিভ পৃথিবী ছিল। ওই সময় কবি বেলাল চৌধুরির সঙ্গে খুব আড্ডা দিতাম। আমার জীবনে আজকের অবস্থানে আসার পেছনে উনি খুব বড় একটি ভুমিকা রেখেছেন। আমাকে নানাভাবে সমৃদ্ধ করেছেন। ওনার জীবনের নানা অভিজ্ঞতা শেয়ার করতেন আমার সঙ্গে। ওনার সঙ্গে ঘুরতাম। বিভিন্ন জনের সঙ্গে দেখা হলে বলতেন ও হচ্ছে ফারুকী, অসম্ভব মেধাবী ছেলে। আমি তো লজ্জায় কুকরে যেতাম। তখন ভাবতাম আমি যে মেধাবী এইটা তো আমার প্রমান করে দেখাতে হবে। আমাকে ভালো কিছু করে দেখাতে হবে। আরও পড়ুন: সুখবর দিলেন দীঘি আমি তো জানিনা কীভাবে ভালো কিছু করা সম্ভব! তখন আমি একটা স্ক্রিপ্ট লিখলাম ওয়েটিং রুম নামে। সেটা আমি পড়ে শুনালাম বেলাল ভাইকে। ওনার ইন্ডিয়ান হাই কমিশনের অফিসে। বেলাল ভাই খুব ধ্যান করে শুনতেন আর বলতেন অসাধারণ। এক একটা দৃশ্য শুনাই আর উনি বলেন অসাধারন। আর এই যে গল্প শোনাতাম তার উপঢৌকন হিসেবে ধানমন্ডিতে ঘরোয়া একটা রেস্টুরেন্টে খাওয়াতেন। খাওয়া শেষে আমার পকেটে ৫০০/ ১০০০ টাকা দিয়ে দিতেন। উনি বুঝতেন আমি খুবই অভাবী। এরকম বহু টাকা এ জীবনে উনি আমাকে দিয়েছেন। এভাবে ধার- দেনা করে নির্মাণ করলাম ওয়েটিং রুম। ওই সময় অনেকেই আমাকে সাহায্য করেছিলেন। প্রয়াত খালেদ খান ওইটার অভিনেতা ছিলেন। অনেক সাহায্যও করেছেন। ইটিভিতে জমা দেয়ার পর নাটকটি রিজেক্টে হয়ে গেল। আমি তো ভেঙ্গে পড়লাম। ভাবলাম এ জীবন আমার নয়। নাটক- সিনেমা আমাকে দিয়ে হবে না। আমি আবার আগের জীবনে ফিরে গেলাম। শাহবাগে গিয়ে আড্ডাবাজি এই ওই করা শুরু করলাম। মাস তিনেক পরে ইটিভি থেকে ফোন। আমাকে দেখা করতে বলছে। গিয়ে আবিস্কার করলাম যে কাজটা তারা রিজেক্ট করেছে, সেটা তাঁরা কিনতে চায়। পরে আরো জানলাম ইটিভির ম্যানেজমেন্ট ফরহাদ মাহামুদের নেতৃত্বে একটা সিদ্ধান্ত নিলেন তাদের প্রিভিউ কমিটি কেমন পারফর্ম করছে তা দেখার জন্য। প্রিভিউ কমিটির রিজেক্ট নাটকগুলো আবার দেখেছেন। সেখান থেকে তাদের মনে হয়েছে এই নাটকটি কেনা যায়। শুধু কিনলেনই না, ফরহাদ মাহামুদ এক পর্যায়ে লাইসেন্সই দিয়ে দিলেন আপনার যখন যা ইচ্ছে এখানে বসে করেন। শাহাবাগে বসে ওসব করা বাদ দেন। তিনদিন পরে গিয়ে বললাম, কাজ তো করবো। ওনারা তো স্ক্রিপ্ট জমা দিতে বলে। আমি তো স্ক্রিপ্ট লিখতে পারি না ঠিকমতো। উনি বললেন আরে আপনি যেকোন কিছু একটা লিখে দিয়ে দিন। উপরে নামটা ঠিক রেখে দিয়েন। আমি মনে করি ফরহাদ মাহামুদ ও একুশে টিভি যদি আমাকে বিস্তর ভুল করার সুযোগ না দিতেন এ জীবনে। তাহলে কিছু শিখতে পারতাম না। এভাবেই আসলে পরবর্তীতে আমার এগিয়ে যাওয়া। সূত্র: গোনিউজ২৪ এফ/১৭:৩৫/৩০ ডিসেম্বর
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2EjQstd
December 30, 2017 at 11:43PM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন