অপহরণের মিথ্যা ঘটনা সাজানোর অভিযোগে কবি ও প্রাবন্ধিক ফরহাদ মজহার ও তার স্ত্রী ফরিদা আক্তারের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশন মামলা করেছে পুলিশ। এতে তাদের শাস্তি ও গ্রেপ্তারের আবেদন জানানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার আদালতে এই আবেদন করা হয় বলে ঢাকাটাইমসকে নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের অপরাধ ও তথ্য বিভাগের উপকমিশনার আনিসুর রহমান। তিনি জানান, ফরহাদ মজহার ও তার স্ত্রীকে গ্রেপ্তারের আবেদন জানানো হয়েছে।
দণ্ডবিধির যে ধারায় ফরহাদ মজহার ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে প্রসিকিউশন দেয়া হয়েছে সেটি প্রমাণ হলে তাদের দুই বছরের কারাদণ্ড অথবা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ড হতে পারে।
গত ৭ ডিসেম্বর বিকালে ঢাকার মহানগর হাকিম খুরশীদ আলম ফরহাদ মজহার ও তাঁর স্ত্রী ফরিদা আখতারের বিরুদ্ধে ২১১ ও ১০৯ ধারায় প্রসিকিউশন দেওয়ার আদেশ দেন। এর আগে গত ১৪ নভেম্বর ফরহাদ মজহার অপহরণ মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়ে ভুক্তভোগী ফরহাদ মজহার ও মামলার বাদী তাঁর স্ত্রী ফরিদা আখতারের বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য দিয়ে মামলা করার অভিযোগ আনে পুলিশ।
সাত তিন পর আদালতের এই আদেশ ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কাছে পৌঁছে। এর দুই সপ্তাহ পর করা হলো মামলা।
গত ৩ জুলাই ভোরে শ্যামলীর বাসা থেকে বের হওয়ার পর ফরহাদ মজহারকে পাওয়া যাচ্ছিল না। এর মধ্যে তাঁর অপহৃত হওয়ার গুঞ্জন আসে। আর একই দিন শেষে রাতে খুলনা থেকে ঢাকায় ফেরার পথে একটি বাস থেকে উদ্ধার করা হয় ফরহাদ মজহারকে।
উদ্ধারের পর ৪ জুলাই ফরহাদ মজহারকে ঢাকায় আনার পর আদালতে নেয়া হলে তিনি ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। পরে তাকে চিকিৎসার জন্য বারডেম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এ ঘটনায় ফরহাদ মজহারের স্ত্রী ফরিদা আখতা আদাবর থানায় একটি অপহরণের মামলা করেন। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পশ্চিম বিভাগ।
পুলিশের তদন্তে ঘটনা অন্য মোড় নেয়। যেদিন ফরহাদ মজহার অপহৃত হয়েছিলেন বলে দাবি করা হয়েছিল, একই দিন তিনি খুলনা নিউমার্কেটে স্বাধীনভাবে ঘুরে বেরিয়েছেন। এই ভিডিওর পাশাপাশি একটি দোকানে গিয়ে টাকা গুণে গুণে তিনি মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকাও পাঠান।
পরে ১৩ জুলাই সংবাদ সম্মেলন ডেকে পুলিশ প্রধান এ কে এম শহীদুল হক বলেন, ফরহাদ মজারের অপহরণের প্রমাণ মেলেনি। অর্চনা নামে এক নারীর সঙ্গে তার অবৈধ সম্পর্ক ছিল। একবার তিনি গর্ভপাতও করান ওই নারীকে। পরে আবারও ওই নারী গর্ভবতী হন। আর ওই নারীকে টাকা দিতেই ওই ভোরে ফরহাদ বাসা থেকে বের হয়েছিলেন এবং স্ত্রী ফরিদা আখতারের কাছ থেকে টাকা নিতে চেয়েছিলেন তিনি।
ফরহাদ মজহারের অপহরণের ঘটনার মামলায় সাক্ষী হিসেবে আদালতে জবানবন্দিও দেন অর্চনা রানী। তাতে তিনি উল্লেখ করেন, অপহরণের দিন তার সঙ্গে অন্তত ছয়বার মোবাইল ফোনে কথা বলেছেন ফরহাদ মজহার। প্রায় দশ বছর আগে ফরহাদ মজহারের এনজিও উবিনীগে চাকরি করতেন তিনি। চাকরি করার সুবাদে সম্পর্ক গড়ায় পরকীয়ায়।
পুলিশ জানায়, কথিত অপহরণের দিন ফরহাদ মজহার তার স্ত্রীর সঙ্গে ১০ বার এবং অর্চনার সঙ্গে ছয় বার ফোনে কথা বলেন এবং সন্ধ্যায় খুলনার একটি দোকান থেকে তাকে ১৫ হাজার টাকাও পাঠান।
স্ত্রীর সঙ্গে কথোপকথনের এক পর্যায়ে অপহরণের প্রচার বন্ধ করার কথাও বলেন ফরহাদ মজহার। এর সব রেকর্ড পুলিশের কাছে আছে বলে জানিয়েছে বাহিনীটির প্রধান। আর স্ত্রীর সঙ্গে ফরহাদ মজহারের কথোপকথনের একটি ক্লিপ প্রকাশও হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
আইজিপির ওই সংবাদ সম্মেলনের পর ফরহাদ মজহার গত ১৮ জুলাই ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা কার্যালয়ে স্বস্ত্রীক আসেন ফরহাদ মজহার। তবে না তিনি, তা তার স্ত্রী বা অন্য কেউ বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেননি।
প্রসিকিউশ কী
কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে আদালতের অভিযোগপত্র, চুড়ান্ত প্রতিবেদন (ফাইনাল রিপোর্ট) এবং প্রসিকিউশন দেওয়া যায়। যদি প্রমাণ হয়, কেউ মিথ্যা অভিযোগে মামলা করেছেন, তাহলে পুলিশের এই প্রতিবেদনকে প্রসিকিউশন বলে।
ফৌজদারি কার্যবিধির ২১১ ধারায় অভিযোগ প্রমাণিত হলে ওই ব্যক্তির দুই বছরের কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড হতে পারে। আর ১০৯ ধারা সহযোগীর জন্য প্রযোজ্য।
তবে প্রসিকিউশন মানেই সাজার আবেদন নয়। তদন্ত কর্মকর্তা কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে প্রসিকিউশন দিলে তা অন্য মামলার মতই আমলে নিয়ে স্বাক্ষ্যগ্রহণ থেকে শুরু করে বিচার করবে আদালত।
from Sylhet News | সুরমা টাইমস http://ift.tt/2BPICG2
December 29, 2017 at 12:38AM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন