সুরমা টাইমস ডেস্ক:: ‘আমি কাউকে পরোয়া করি না। আইনি লড়াইয়ে নামবো। আমাকে বহিষ্কার করা হলে সেটি হবে অন্যায়।’ গতকাল মানবজমিনকে এ কথা বলেন সিলেটের বিতর্কিত মহিলা কাউন্সিলর শামীমা স্বাধীন। এই মুহূর্তে সিলেটে কাউন্সিলর শামীমা স্বাধীনকে নিয়ে তোলপাড় চলছে। সিলেট সিটি করপোরেশনে ঘটছে নানা ঘটনা। মঙ্গলবার সিলেট সিটি করপোরেশনে কাউন্সিলর শামীমা স্বাধীন প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমানকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন।
এ ঘটনায় প্রায় ৩ ঘণ্টা অবরুদ্ধ ছিলেন তিনি। পরে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী গিয়ে তাকে উদ্ধার করেন। এ ঘটনায় শামীমা স্বাধীনকে বহিষ্কারের সুপারিশের সিদ্ধান্ত নেয়া হয় পরিষদ থেকে। ফলে আন্দোলনে থাকা কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কাজে ফিরেন। ঘটনা এখানে শেষ হয়নি। রাতে প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমানও বেঁকে বসেন। তিনি ঘোষণা দেন- পদত্যাগ করবেন। তার এই ঘোষণায় সন্ধ্যায় তোলপাড় শুরু হয়। সিলেট সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীসহ সিনিয়র কাউন্সিলররা ছুটে যান প্রকৌশলীর বাসায়। তারা গিয়ে নুর আজিজুর রহমানকে শান্ত করেন। গতকাল সকাল হতেই ফের কানাঘুষা শুরু হয় সিটি করপোরেশনে। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ভেতরে ভেতরে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তাদের দাবি হচ্ছে- আগের দিনের ঘোষণা অনুযায়ী শামীমা স্বাধীনকে বহিষ্কারের সুপারিশ মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে হবে। মঙ্গলবারই কাউন্সিলরদের দস্তখত রেখে দেয়া হয়েছিল। বেশির ভাগ কাউন্সিলর পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে দস্তখত দেন। কেউ কেউ দেননি। এই অবস্থায় গতকাল বিকালে সিলেট সিটি করপোরেশন থেকে ঘটনাটি জানিয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে একটি পত্র প্রেরণ করা হয়েছে। সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বিকেলে মানবজমিনকে জানিয়েছেন- ‘মন্ত্রণালয়কে বিষয়টি জানানো হয়েছে। এখন মন্ত্রণালয় যে সিদ্ধান্ত দেবেন সেটি পালন করা হবে।’ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় হচ্ছে সিলেট সিটি করপোরেশনের নিয়ন্ত্রক মন্ত্রণালয়। গতকাল কয়েকজন কাউন্সিলর জানিয়েছেন- সিলেট সিটি করপোরেশন থেকে বহিষ্কারের সুপারিশ গেলে মন্ত্রণালয় চাইলে কোনো কাউন্সিলরকে বহিষ্কার করতে পারবে। সুতরাং এখন বিষয়টি মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ার। তাদের আর কিছুই করার নেই। এদিকে- গতকাল সিলেট সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর শামীমা স্বাধীন মানবজমিনকে জানিয়েছেন- প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তার সঙ্গে রূঢ় আচরণ করেছেন। সকাল থেকে তার রুমেই তাকে বসিয়ে রাখেন। নানা ধরনের গল্প করেন। কিন্তু মাত্র দুই মিনিটে তিনি তার কাজ শেষ করে দিতে পারতেন। শামীমা জানান- প্রায় তিন ঘণ্টা যখন তাকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয় তখন বাইরে থেকে দরোজা ভাঙ্গার চেষ্টা করা হয়। একজন কাউন্সিলর অন্যায় করলে মেয়র তার বিচার করতে পারবেন। কিন্তু তাকে এভাবে হেনস্থা করা উচিত নয়। এ কারণে তিনি রাতেই সিলেটের কোতোয়ালি থানায় মামলা নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু থানার ওসি গৌসুল আলম তার মামলা নেননি। ওসি জানিয়ে দেন- সিলেট সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা, কর্মচারীরাও মামলা করতে এসেছিলেন। তিনি তাদের ফিরিয়ে দিয়েছেন। শামীমা জানান- তাকে বহিষ্কার করা হলে তিনি আইনি লড়াইয়ে নামবেন। একজন নির্বাচিত জনপ্রতিধিকে অন্যায়ভাবে বহিষ্কারের কোনো সুযোগ কারও নেই। আইনি লড়াইয়ের জন্য তিনি প্রস্তুত রয়েছেন। পাশাপাশি তিনি প্রেস কনফারেন্সের মাধ্যমে সিলেটবাসীর কাছে বিষয়টি খোলাসা করবেন। তার আগে তার সঙ্গে সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যে অসদাচরণ করেছেন সেটির মামলা তিনি আদালতে দেবেন। আপাতত শান্ত হয়ে গেছে সিলেট সিটি করপোরেশনের পরিস্থিতি। এই অবস্থায় গতকালও কর্পোরেশনে স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড চলেছে। মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী দিনভর অফিসে কাজ করেছেন। সিলেটে আসছেন অর্থমন্ত্রী। তিনি কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন। এজন্য পুরোদমে চলছে প্রস্তুতি। তবে- বসে নেই শামীমা স্বাধীন। গতকাল তার পক্ষে বিক্ষোভ হয়েছে সিলেটে। শামীমার ওয়ার্ডের ভোটারদের ব্যানারে নগরীতে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করা হয়। এ সমাবেশ থেকে অভিযুক্ত করা হয় প্রধান প্রকৌশলীকে। শামীমা বলেন- তিনি জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এ ঘটনার প্রতিবাদে কর্মসূচি পালন করবেন।
সূত্র:-মানবজমিন
from Sylhet News | সুরমা টাইমস http://ift.tt/2CVHbpK
December 22, 2017 at 11:24PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন