ঢাকা, ১২ ডিসেম্বর- অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন আগেই। পরিসংখ্যান জানান দিচ্ছে, মাশরাফিই বিপিএলের সফলতম অধিনায়ক। তার সামনে আরেক নতুন সাফল্য, মানে একমাত্র অধিনায়ক হিসেবে চার চারবার বিপিএলের শিরোপা বিজয়ের হাতছানি। আর ইতিহাস এও সাক্ষী দিচ্ছে যে, সাকিব আল হাসান এখন পর্যন্ত বিপিএলের সেরা পারফরমার। যাদের পরিসংখ্যান নখোদর্পনে, তারা এক মুহূর্ত দেরি না করে বলে দেবেন; সাকিব আল হাসানই আগের চার আসর মিলে সেরা পারফরমার। সত্যিই তাই। ব্যক্তিগত সাফল্যকে মানদন্ড ধরলে সন্দেহাতীতভাবে এখন পর্যন্ত বিপিএলের সফলতম পারফরমার সাকিব। সাকিব কি করে বিপিএলের সেরা পারফরমার ? তার তো ক্রিস গেইলের মত এক আসরে একজোড়া সেঞ্চুরি নেই। আগের তিনের সাথে এবার এক যোগ করে চার সেঞ্চুরির অনন্য কীর্তি ওয়েস্ট ইন্ডিজের গেইলের। এমনকি বাংলাদেশের শাহরিয়ার নাফীস, মোহাম্মদ আশরাফুল আর সাব্বির রহমান রুম্মনের মত বিপিএলে সেঞ্চুরিয়ানের তালিকায় নাম নেই সাকিবের। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের দেশের টি-টোয়েন্টি আসরে একটি শতরানও নেই। কিন্তু বিপিএলে পারফরমার সাকিবের এমন এক কৃতিত্ব আছে, যা নেই আর কারোই। সাকিবই একমাত্র ক্রিকেটার, যার আছে দুই দুইবার আসর সেরা পারফরমার হবার দূর্লভ কৃতিত্ব। প্রায় নয় বছর তার গায়ে বিশ্বের এক নম্বর অলরাউন্ডারের তকমা আঁটা। ভারতের সাড়া জাগানো আইপিএল, অস্ট্রেলিয়ার বিগ ব্যাশ, নিউজিল্যান্ডের ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি, ইংলিশ কাউন্টির টি-টোয়েন্টি, ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগ, শ্রীলঙ্কার সুপার লিগ ও পাকিস্তানের প্রিমিয়ার লিগ মানে টি-টোয়েন্টির সব ফ্র্যাঞ্চাইজি বিশ্ব আসরে অংশ নেয়া বাংলাদেশের একমাত্র ক্রিকেটার তিনি। আইপিএলে কলকাতা নাইট রাইডার্সকে প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন করার পিছনে তার রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ অবদান। বল ও ব্যাট হাতে সময়ের দাবি মিটিয়ে পারফর্ম করতে পারেন বলেই বিশ্বের সব টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে সাকিবের চাহিদা আকাশছোঁয়া। ক্রিকেটের সবচেয়ে ছোট ফরম্যাটের সেরা পারফরমারদের তালিকায় সাকিবের নাম আছে ওপরের দিকেই। এক কথায় বাংলাদেশের এ বাঁহাতি মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান কাম বাঁহাতি অর্থোডক্স স্পিনার টি-টোয়েন্টি স্পেশালিষ্ট। কিন্তু কিছুটা বিস্ময়কর হলেও সত্য, তার সঙ্গে একদিনের সীমিত ওভারে ক্রিকেটে রান তোলায় যে দুজনার লড়াই তীব্র, সেই সমসাময়িক তামিম আর মুশফিক একবার করে বিপিএলের এক আসরে সর্বাধিক রান সংগ্রহকারি হয়েছেন। মুশফিক ২০১৩ সালে দ্বিতীয় আসরে সিলেট রয়্যালসের হয়ে ৪৪০ রান করে টপ স্কোরার হন। চিটাগাং ভাইকিংসের হয়ে ১৩ খেলায় ৪৭৫ রান করা তামিম ছিলেন গত আসরের সবচেয়ে বেশি রানের মালিক। সাকিব এখন পর্যন্ত তা হতে পারেননি। এমনকি বোলার সাকিবের ঝুলিতে এখন পর্যন্ত এক আসরে সর্বাধিক উইকেটও জমা পড়েনি। তাহলে তাকে কি করে সেরা ও সফলতম পারফরমার বলা? মেলাতে কষ্ট হচ্ছে, তাই না? নাহ, কষ্ট হবার কোনই কারণ নেই। পরিসংখ্যান জানিয়ে দিচ্ছে, রান করা ও উইকেট প্রাপ্তিতে এক আসরে সবার ওপরে না থাকতে পারলেও অলরাউন্ডার সাকিব দুই দুইবার আসর সেরা হয়েছেন। মাশরাফি যেমন বিপিএলের প্রথম তিন আসরের চ্যাম্পিয়ন দলের অধিনায়ক, একই ভাবে পারফরমার সাকিবও বিপিএলের প্রথম দুই আসরের সেরা। ব্যাট ও বল হাতে নজর কাড়া এবং কার্যকর পারফরমেন্স দেখানো সাকিব ২০১২ সালে প্রথম বিপিএলের টুর্নামেন্ট সেরা পারফমার। খুলনা রয়েল বেঙ্গলসের হয়ে ঐ আসরে ব্যাট ও বল হাতে দুর্দান্ত পারফর্ম করেন সাকিব। ২৮০ রান আর ১৫ উইকেট দখল করা সাকিবের দল খুলনা ফাইনালে যেতে না পারলেও সেমির যুদ্ধে সর্বোচ্চ ৮৬ রানের হার না মানা ইনিংস উপহার দেন সাকিব। দ্বিতীয় বারও বিপিএল সেরা সাকিব। ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্সের হয়ে ঐ আসরে সাকিবের ব্যাট ও বল সমান ভাবে জ্বলে ওঠে। ১৬৪.৫০ স্ট্রাইকরেটে ৩২৯ রান ও ১৫ উইকেট দখল করে আসর সেরা পারফরমার পুরষ্কার হিসেবে আবারো গাড়ী জিতে নেন সাকিব। কিন্তু তৃতীয় আসরে গিয়ে আর সাফল্যের সে ধারা অব্যাহত থাকেনি। ২০১৫ সালে বিপিএলের তৃতীয় আসরে ব্যাটসম্যান সাকিব সুবিধা করতে পারেননি একদমই। রংপুর রাইডার্সের হয়ে ১১ ম্যাচে করেন সাকুল্যে ১৩৬ রান। একবারের জন্য পঞ্চাশের ঘরে পৌঁছুতে পারেননি। সর্বোচ্চ ৩৩। কিন্তু বল হাতে পুষিয়ে দেন। ১১ খেলায় ১৮ উইকেট নিয়ে উইকেট শিকারে চার নম্বর হন সাকিব। সেবার সাকিবকে টপকে আসর সেরা হন ইংলিশ ক্রিকেটার আসহার জাইদী। ২০১৬ সালে চতুর্থ আসরেও চেনা সাকিবের দেখা মেলেনি। একটি হাফ সেঞ্চুরিও নেই। সাকুল্যে রান ১৪ খেলায় ১৩ ইনিংসে ২২৬। গড় ২০.৫৪। স্ট্রাইকরেট ১২৬.২৫। সর্বোচ্চ ৪১। বল হাতেও সেরা দশে জায়গা হয়নি সাকিবের । মাশরাফির সমান ১৩ উইকেট নিয়ে যৌথভাবে ১২ নম্বর হন। তবে অলরাউন্ডার সাকিবের পারফরমেন্স উল্লেখযোগ্য না হলেও অধিনায়ক সাকিবই হাসেন শেষ হাসি। তার নেতৃত্বেই ঢাকা ডায়নামাইটস প্রথম চ্যাম্পিয়ন হয়। এবার আবার অলরাউন্ডার-পারফরমার আর অধিনায়ক সাকিবের বৃহস্পতি তুঙ্গে। ব্যাট হাতে চার-ছক্কার ফুলঝুরি ছুটিয়ে রানের নহর বইয়ে দিতে না পারলেও বল হাতে সাকিব বিষ ছড়াচ্ছেন। তার স্পিন ঘূর্ণিতে বেসামাল প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানরা। সিলেটে প্রথম ম্যাচে স্বাগতিক সিলেট সিক্সার্সের সাথে প্রথম দিন উইকেট শুন্য। পরের খেলাতেও মাত্র এক উইকেট। কিন্তু তৃতীয় ম্যাচে রাজশাহী কিংসের সাথে ২২ রানে ২ উইকেট দখলের পর আর পেছন ফিরে তাকাননি সাকিব। নিয়মিত উইকেট পাচ্ছেন। এর মধ্যে ২১ নভেম্বর রংপুর রাইডার্সের সাথে মাত্র ১৬ রানে ৫ উইকেট শিকারি সাকিব। তারপর ২ ডিসেম্বর রাজশাহী কিংসের সাথে আবার ৮ রানে ৪ উইকেট নিয়ে আলোচনায় বোলার সাকিব। ১২ খেলায় ২১ উইকেট দখল করে ঢাকা অধিনায়ক এখন সর্বাধিক উইকেট শিকারী। শুধু তাই নয়। ওভার পিছু রানও দিয়েছেন বেশ কম ( ৬.৩৩)। ব্যাট হাতেও খুব খারাপ করেনি। ১১৯.৩৫ স্ট্রাইকরেটে ১২ খেলায় তার ব্যাট থেকে এসেছে ১৮২ রান। এর মধ্যে রংপুর রাইডার্সের রবিন লিগের শেষ ম্যাচে ৪৭ রানের হার না মানা ইনিংস মনে করিয়ে দিয়েছে চেনা সাকিবকে। মোদ্দা কথা; এভিন লুইস, সুনিল নারিন, শহিদ আফ্রিদি, কাইরন পোলার্ডের নজর কাড়া পারফরমেন্সের পরও এবার পারফর্মার সাকিবের দারুণ অলরাউন্ডিং নৈপুন্যে ফাইনালে ঢাকা ডায়নামাইটস। এবার মানে আজ রাতে সাকিবের সামনে একত্রে দুটি সাফল্যের হাতছানি। প্রথমতঃ পর পর দুইবার ঢাকা ডায়নামাইটসকে শিরোপার স্বাদ পাইয়ে দেয়া। আর দ্বিতীয় হলো, একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে ব্যাট ও বল হাতে দুর্দান্ত পারফরম করে তৃতীয়বারের মত সেরা পারফরমার হওয়া। মঙ্গলবার শেরে বাংলায় এ দূর্লভ জোড়া কৃতিত্বের হাতছানি বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের সামনে। চ্যাম্পিয়ন দলের অধিনায়ক, পাশাপাশি বিপিএল সেরা পারফরমার- অাগের চারবারে এমন যৌথ দূর্লভ কৃতিত্বের অধিকারি হতে পারেননি কেউ। সাকিবের সামনে সেই অধরা কৃতিত্ব অর্জনের পাশাপাশি নতুন ইতিহাস গড়ার হাতছানি। বিপিএলের সেরা পারফরমারের পুরষ্কার জেতার পাশাপাশি এবার অধিনায়ক সাকিব আজ রাতে ট্রফি উঁচিয়ে ধরতে পারবেন ? চ্যাম্পিয়ন সাকিব এবারের বিপিএলে পারফরমার ও অধিনায়কদেরও চ্যাম্পিয়ন হবেন ? উত্তরটা সময়ের হাতেই তোলা থাক! সূত্র: জাগো নিউজ২৪ এফ/১৭:১৪/১২ ডিসেম্বর



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2yh0Q0A
December 12, 2017 at 11:14PM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top