ঢাকা, ২২ ডিসেম্বর- এফডিসি নির্ভর বাংলা চলচ্চিত্রের প্রভাবশালী নির্মাতা মালেক আফসারী। আশির দশক থেকে দাপটের সঙ্গে টানা সিনেমা নির্মাণ করে আসছেন তিনি। তার বেশীর ভাগ ছবিই ব্যবসাসফলতা পেয়েছে। রাস্তার রাজা, এই ঘর এই সংসার, মৃত্যুর মুখে, মরণ কামড়, লাল বাদশা, আমি জেল থেকে বলছিরে মতো হিট সিনেমা তার দখলে। সর্বশেষ অন্তর জ্বালা নির্মাণ করে বিনোদন জগতে রীতিমত আলোচনায় তিনি। অন্তর জ্বালাকে প্রাসঙ্গিক ধরে একটি জনপ্রিয় অনলাইন নিউজের সাথে খোলাখুলিভাবে আরো নানা বিষয়ে কথা বলেছেন এই নির্মাতা- আফসারী ভাই, কেমন আছেন? সপ্তাহান্তে অন্তর জ্বালার রেসপন্স কেমন দেখছেন? আমিতো ঢাকায় নাই। ছবি মুক্তির দুইদিন পরেই চলে আসছি নোয়াখালি। নিঝুম দ্বীপের কাছাকাছি। আর ছবির রিয়েকশান নিয়েতো আমি ভাবি না, মাথায়ই নেই না। আমি কোনো সময় আমার ছবি দেখতে কিন্তু হলে যাই না। এটা পাব্লিকের জিনিষ, তারা দেখুক। এটা সম্পূর্ণই তাদের ব্যাপার। আমরা বলে কয়ে মানুষকেতো হলে আটকায়ে সিনেমা দেখাতে পারি না। মানুষ তার পয়সা দিয়ে সিনেমা দেখবে, দেখে যা ইচ্ছা বলবে। এটা মানুষের অধিকার। ছবি মুক্তির মাঝখানে আপনি যে ঢাকা ছেড়ে গেলেন, তাতে অভিনেতা বা প্রযোজক আপনাকে কিছু বলেনি? আমি খোঁজ খবর রাখতে পারছি না সিনেমাটার। ফেসবুকে আমাকে সবাই ভালোই বলছে। আমি যেখানে আছি সেখানে নেটওয়ার্কের ঝামেলা, তারপরও জায়েদ প্রতিদিন খোঁজ খবর রাখছে। ফেসবুকে দেখছি জায়েদ পিরোজপুর আরো কোথায় কোথায় যেন যাচ্ছে। দ্বিতীয় সপ্তাহে কয়টা সিনেমা হলে যাচ্ছে অন্তর জ্বালা? অন্তর জ্বালা কয়টা হলে চললো আমি জানি না, দ্বিতীয় সপ্তাহে কয়টায় যাচ্ছে আমার জানা নেই। সিনেমা বানানোর পর আমি দর্শক হয়ে যাই। এখন আমি দর্শক। ঢাকায় ফিরবেন কবে? এখন আপাতত এখানেই থাকবো। কেউ না ডাকলে, বা সিনেমা বানানোর টাকা না দিলে এখানেই থেকে যাবো। আমার বউ-বাচ্চাসহ এখন নোয়াখালি আছি। ওরা কদিন পরে চলে যাবে। কিন্তু আমাকে কেউ না ডাকলে আমি এখানেই থেকে যাবো। কেউ আপনাকে ডেকে সিনেমার প্রস্তাব দিবে বলে মনে করেন? অনেকেই আগে আমাকে সিনেমা বানানোর প্রস্তাব দিয়েছে। বিভিন্ন হোটেলে বসতে অফার দিয়েছে। আরাম আয়েশ করে খোশগল্প করে প্রযোজকের কাছ থেকে সিনেমার প্রস্তাবে আমি রাজি না। আমার পরিস্কার কথা, কেউ সিনেমা বানাতে আসলে বা টাকা দিতে চাইলে তাকে এফডিসি আসতে হবে। তারপর তার হাত থেকে আমি টাকা নিবো সাইন করে। তারপর থেকেই আমি সিনেমা বানানো শুরু করবো। এরপর আর সেই প্রডিউসারের খুব দরকার আমার নেই। বাকিটা আমার দায়িত্ব। আপনি যত বড় প্রডিউসারই হোন আমি আপনার অন্যায় আবদার শুনবো না। কাকে নায়ক, কাকে নায়িকা সেটা আরেকজন ঠিক করে দিবে এটাতো আমি শুনবো না। হ্যাঁ। সিনেমায় ইদানিং এরকম শোনা যায় প্রায়শই এইসবকে আমি নোংরামিই বলি। প্রডিউসার যখন নায়িকা ঠিক করে দেয়, তখন ইন্টারনাল ঝামেলা হয়। নায়ক সিনেমার শুটিংয়ের সময় নায়িকার সাথে কথা বলবে, তাদের একটা বোঝা পড়ার ব্যাপার আছে। এটা চিরায়ত নিয়ম। কিন্তু প্রডিউসার টাকা দিচ্ছে বলে এইসব স্বাভাবিক বিষয়ে বাধ সাধে। নায়িকার সাথে অমুক কথা বলতে পারবে না, হাসিমুখে কথা বলতে পারবে না। এসব কিন্তু ঝামেলা। প্রচুর প্রডিউসার এখন শুধু নায়িকা লঞ্চ করাতেই ছবি বানাতে চায়। আমাকেও অনেক প্রডিউসার নায়িকা লঞ্চ করা ছবির প্রস্তাব করেছে। আমি এগুলোর ধার ধারি না। আমার কথা হচ্ছে, তুমি নায়িকাও বানাবা, আবার বউও বানাবা তাতো হয় না। আমি সিনেমা করলে যাকে যেখানে উপযুক্ত মনে করবো সেখানেই নিব। প্রডিউসারের সব কথা শোনার রুচি আমার নাই। আমি মনে করি, আর্টিস্ট পছন্দ থেকে শুরু করে সব বিষয়ে একজন নির্মাতার স্বাধীনতা থাকা উচিত। যেরকম আমি অন্তর জ্বালা ছবির নায়ক হিসেবে জায়েদকে নিলাম। এই চরিত্রে বাংলাদেশের আর কোনো নায়ককে মানাবে না। পরীর ক্ষেত্রেও তাই। অন্তর জ্বালা যে হাইপ তৈরি করেছিল, সপ্তাহ শেষেতো তা ধরে রাখতে পারলো না। অনেকেই নেতিবাচক কথা বলেছেন ছবিটি নিয়ে? সাধারণ মানুষ থেকে সাংবাদিক, অনেকেই ছবিটি নিয়ে কথা বলেছেন। সাংবাদিকরা যা লিখেছেন ছবিটি নিয়ে এটা কিন্তু একেবারে পরিস্কার। তারা ছবির খারাপ দিকগুলোকে নির্ভয়ে বলেছেন। এটা আমার পছন্দ হয়েছে। আমার সাথে কারো ভালো সম্পর্ক আছে বলে কোনো সাংবাদিক ছবিটি নিয়ে ভালো লিখেছে এটা কিন্তু হয়নি। একেবারে স্বাধীনভাবে বিচার করেছে সবাই। লেখাগুলো দেখেছি ইন্টারনেটে। আরও পড়ুন: তাহলে কী ডিভোর্স হচ্ছে না শাকিব-অপুর? যা বললেন অপু বিশ্বাস তাহলে কি আপনি আর সিনেমা বানাবেন না? আমি ঢাকা ছেড়ে এসেছি, কিন্তু এখনো কারো সিনেমা করে দেয়ার এরকম কোনো কল পায়নি। কেউ আমাকে এখনো বলেনি যে আপনি আসেন, এসে ছবি শুরু করেন আমরা টাকা দিবো। ধরুন, আমার এই ঘর এই সংসার ছবিটা যখন নির্মাণ করলাম, তখনও এই অবস্থা হয়েছিল। ছবিটা এতো সুন্দর একটা গল্প, নির্মাণ ছিলো ভাবতে ভালো লাগে। কিন্তু তারপর নির্মাণ করলাম মৃত্যুর মুখে। এভাবেই চলছে আরকি ধরুন কেউ আপনাকে সিনেমা বানানোর জন্য ডাকলো, আপনি ঢাকায় চলে আসবেন? আমাকে কেউ কল করলে অবশ্যই যাবো। তিন হিরো হিন হিরোইন নিয়ে মশল্লাদ্বার ছবি বানাবো এবার। সিরিয়াস গল্প থাকবে না আর। হাল্কা মেজাজের কমেডি ঘরানার গল্প থাকবে। জাস্ট এন্টারটেইন। মজার জন্য সিনেমা বানাবো। জায়েদ-পরী হয়তো থাকবে। জয়ও থাকতে পারে। পুরনো কাউকে নিবো না। ভালো নাচ জানে এরকম কাউকে নিবো। আমি সেক্সি ফিগার নিবো। বিপাাশা বসুর মতো কাউকে খুঁজবো হয়তো। তারমানে আপনি পরবর্তী সিনেমার পোকা মাথায় নিয়ে ঘুরছেন? বললাম না! হাল্কা মেজাজের একটা গল্পে সিনেমা বানাবো এবার। এরকম গল্প মাথায় সেট করা আছে। কেউ টাকা দিলেই সিনেমা বানানো শুরু করবো। তিন নায়ক-নায়িকার সিনেমায় শাকিব খানওতো আসতে পারে। নাকি? শাকিব খানতো একাই একশো। তাকে তিন হিরোর সিনেমায় নেয়া সম্ভব না। সেতো একাই একটা সিনেমা মাতিয়ে দিতে পারে। তাহলে শাকিবকে নিয়ে কোনো সিনেমা করার পরিকল্পনা আছে? শুনেন,পর্দার শাকিব খানের কোনো জবাবই নাই। গ্রাম গঞ্জের সবাই তার ভক্ত। এখনতো আমি গ্রামে আছি, একেবারে বদ্ধ একটা গ্রামে। দুপুরে একটা সুন্দর মেয়ে আসছিল আমার কথা শুনে। সে এসে আমাকে শাকিবের কথা জিজ্ঞেস করে। শাকিবের সাথে অপুর ঝামেলার কি অবস্থা এগুলো জানতে চায়। এখন বুঝেন অবস্থা, শাকিব মানুষের কোথায় পৌঁছে গেছে। এগুলোতো অস্বীকার করার কিছু নাই। এখন যে শাকিব-অপুকে নিয়ে মিডিয়াতে সমালোচনা হচ্ছে, ঝগড়া বিবাদ হচ্ছে দেখবেন এগুলো থাকবে না। সব মুছে যাবে শাকিব খানের একটা হিট ছবির সাথে সাথে। সবার ভক্তরা সব ভুলে যাবে। দেখবেন মানুষ শুধু শাকিব শাকিব করছে। আপনি মৌলিক সিনেমা বানান না, এরকম কথা খুব গর্ব করে বলেন। এতেতো সিনেমা সংশ্লিষ্ট অনেকেই নাখোশ হন। আপনি বুঝতে পারেন? আমার এসব কথায় যে কারো না কারো লাগে, এটা আমি জানি। জেনেই বলি। আমারটা আমি বলছি, মৌলিক ছবি বানাই না। আমাকে সবাই মিলে বলে দিক দুই কথা। নকলবাজ, যা ইচ্ছা মনে চায় মানুষ বলুক। বলে বলে মনের শখ মেটাক সবাই। আমার কি যায় আসে তাতে! কিন্তু আমি হিপোক্রেসি করি না। তারপরও মানুষ যা ইচ্ছা বলছে, গায়ে নিশ্চয় লাগে? একদম না। আমরা মিডিয়ার মানুষ। একটু সুযোগ পেলেই এখানে আপনাকে সবাই ধুয়ে দিবে, আবার কোনো কোনো সময় দেখবেন মাথায় নিয়ে নাচছে। এগুলোতো ধরতে নাই। দেখেন না, শাকিবকে জড়িয়ে এখন কতো কিছু হচ্ছে। বুবলীর সাথে কথা রটছে। দেখলাম রাত্রি নামের একটা মেয়ের সাথে তার নাম জড়িয়েও অপবাদ দেয়া হচ্ছে। কিন্তু কদিন পর দেখবেন এসব কিচ্ছু থাকবে না। সব ধুয়ে মুছে যাবে শাকিবের একটা হিট সিনেমার সাথে সাথে। অন্তর জ্বালা সুপার হিট না হলে আপনারতো সিনেমা ছেড়ে দেয়ার কথা। কি করবেন বলে ভাবছেন? আমি এইজন্যইতো এখন ঢাকা ছেড়ে গ্রামে চলে আসছি। কদিন এখানে থেকে দেখি আমার ডিমান্ড আছে কিনা। এসব কাজে সম্মানটা হচ্ছে ফেক্ট। তবে এটুকু বলতে পারি, আমাকে না ডাকা পর্যন্ত এফডিসিতে ঢুকছি না। যে কেউ ছবি বানাতে ডাকলে তার ছবি করবেন? না। আগে আমি যেভাবে কাজ করে অভ্যস্ত এগুলো শর্ত মানতে হবে প্রডিউসারের। যেমন ধরেন, আমি কখনোই জাজের ছবি করবো না। সবার ছবি করতে হবে এমন না। জাজের ছবিতে প্রযোজকই সর্বেসর্বা। জাজে একজন নির্মাতার কোনো স্বাধীনতা নাই। একজন আছেন, সব সিদ্ধান্ত উনি একাই নেন। এগুলো আমি নিতে পারবো না। ওখানে একজন আছে যিনি শুধু সিনেমা বানানোর টাকা দেবেন বলে কে নায়িকা হবে, নায়ক হবে, কী গল্প হবে, কোথায় লোকেশন, কে ক্যামেরা ম্যান, ইউনিটে কারা থাকবে সব ঠিক করে দেন, এমন সিনেমা মালেক আফসারি বানাবে না। ওখানে শুধু একজন পরিচালক অ্যাকশান আর কাট বলার সুযোগ পান। তাদের এখানে নিজেকে অফিসার মনে হয়, পরিচালক না। কিন্তু আমিতো চেয়ারে বসে ডিরেকশন দিতে চাই। সিন টু সিন নায়ক-নায়িকাকে আমার গল্পে ঢুকাতে চাই। সূত্র: চ্যানেল আই অনলাইন আর/১২:১৪/২২ ডিসেম্বর
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2zfmra5
December 22, 2017 at 07:02AM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন