খিদিরপুর, ০৪ ডিসেম্বর- খিদিরপুরে মধুসূদন দত্তের বাড়ির হেরিটেজ মর্যাদা বদলায়নি৷ ওই বাড়ি এখনও পুরসভার খতিয়ানে হেরিটেজ গ্রেড -টু (বি ) তালিকাভুক্ত৷ অতএব তা ভেঙে নয়া নির্মাণের কোনও অবকাশ নেই৷ সম্প্রতি তথ্য জানার অধিকার আইনে (আরটিআই ) প্রশ্নের জবাবে পুরসভার তরফে এ কথা জানানো হয়েছে৷ এক কথায়, মধুসূদনের বাড়ি ভেঙে বহুতল আবাসন বা শপিং মল বানানোর যে তত্পরতা কোনও কোনও মহলে শুরু হয়েছিল, তাতে জল ঢেলে দিচ্ছে পুরসভার জবাব৷ গত ১৬ নভেম্বর কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী গৌরবকুমার বসু তাঁর মক্কেল পর্ণালি বন্দ্যোপাধ্যায়ের তরফে পুরসভার প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট ইউনিটের (পিএমইউ) ডিরেক্টর জেনারেলকে তথ্য জানার অধিকার আইনে চিঠি দিয়েছিলেন৷ তাতে তিনি ২০এ , ২০বি ও ২০সি কার্ল মার্কস সরণির বাড়ির ইতিহাস ও স্থাপত্যগত ইতিবৃত্ত তথা মালিকানার ব্যাপারে তথ্য জানতে চেয়েছিলেন৷ এর উত্তরে ১৭ নভেম্বর গৌরবকে লেখা জবাবে ডিজি (পিএমইউ) লিখেছেন , পুরসভার নথি অনুযায়ী মাইকেল মধুসূদন দত্তের বসতবাড়ি হিসাবে ২০এ , ২০বি ও ২০সি কার্ল মার্কস সরণির বাড়িগুলি গ্রেড-টু হেরিটেজ তালিকাভুক্ত৷ যদিও রাজ্য হেরিটেজ কমিশন এর আগে গৌরবকে জানিয়েছিল, পুরসভার হেরিটেজ কনজারভেশন কমিটি ওই বাড়িটিকে হেরিটেজ স্বীকৃতি দিলেও সে ব্যাপারে কোনও প্রমাণ কমিশনের হাতে নেই৷ গৌরব ২৮ অক্টোবর রাজ্য হেরিটেজ কমিশনের সচিবকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছিলেন , তাঁর মক্কেল পর্ণালি ওই বাড়ি যে মধুকবিরই , সে সংক্রান্ত প্রমাণ দাখিল করতে চান৷ কারণ, জুলাই মাসে কমিশন সংবাদমাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিয়ে এই ব্যাপারে সাধারণ মানুষের কাছে প্রমাণ চেয়েছিল৷ যদিও, আইনজীবীর চিঠির উত্তরে কমিশনের সচিব জানিয়েছিলেন, এ ব্যাপারে কলকাতা পুরসভার সঙ্গে যোগাযোগ করাই শ্রেয়৷ প্রথমত, প্রমাণ পেশ করার জন্য কমিশনের দেওয়া এক মাসের সময়সীমা পেরিয়ে গিয়েছে৷ দ্বিতীয়ত, এই ব্যাপারে যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার পুরসভাই নেবে৷ এর আগে কমিশনের চেয়ারম্যান শুভাপ্রসন্ন এই সময়-কে জানিয়েছিলেন, নয়ের দশকের গোড়ায় যাঁরা মালিক ছিলেন, তাঁদের কাছ থেকে বাড়িটি কেনেন সালাউদ্দিন নামে এক ব্যক্তি৷ কমিশনের হাতে এমন কোনও প্রমাণ নেই যে ওই বাড়িতে মধুসূদন থাকতেন৷ ফলে , যিনি বাড়ি কিনেছেন , তিনি ওখানে কী করবেন তা কমিশনের হাতে নেই৷ তবে যাই হোক , বাড়ির সামনে যেন মধুকবির একটি মর্মর মূর্তি ও তাঁর নামাঙ্কিত ফলক বসানো হয়, সে ব্যাপারে সালাউদ্দিনকে তিনি রাজি করিয়েছেন বলে শুভাপ্রসন্ন জানিয়েছিলেন৷ সালাউদ্দিনও ওই বাড়ির সামনে একটি নোটিস দিয়েছিলেন যে , সেখানে মধুসূদন তাঁর জীবদ্দশায় থাকতেন , তেমন প্রমাণ কেউ দিলে ২৫ লক্ষ টাকা ইনাম মিলবে ! পুরসভার ডিজি-র (পিএমইউ ) সাম্প্রতিক চিঠিতে খিদিরপুরের ওই বাড়ির হেরিটেজ মর্যাদা ঘিরে ধোঁয়াশা অনেকটাই কাটল বলে মত পুরোনো কলকাতা বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ও গবেষকদের৷ স্মৃতির অতলে হারিয়ে যাওয়া হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিও -র বাড়ি পুনরাবিষ্কারের কৃতিত্বের অধিকারী অধ্যাপক শক্তিসাধন মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য , আরটিআইয়ের উত্তরে পুরসভা জানিয়েছে সরকারি ভাবে ওই বাড়ির চরিত্র বদলানো হয়নি৷ ফলে, ওই বাড়ি ভাঙার আইনগত অধিকার কেউ কাউকে দিতে পারে না৷ তবে তাঁর প্রশ্ন, প্রাথমিক ভাবে বাড়িটি গ্রেড-টু (এ) তালিকভুক্ত ছিল৷ তা গ্রেড -টু ( বি )-তে নিয়ে আসা হল কেন ? একই প্রশ্ন গৌরবেরও৷ পুরসভার বিধি অনুযায়ী , গ্রেড -টু (বি )-তে বাড়ির মৌলিক কাঠামো না -বদলে লম্বালম্বি ও আড়াআড়ি সামান্য কিছু সংযোজন-রদবদল করা সম্ভব৷ গৌরবের দাবি , পুরসভার অবস্থানের প্রেক্ষিতে এ বার মধুকবির বাড়ি রক্ষায় রাজ্য সরকার এগিয়ে আসুক৷ কারণ , গ্রেড -টু (বি ) হেরিটেজ ভবন হলেও তা ভেঙে শপিং মল , বহুতল আবাসন বানানো চরম বেআইনি৷ পুরসভার জবাবের প্রেক্ষিতে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে হেরিটেজ কমিশনের চেয়ারম্যান শুভাপ্রসন্নের প্রতিক্রিয়া , কমিশনের দায়িত্ব হেরিটেজের রক্ষণাবেক্ষণ৷ যখন বাড়িটি হেরিটেজ ঘোষিত হয়নি তখন এক জন বাড়ি কিনেছিলেন৷ তিনি হাইকোর্টে গিয়েছেন৷ আমরা মুখ্যসচিব ও অ্যাডভোকেট জেনারেলের সঙ্গে আলোচনা করে সংবাদমাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রমাণ চেয়েছি৷ কেউ কিছু দেয়নি৷ আমরা তখন পুরসভাকেই বিষয়টি দেখতে বলেছি৷ যদি আমাদের হাতে প্রমাণ না থাকে তো কী করব ! সেই সঙ্গেই তাঁর মন্তব্য , তবে এর আগে প্রায় কোটি টাকা দিয়ে সরকার নিবেদিতার বাড়ি অধিগ্রহণ করেছে৷ এখানেও যদি সে রকম হয় তো তার চেয়ে ভালো আর কী হতে পারে ! তখন আমরা ওই বাড়ি খুব ভালো ভাবে রক্ষা করতে পারব৷ আর সালাউদ্দিন বলেন , আমি নিজেই তো বাড়ি নিয়ে প্রমাণ চেয়ে ২৫ লক্ষ টাকা ইনাম ঘোষণা করেছিলাম৷ যদি কেউ এখনও সেই প্রমাণ এনে দিতে পারেন , তো সঙ্গে সঙ্গে টাকা দিয়ে দেব৷ আর পুরসভা যদি বলে বাড়ি মধুসূদনের , তো প্রমাণ দিক৷ প্রমাণ পেলে বাড়ি আমি ছেড়ে দেব৷ কিন্ত্ত তা না হলে , বাড়িটা নিয়ে যাতে তাঁদের লাভ বেশি হয় , ব্যবসাদার হিসেবে তাঁরা সে দিকেই নজর দেবেন বলে সালাউদ্দিনের ইঙ্গিত৷ তবে বাড়ির সামনে ফলক আর মূর্তি বসানো হবে বলে প্রতিশ্রীতি দিয়েছেন তিনি৷ তথ্যসূত্র: এই সময় এআর/১৫:৪৮/০৪ ডিসেম্বর



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2BxHoyK
December 04, 2017 at 09:45PM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top