নিউ ইয়র্ক, ০৯ ডিসেম্বর- যুক্তরাষ্ট্রে বিএনপির নামে তিনটি কোম্পানি গঠন করে জিয়াউর রহমান, যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি এবং তারেক রহমানের নাম ও ছবি ব্যবহার করার ওপর আদালতের নিষেধাজ্ঞা চেয়েছিলেন নিউইয়র্কের জ্যাকব মিলটন। আদালত তাঁর সেই নিষেধাজ্ঞার আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আপাতত। ১ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির ব্যানারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে আদালতের সেই নির্দেশনার চিঠিটি দেখানো হয়েছে। এর আগে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর চিঠি লিখে জ্যাকব মিলটনকে বিএনপি থেকে দূরে থাকতে বলেছিলেন। পাল্টা আরেকটি সংবাদ সম্মেলন ডেকে জ্যাকব মিলটন দাবি করেন, মির্জা ফখরুল কোনো চিঠি দিয়েছেন বলে তাঁর জানা নেই। তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র বিএনপিকে ঐক্যবদ্ধ এবং যুক্তরাষ্ট্রে আইনসংগতভাবে কার্যক্রম চালানোর উদ্দেশ্যে আইনি উদ্যোগ নিয়েছি। এ নিয়ে জ্যাকসন হাইটসের আইন প্রতিষ্ঠান লিগ্যাল নেটওয়ার্কের মালিক জ্যাকব মিলটনকে কোণঠাসা করতে ১ ডিসেম্বরের সংবাদ সম্মেলনে হাজির হন বহু ভাগে বিভক্ত বিএনপি রাজনীতির অনেক কর্মী-সমর্থক। সেখানে এমনকি মিলটনের দীর্ঘদিনের সহযোগী এবং বিএনপির আরেক বিতর্কিত কর্মী জাহিদ এফ সরদার সাদীও ছিলেন। তিনি দাবি করেন, বিএনপির সমর্থক হিসেবে এত দিন জ্যাকবের সঙ্গে কাজ করলেও মৌলনীতিতে তিনি আঘাত করেছেন। কেননা, তিনি প্রবাসে বিএনপির রাজনীতিকে কুক্ষিগত করতে চেয়েছেন, যেটা আমি মানি না। সে কারণেই তাঁর আইনি পন্থার বিরুদ্ধে আমিসহ আমরা সবাই এক হয়েছি। জ্যাকব মিলটন তাঁর ডাকা সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন, বহু ভাগে বিভক্ত বিএনপিকে একটি আইনি কাঠামোর মধ্যে আনতেই তিনি স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে কোম্পানি গঠনের উদ্যোগ নেন। এর বাইরে কোনো সুবিধা আদায়ের জন্য কিংবা অন্য কোনো উদ্দেশ্য সাধনের জন্য তিনি ওই কোম্পানি গঠন করেননি। উল্লেখ্য, জ্যাকব মিলটন বিএনপি ইউএসএ ইনক, তারেক রহমান ইনক, জিয়াউর রহমান ইনক নামে অলাভজনক করপোরেশন খুলে গত ২৭ সেপ্টেম্বর এই কোর্টে মামলা করেন। সেই মামলায় বিএনপি, জিয়াউর রহমান এবং তারেক রহমানের নাম ও ছবি, বিএনপির লোগো ও তাদের ছবি ব্যবহারের ওপর স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আদালতে আবেদন জানিয়েছিলেন। মামলায় যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির আটজন নেতাকে বিবাদী করা হয়। সুপ্রিম কোর্ট জ্যাকব মিলটনের দায়ের করা মামলায় তাৎক্ষণিক নিষেধাজ্ঞার আবেদনটি নাকচ করেছেন। বিচারপতি জেনিস টেইলর ১৫ নভেম্বর এই আদেশ প্রদানের পর ২০ নভেম্বর তা নথিভুক্ত হয় এবং ১ ডিসেম্বর তা বিবাদীপক্ষের আইনজীবী নটরাজ এস বুসহানের হাতে আসে। যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির তরফে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই নামঞ্জুর প্রেক্ষাপট বর্ণনা করেন অ্যাটর্নি বুসহান। তিনি বলেন, ৮ ডিসেম্বর চূড়ান্ত রায়ে কয়েক মাসের একটি সময়সীমা বেঁধে দিতে পারেন আদালত। এই সময়ের মধ্যে বিএনপির নেতা-কর্মীদের কার্যক্রম চালাতে বাধা নেই। ওই সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির নেতা সাবেক সভাপতি আবদুল লতিফ সম্রাট, সাবেক সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান জিল্লু, মোস্তফা কামাল পাশা, অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন, সোলায়মান ভূঁইয়া, কাজী আযম, আবু সাইদ আহমদ, আবদুল বাতিন, আমানত হোসেন আমান, রেজাউল আজাদ ভূঁইয়া, খলকুর রহমান, মাজহারুল ইসলামসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। ৩ ডিসেম্বর জ্যাকসন হাইটসের স্মার্ট অ্যাকাডেমিয়ায় অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে জ্যাকব মিলটন ছাড়াও সংবাদ সম্মেলন আহ্বানকারী হোপ ইন্টারন্যাশনালের পরিচালক নিরু এস নিরা এবং জ্যাকব মিলটনের আইনজীবী ডেভিড গোল্ডকর্ন বক্তব্য দেন। প্রারম্ভিক বক্তব্যে নিরু এস নিরা বলেন, আমি বিএনপির একনিষ্ঠ কর্মী। জ্যাকব মিলটনও বিএনপির বার্তা প্রচারে আন্তরিকভাবে কাজ করছেন। আমরা বিএনপিকে ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু আমাদের সেই প্রচেষ্টা সফল হয়নি। জ্যাকব মিলটনের আইনজীবী ডেভিড কর্নগোল্ড বলেন, জ্যাকব মিলটন তাঁর মাতৃভূমির জন্য নিবেদিত ও উদ্বিগ্ন, যেখানে মানুষ গুম হয়ে যায়, হারিয়ে যায়। মানুষের কোনো অধিকার নেই। মানবাধিকারকর্মী হিসেবে তিনি এসবের বিরুদ্ধে কথা বলেন, কারণ তিনি তাঁর দেশ ও দেশবাসীকে ভালোবাসেন। জ্যাকব মিলটন বলেন, আমেরিকায় অন্য দেশের রাজনৈতিক দলের কর্মকাণ্ড মার্কিন আইনে বৈধ নয়। তাই সংগঠন হিসেবে বিএনপি ও এর কার্যক্রমকে বৈধ তথা আইনসম্মত করার উদ্দেশ্যেই আমি আইনি উদ্যোগ নিয়েছি। তিনি বলেন, আমি কোনো মামলা করিনি। বিএনপিকে করপোরেট আইডেন্টিটির আওতায় এনে আমেরিকায় একে আইনসম্মত করে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করছি। প্রায় পাঁচ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে বিএনপির কোনো কমিটি নেই। এ অবস্থায় বিভিন্ন গোষ্ঠীতে বিভক্ত হয়ে বিএনপির কাজকর্ম চালাচ্ছিলেন প্রবাসে দলটির কর্মী-সমর্থকেরা। সূত্র: প্রথম আলো আর/১০:১৪/০৯ ডিসেম্বর



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2jCHaQd
December 10, 2017 at 05:32AM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top