কলকাতা, ০৮ ডিসেম্বর- শুরুটা হয়েছিল ভালোই৷ কিন্তু দিনের শেষে রোহিঙ্গা ইস্যুতে তাল কাটল৷ সূত্রের খবর, বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ একেবারেই একমত হলেন না এই ইস্যুতে৷ সীমান্ত নিয়ে সরকারি স্তরের বৈঠকেও ছাপ ফেলল রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে বিজেপি-তৃণমূল শীতল সম্পর্ক৷ নবান্ন সূত্রের খবর, রোহিঙ্গা ইস্যুতে মুখ্যমন্ত্রী নিজের পুরনো অবস্থানেই অনড় থেকে এদিন তিনি কার্যত কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে মতান্তরে জড়িয়ে পড়েন৷ যদিও এই ইস্যু নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খোলেন নি দুজনের কেউই৷ যার জেরে রোহিঙ্গা ইস্যুতে রাজনাথ কড়া ভাষায় তাঁকে পাশে বসিয়েই সংবাদমাধ্যমকে জানিয়ে দেন, সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে বেআইনিভাবে অনুপ্রবেশ কোনোভাবেই বরদাস্ত করা হবে না৷ এক্ষেত্রে কঠোর অবস্থানই নিচ্ছে কেন্দ্র৷ রোহিঙ্গা ইস্যুই যে এই মন্তব্যের প্রধান কারণ তা স্পষ্ট হয়ে যায় তখনই৷ সূত্রের খবর, সাত রাজ্যের কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের শেষে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিজে থেকেই নবান্নের চোদ্দোতলায় মুখ্যমন্ত্রীর ঘরে গিয়েছিলেন সৌজন্য সাক্ষাতের জন্য৷ পাহাড়ে সেনা প্রত্যাহার থেকে পুলিশ অফিসার খুনে অভিযুক্ত বিমল গুরুং ইস্যুতে কেন্দ্রের অসহযোগিতার প্রশ্নে তাঁর কাছে অনুযোগ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী৷ নবান্নের এক অফিসারের কথায়, বিমল গুরুং নতুন করে পাহাড়ে অশান্তি পাকানোর চেষ্টা করছে৷ অথচ তাঁকে বিভিন্নভাবে প্রশ্রয় দিচ্ছে সিকিম ও চিনের সরকার৷ কেন্দ্রের বিজেপিও মদত দিচ্ছে৷ এই বিষয়েই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে মুখ্যমন্ত্রী অনুযোগ প্রকাশ করেন৷ সূত্রের খবর, এই পর্যন্ত ঠিকঠাকই চলছিল৷ কিন্তু এরপরই রোহিঙ্গা ইস্যুতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর অবস্থান জানতে চান৷ প্রসঙ্গত, রোহিঙ্গা শরণার্থী ইস্যুতে উদ্বেগ প্রকাশ করে তাদের পাশে দাঁড়ানোর কথা আগেই ঘোষণা করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ এমনকি অতীতে টুইটার বার্তায় এবিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে জাতিসংঘের আবেদনকে সমর্থনও জানিয়েছিলেন তিনি। কেন্দ্রীয় সরকারের হিসেব অনুযায়ী, ভারতে কমপক্ষে ৪০ হাজার রোহিঙ্গা বাস করছেন৷ ভারতে আশ্রয় নেওয়া এই সব রোহিঙ্গাকে মায়নমারে ফেরত পাঠানোর জন্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে গত ৮ আগস্ট প্রতিটি রাজ্যে আনুষ্ঠানিক নির্দেশিকা পাঠানো হয়েছিল৷ যার তীব্র বিরোধিতা করে মমতা সেসময় বলেছিলেন, রোহিঙ্গাদের সাহায্যের জন্য জাতিসংঘের আবেদনকে আমরা সমর্থন করছি। আমাদের বিশ্বাস, সব সাধারণ মানুষ সন্ত্রাসবাদী নয়। আমরা সত্যিই উদ্বিগ্ন। নবান্ন সূত্রের খবর, রোহিঙ্গা ইস্যুতে এদিনও নিজের পুরনো অবস্থানেই অনড় ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী৷ যার জেরে দিনের শেষে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কার্যত মতান্তরেই জড়ালেন রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান৷ যা নিয়ে নবান্নে অফিসারদের অন্দরে জোর চর্চা শুরু হয়েছে৷ তার জেরেই সাংবাদিক সম্মেলনে এসে বৈঠক ভালো হয়েছে, শান্তিপূর্ণ হয়েছে বলেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পাশে বসিয়েই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পরিস্কার বলে দেন, সীমান্তবর্তী এলাকাগুলিতে বেআইনিভাবে অনুপ্রবেশ বরদাস্ত করা হবে না৷ ফলে সব বিষয়ে মতৈক্য হলেও রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিজেপি-তৃণমূলের বিতর্ক ছাপ ফেলল বৃহষ্পতিবারের বৈঠকে৷ এই নিয়ে নবান্নের ১৪ তলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দফতরে দ্বিতীয় দফার আলোচনা হয় বলেও সূত্রের খবর৷ সবমিলিয়ে বাকি বিষয়ে মতৈক্য থাকলেও সেই রোহিঙ্গা ইস্যুতেই সামনে এসে গেল কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাত৷ আর তাই, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অনড় মুখ্যমন্ত্রীকে নিজেদের অবস্থান নবান্নে পরিস্কার করে দিলেন বলেই রাজনৈতিক মহলের মত৷ সামনের পঞ্চায়েত ভোটের মঞ্চেও যে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে বিজেপি-তৃণমূল কথার লড়াই চলবে, বৃহষ্পতিবারের বিকেলে সেই ইঙ্গিত পরিস্কার৷ সূত্র: কলকাতা ২৪*৭ আর/১২:১৪/০৮ ডিসেম্বর



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2BU6CZ8
December 08, 2017 at 06:39AM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top