কলকাতা, ১৬ ডিসেম্বর- স্কুলজীবনে ১০০ মিটার দৌড়েও নাম দিতে পারত না ছেলেটা। ইনহেলার ছিল সবসময়ের সঙ্গী। সেই কিনা এখন দাপিয়ে বেড়ায় এক চুড়ো থাকে আরেক চুড়োয়। গল্প হলেও সত্যি। বলছি সত্যরূপের কথা। বাংলার পর্বতারোহী সত্যরূপ সিদ্ধান্ত। ভারতীয় সময় শনিবার ভোরে দক্ষিণ মেরুর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ ভিনসন ম্যাসিফের চুড়ো ছুঁয়েছেন সত্যরূপ। এটি ছিল তাঁর সেভেন সামিটের শেষ ধাপ। অসামরিক ক্ষেত্রে ভারতের প্রথম বাঙালি সেভেন সামিটার হলেন সত্যরূপ। বাঙালি হিসেবে অবশ্য প্রথম এই কৃতিত্ব অর্জন করেছেন বাংলাদেশের ওয়াসফিয়া নাজরিন। ২০১৫ সালের নভেম্বরে। ভিনসন ম্যাসিফের সত্যরূপ উদ্দেশে কলকাতা থেকে রওনা দিয়েছিলেন গত ৩০ নভেম্বর। আন্টার্কটিকা পৌঁছে আবহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে নিতে কেটে গিয়েছিল প্রথম সপ্তাহ। প্রকৃতি সাথ দেয়নি সব সময়। ভয়ঙ্কর তুষারধ্বসের মুখোমুখিও হতে হয়েছে সত্যরূপ এবং তাঁর সঙ্গীদের। দক্ষিণ মেরু অভিযানের বাকি পাঁচ সদস্য অস্ট্রেলিয়ার এবং নিউজিল্যান্ডের। হাজার বাধা পেড়িয়ে শুক্রবার সন্ধের পর সামিট ক্যাম্পের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেছিলেন তাঁরা। সেভেন সামিটের অর্থ পৃথিবীর সাতটা মহাদেশের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ জয়। ইউরোপ এবং অস্ট্রেলিয়ার সর্বোচ্চ শৃঙ্গ নিয়ে আবার মতভেদ রয়েছে। তাই বিতর্ক এড়াতে এই দুটি মহাদেশের দুটি করে শৃঙ্গই আরোহণ করেছেন সত্যরূপ। যে কোনো পর্বতারোহীর কাছেই সেভেন সামিট একটা মাইলস্টোন। এভারেস্টজয়ী সত্যরূপের সেভেন সামিট-এর শুরুটা হয়েছিল ২০১২ সালে, আফ্রিকার উচ্চতম শৃঙ্গ (কিলিমাঞ্জারো) দিয়ে। স্বপ্ন দেখাটা সহজ ছিল, বাস্তবে রূপ দেওয়াটা নয়। ২০১৬ সালে এভারেস্টের শৃঙ্গে পা রাখার আগে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে পর পর দুবছর অভিযান বাতিল হয়েছিল সত্যরূপের। অভিযানের বিপুল ব্যয়ভার বহন করতে সম্প্রতি বাকি অভিযানের সময় দেশ-বিদেশ থেকে সংগ্রহ করা স্মারক নিলামে ওঠানোর সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল। শেষ মুহূর্তে অবশ্য মোট খরচের বেশ কিছুটা উঠে আসে কয়েকটি স্পন্সরশিপ আর সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্রাউড ফান্ডিং-এর মাধ্যমে। এবারের অভিযান অবশ্য ভিন্সন ম্যাসিফেই শেষ নয়। তাঁর ইতিহাস গড়া নিয়ে যখন বাংলায় আলোচনা তুঙ্গে, অ্যাডভেঞ্চারে শ্বাস প্রশ্বাস নেওয়া এই যুবককে তখন নিশ্চই ডাকছে অন্য কোনও পাহাড়। ম্যাসিফ পরবর্তী অভিযানের তালিকাটা এবার বেশ লম্বা। দক্ষিণ মেরুর ৮৯ ডিগ্রি থেকে ৯০ ডিগ্রি পর্যন্ত ১১১ কিলোমিটার পথ স্কি করবেন সত্যরূপ এবং তাঁর সঙ্গীরা। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে শুরু হবে অভিযানের দ্বিতীয় পর্ব। চিলির বেশ কিছু পর্বতারোহণের থাকছে তালিকায়- মাউন্ট টার্ন, সিয়েরা হার্মানোস, কোপিয়াপো আগ্নেয়গিরি, ওজোস দেল সালাদো (চিলির সর্বোচ্চ শৃঙ্গ এবং পৃথিবীর সর্বোচ্চ আগ্নেয়গিরি)। সবশেষে থাকছে আর্জেন্টিনা আর চিলির সীমান্ত বরাবর দাঁড়িয়ে থাকা ট্রেস ক্রুসেস অভিযান। ২০১৫-এর মার্চে এই পর্বতেই সফল অভিযান সেরেও ঘরে ফেরা হয়নি মল্লি মস্তান বাবুর। ভারতের প্রথম সেভেন সামিটারের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতেই ট্রেস ক্রুসেসকে বেছে নেওয়া সত্যরূপদের। এমএ/০১:৫০/১৬ ডিসেম্বর
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2j6gu9O
December 16, 2017 at 08:02PM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন