শাহ আবদুল করিমকে নিয়ে না জেনে না শুনেই অনেক কিছু ভূল ভাবে লিখে থাকেন ,


সুরমা টাইমস ডেস্ক ঃঃ :: বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিমের ছেলে শাহ নূর জালাল তার ফেইসবুকে একটি ট্যাটাসে উল্লেখ করে বলেন। বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিম কে নিয়ে এখন পত্র, পত্রিকা এবং ফেসবুকে অনেক লেখা লেখি হয়, কিন্তু অনেকেই না জেনে না শুনেই অনেক কিছু ভূল ভাবে লিখে থাকেন।

তিনি এর ব্যাখ্যাও তুলে ধরেন, আমার মায়ের নাম নিয়েও ভূল লেখা লেখি হচ্ছে। বর্তমানে অনেকেই লিখে থাকেন যে আমার মায়ের নাম ‘আফতাবুন্নেছা’। কিন্তু, ইহা সঠিক নয়।
আমার মা তারা তিন বোন ছিলেন, আতরজান বিবি, মমজান বিবি, সরজান বিবি। আমার মা ছিলেন মধ্যম। আমার মায়ের নাম হল মমজান বিবি এবং ডাক নাম ছিল ‘বৈশাখী’। হয়তো বৈশাখ মাসে জন্ম নিয়ে ছিলেন বলেই বৈশাখী নামে ডাকতেন। আমার মা অত্যন্ত সহজ সরল ছিলেন বলে বাবা(শাহ আবদুল করিম) সরলা বলে ডাকতেন। মাকে নিয়ে বাবা অনেক গান ও লিখেছেন,যেমন—

“সরল তুমি শান্ত তুমি নূরের পুতুলা,
সরল জানিয়া নাম রাখি সরলা”।।,

“সরলা গো কার লাগিয়া কি করিলাম,
আপনার ধন পর কে দিয়া
ধনের কাঙ্গাল সাজিলাম”।।

দুঃখ লাগে অনেক লেখক, গভেষক রয়েছেন যারা কখনও শাহ আবদুল করিম কে নিয়ে চর্চা করেন নি, শাহ আবদুল করিম কে সঠিক ভাবে না জেনেই তারা শুধু বাণিজ্যের জন্য আমার অনুমতি না নিয়ে, আমাকে না জানিয়ে অনেক সময় দেখা যাচ্ছে বই প্রকাশ করে যাচ্ছেন।এই সমস্ত বইয়ে অনেক ভূল তথ্যাদ্বি উপস্থাপন হচ্ছে। যার ফলে আজ আমার মায়ের নামটিও ভূলভাবে ‘আফতাবুন্নেছা’ নামে প্রচারিত হচ্ছে। এমনকি কেহ কেহ আমার মাকে হিন্দু বলেও লিখেছেন। আর লিখেছেন আমার মায়ের মৃত্যুর পর, ‘বাবা যে কাঠে শুইতেন সেই কাঠের নিচেই নাকি মাকে দাফন করা হয়েছে’। নিশ্চই আপনারা যারা শাহ আবদুল করিম এর সৃত্মি বিজরিত উজানধল গ্রামে এসেছেন তারা অবশ্যই দেখেছেন, যে বাবা আদর করে বাড়ীর উঠোনে মাকে সমাহিত করেছেন । এইভাবে অনেকেই অনেক কিছু লিখছেন। কিছু কিছু শিল্পীরা রয়েছেন, যারা ক্যাসেট থেকে গান শুনে শুনেই শিখে গাইতেছেন। যাতে রয়েছে অনেক ভূলভ্রান্তি। যেমন,
“দিবানিশি ভাবি যারে
তারে যদি পাই না,
রঙ্গের দুনিয়া
তরে চাই না।।”
এটার বদলে গেয়েছেন—-
“২৪ঘন্টা ভাবি যারে
তারে যদি পাই না”। অন্যজন গাইতেছেন—“রঙ্গের দুনিয়া তরে চায় না”।
আরেকটা গানে,—-
“পাড়াপড়শি বাদি আমার,
বাদি কাল ননদী”।
এর পরির্বতে গাইতেছেন—
“বাদি কালনী নদী”

অন্য আরেকটা গানে আছে–
“রাবেয়া সপিয়া দিলেন
দেহ প্রাণ মন, বলকের ইব্রাহিম ছাড়ে সিংহাসন।।”
এখানে ‘বলকের’ পরির্বতে ‘পলকে ইব্রাহিম ছাড়ে সিংহাসন’ বলে গাইছেন। এভাবে অনেকেই ভূল ভাবে গাইতেছেন। গানের একটা শব্দ ভূলের কারণে ,গানের মূল ভাবার্থটি ওই নষ্ট হয়ে যায়।
তাই, আমি মনে করি কবি নিজে যেভাবে লিখেছেন সেভাবে গাওয়ার চেষ্টা করাই উচিত।

বাংলা একাডেমি আমাদের দেশের সংস্কৃতিকে লালন করে।এদেশের সংস্কৃতি নিয়ে অনেক বই প্রকাশ করে তাকেন। সেই বই গুলোতেও যে এতো ভূল তথ্য প্রকাশ হচ্ছে। যারা দায়িত্বে রয়েছেন, তারাও ঢাকায় বসে বসেই বিভিন্ন তথ্যগুলো সংগ্রহ করেন। তারা যাদের উপর দায়িত্বভার অর্পন করেন, তারা কত টুকু সঠিক তথ্য দিচ্ছেন, সেটা আমার মনে
হয় বড় কর্তারা খতিয়ে দেখেন নি। তার প্রমাণ, ২০১৪সালে বাংলা একাডেমি বাংলাদেশের লোকজ সংস্কৃতি গ্রন্থমালা সিলেট এভাবে বিভিন্ন নামে প্রকাশ হয়েছে। এই বই গুলোতে রয়েছে অসংখ্য ভূল। এতে শাহ আবদুল করিম এর লেখা অনেক গান অন্যজনের নামে ছাপা হয়েছে যেমন–
“মাটির পিঞ্জিরায় সোনার ময়না রে, তোমারে পূষিলাম কত আদরে”
এই বহুল প্রচারিত গানটি কোথাকার ‘দুধু মিয়া’ র নামে ছাপা হয়েছে।

তারপর,আরেকটি গান,—-
“তোমরা কুঞ্জ সাজাও গো,
আজ আমার প্রাণনাথ আসিতে পারে”
এই গানটি দুর্বিণ শাহের নামে প্রকাশ হয়েছে। তারপর একুশে পদক প্রাপ্ত কবি দেলোয়ার সাহেবের লেখা ,(“তুমি রহমতের নদীয়া, দয়া কর মোরে হযরত শাহ জালাল আওলিয়া”)এই গানটি দুর্বিন শাহের নামে চাপা হয়েছে। আমার বাবা শাহ আবদুল করিম এর আরেকটি গান,–(‘প্রাণ বন্ধু আসিতে সখি গো, আর কতদিন বাকী’) এই গানটির কথা লেখা হয়েছে, যে এই গানটি সিলেটের বাইরের কবি কর্তৃক রচিত।

আরেকটি গান আমাদের সিলেটের মরমী কবি আরকুম শাহের লেখা, গানটি হল,—–
(কৃষ্ণ আইলা রাধার কুঞ্জে,
ফুলে পাইলা ভ্রমরা
ময়ূর বেশেতে সাজইন রাধিকা।।) এই গানটি চাপা হয়েছে শাহ আবদুল করিম এর নামে।
আরও দুঃখের বিষয় হল। যে গানটি(আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম)একাদ্বশ শ্রেণীতে কবিতা আকারে পাঠ্য করা হয়েছে। সেই গানটিও বাংলা একাডেমির বইয়ে ভূলভাবে প্রকাশ করা হয়েছে। এভাবে আরও অনেক গান ভূলভাবে প্রকাশ হয়েছে।

(শাহ নূর জালাল এর ফেইসবুক থেকে নেয়া)



from Sylhet News | সুরমা টাইমস http://ift.tt/2iP8WrT

December 11, 2017 at 04:11PM
11 Dec 2017

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

:) :)) ;(( :-) =)) ;( ;-( :d :-d @-) :p :o :>) (o) [-( :-? (p) :-s (m) 8-) :-t :-b b-( :-# =p~ $-) (b) (f) x-) (k) (h) (c) cheer
Click to see the code!
To insert emoticon you must added at least one space before the code.

 
Top