ঢাকা, ০৩ ডিসেম্বর- মঞ্চ, টেলিভিশন, চলচ্চিত্র- তিন মাধ্যমেরই শক্তিমান অভিনেতা শাহেদ আলী। সহকারি পরিচালক হিসেবে শুরু করলেও বর্তমানে অভিনেতা হিসেবেই পর্দায় তার দেখা মিলছে। বেশ কয়েকজন জনপ্রিয় পরিচালকের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে তার। শেষ পর্যন্ত পরিচালনায় না ঝুঁকে তিনি হয়ে গেলেন পুরোদস্তুর একজন পেশাদার অভিনেতা। ১৯৯৭ সাল থেকে মঞ্চ এবং ২০০৪ থেকে টিভি নাটকে দাপটের সঙ্গে অভিনয় করে যাচ্ছেন তিনি। বড় পর্দায়ও তার অভিনয় দক্ষতা বেশ প্রসংশিত হয়েছে। সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে তাঁর অভিনিত সিনেমা হালদা। একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন নিজের ক্যারিয়ার, মিডিয়া ভাবনা, ভবিষৎ পরিকল্পনাসহ হালদা সিনেমা নিয়ে নানা কথা। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন - সোহাগ আশরাফ প্রশ্ন : কেমন আছেন শাহেদ ভাই? শাহেদ আলী : অনেক ভালো আছি। প্রশ্ন : নানান ধরণের কাজের ব্যস্ততার মাঝে আমাদের সময় দেওয়ার জন্য শুরুতেই ধন্যবাদ জানাচ্ছি। শাহেদ আলী : আমিও কৃতজ্ঞ একুশে টিভির দর্শক ও অনলাইনের পাঠকদের প্রতি। প্রশ্ন : আমরা সবাই জানি ছোট ও বড় পর্দায় আপনার সমান বিচরণ। দুই মাধ্যমেই আপনি অভিনয়ের দক্ষতা দিয়ে দর্শকদের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন। শুরুতেই আলোচনা করতে চাই বড় পর্দা নিয়ে। কারণ সম্প্রতি আপনার অভিনিত সিনেমা হালদা মুক্তি পেয়েছে। হালদা সম্পর্কে একটু বলেন? শাহেদ আলী : আপনারা সকলেই জানেন সিনেমাটি নির্মাণ করেছেন আমাদের সকলের পরিচিত জনপ্রিয় অভিনেতা ও নির্মাতা তৌকির আহমেদ। গ্রাম বাংলার অতিপরিচিত একটি ঘটনা প্রবাহ নিয়ে গল্পটা। মূলত জীবনের উৎস যদি আমরা মনে করি সেটা হচ্ছে- নদী এবং নারী। হালদা মূলত নদী এবং নারীর গল্প। এই নদী এবং নারীকে আমাদের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবেই ধরা হয়। কিন্তু দেখা যায় এই দুটি জিনিসকে আমরা বিপন্ন করি। এই বিপন্ন করার গল্প হচ্ছে হালদা। সেই সঙ্গে নদী সংলগ্ন মানুষের কৃষ্টি, জীবযাত্রা, সংগ্রাম, প্রেম, প্রাপ্তি ও অপ্রাপ্তির গল্প হচ্ছে হালদা। প্রশ্ন : আমরা দেখেছি মুক্তির আগে দর্শক হালদা নিয়ে বেশ উৎসাহি ছিলো। এবং মুক্তির পরে দর্শক বেশ উৎসাহ নিয়ে হলে গিয়ে সিনেমাটি দেখছে। প্রশংসাও করছে তারা। অভিনয়ের পাশাপাশি সিনেমার দৃশ্যে অসাধারণ লোকেশন, গ্রাম-বাংলার আবহাওয়া দর্শকদের দৃষ্টি কেড়েছে। এটির শুটিং কোথায় হয়েছে? শুটিং সময়ের কিছু অভিজ্ঞতা বলেন। শাহেদ আলী : এটার শুটিং হয়েছে চট্টগ্রামের হাটহাজারী ও রাউজান উপজেলার বিভিন্ন স্থানে। হালদা নদী সংলগ্ন উপকুল। প্রশ্ন : সিনেমাটিতে আপনার চরিত্র কি? শাহেদ আলী : আমি একটি জেলে চরিত্রে অভিনয় করেছি। একেবারে নিন্ম বর্ণের জেলে। খুবই দরিদ্র। সময়ের আবর্তে, জীবনের প্রয়োজনে চরিত্রটি কিছুটা অসৎ হয়ে যায়। গল্পের প্রয়োজনে শুরুতে চরিত্রটি এক রকম থাকে, জীবনের প্রয়োজনে সে চেঞ্জ হয়ে যায়। বলতে পারি, এটি একটি অতি সাধারণ চরিত্র। তার যেমন প্রেম থাকে, আবেগ থাকে, শ্রদ্ধা থাকে, ভালোবাসা থাকে ঠিক তেমনি লোভ থাকে, ঘ্রণা থাকে। সেই লোভে তার বিনাশ ঘটে। চরিত্রটিতে এ ধরণের একটি পরিণতি আছে। গল্প প্রবাহের মধ্যে চরিত্রটির বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। খুবই চাটি একটি চরিত্র। যারা সিনেমাটি দেখেছে তারাই বুঝতে পারবে। প্রশ্ন : আপনি ছাড়াও সিনেমাটিতে আরও অনেকে অভিনয় করেছেন। কে কে ছিলেন? তাদের নিয়ে কিছু বলেন। শাহেদ আলী : সিনেমাটিতে তিশা, মোশাররফ করিম ভাই, জাহিদ হাসান ভাই, রুনা খান, মোমেনা আপা, ফজলুর রহমান বাবু ভাই, দিলারা জামানসহ আরও অনেকেই আছেন। প্রত্যেকেই তারা তাদের বেষ্টটা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। অভিনয়ের ক্ষেত্রে একধরণের প্রতিযোগিতা ছিলো পরষ্পরের মধ্য। মোটকথা সুন্দর একটি কাহিনী চিত্র নির্মাণ করেছেন তৌকীর আহমেদ। প্রশ্ন : হালদা চলচ্চিত্রে দর্শকরা কি খুঁজে পাবে বা পাচ্ছে যার কারণে তারা হলে গিয়ে সিনেমাটি দেখবে বা দেখছে? শাহেদ আলী : এটা শতভাগ বাংলাদেশি সিনেমা। বাংলাদেশের কৃষ্টি, বাংলাদেশি গান, বাংলাদেশের মানুষের প্রেম, হিংসা, ঘৃণা, ক্রোধ সব কিছুই বাংলাদেশি। হালদা দেখে মনে হবে এটা আমাদেরই গল্প, আমারই গল্প। দর্শক এখানে নিজের জীবনের প্রতিচ্ছবি দেখতে পাচ্ছে। সিনেমাটি যতবেশি দর্শকের জীবনের প্রতিচ্ছবি হবে তত বেশি সফল হবে। প্রশ্ন : আপনিতো এর আগেও তৌকীর ভাই এর সিনেমা অজ্ঞাতনামায় অভিনয় করেছেন। সামনে আপনার কি কি নতুন কাজ আসছে? শাহেদ আলী : নতুন কাজের মধ্যে রয়েছে গিয়াস উদ্দিন সেলিমের স্বপ্নজাল। আঁকা রেজা গালিবের নির্দেশনায় কালের পুতুল। শাহরিয়ার নাজিম জয়ের অর্পিতা। সৈকত নাসির পাষাণ। অনন্য মামুনের চালবাজ। এগুলো মুক্তির অপেক্ষায় আছে। প্রশ্ন : একটা সময় ছিলো যখন কোন সিনেমা মুক্তি পেত পরিবারের সবাই মিলে হলে যেতো। কিন্তু মাঝে আমাদের বাংলা চলচ্চিত্রের কিছুটা খারাপ সময় গেছে। হল বিমুখ হয়ে পড়েছিলো দর্শক। আশার কথা হচ্ছে ইদানিং আগের সেই দৃশ্য আমরা দেখতে পাচ্ছি। অনেক ভালো সিনেমা মুক্তি পাচ্ছে। দর্শকও হলে যাচ্ছে সিনেমা দেখতে। বিষয়টিকে আপনি কেমন দেখছেন? শাহেদ আলী : দর্শককে সিনেমা হলে টেনে নেওয়ার জন্য চলচ্চিত্র হচ্ছে একটি প্রধান বিষয়। দর্শক আসলে আমদিত হতে চায়। তারা সব সময়ই ভালো সিনেমা চায়। তারা সিনেমা হলে ফিরতে চায়। কিন্তু ঠিক ঠাক সিনেমা হলে সিনেমাটা না নেওয়ার করণে তারা হয়তো পরিবারকে নিয়ে হলে যাতে চান না। ভালো সিনেমা হলে পরিবর্তন আসবে। হ্যাঁ, সম্প্রতি বেশ কিছু সিনেমা ভালো হয়েছে। এভাবে যদি ধারাবাহিক ভাবে ভালো সিনেমা আসতে থাকে আমার ধারণা দর্শকরা আবারও হল মুখি হবে। প্রশ্ন : চলচ্চিত্রের পাশাপাশি আপনি ছোটপর্দা ও মাঞ্চে নিয়মিত কাজ করছেন। সেই সম্পর্কে একটু জানতে চাই। শাহেদ আলী : ছোটপর্দায় বেশকিছু নতুন কাজ করছি। কিছু কাজ শেষও হয়েছে। এর মধ্যে আমিরুল ইসলাম অরুণের একটি সিঙ্গেল নাটকে কাজ করলাম। ধারাবাহিক করলাম সুমন আনোয়ারের। এছাড়া যুবরাজ খানের ব-তে বন্ধু, সৌম্য নজরুলের পরিচালনায় মহল্লা বিডি ডট কম, আকরাম খান পরিচালিত হাউজ ওয়াইভস সহ বেশ কয়েকটিতে কাজ করছি। আর মঞ্চ নিয়ে যদি বলি- আগে যেভাবে সব কিছু বাদ দিয়ে থিয়েটারে গিয়ে পড়ে থাকতাম সেটা করা হচ্ছে না। ইচ্ছা থাকা সত্যেও হয়ে ওঠে না। তবে যখন শো থাকে বা গুরুত্বপূর্ণ কোন অনুষ্ঠান চলে তখন সর্বাত্ত্বক চেষ্টা থাকে যাওয়ার। প্রশ্ন : মিডিয়াতে আপনার শুরু কি থিয়েটার থেকে? শাহেদ আলী : শুরুর দিকে থিয়েটারে কাজ করেছি। তবে কিছুদিন আমি সহকারি পরিচালক হিসেবে কাজ করেছিলাম। তখন কিছু চলচ্চিত্রেও সহকারি পরিচালক হিসেবে কাজ করেছি। এর মধ্যে মনপুরা, মনের মানুষ অন্যতম। পরবর্তি সময়ে ২০১০ থেকে আমি নিয়মিত অভিনয় শুরু করি। এর আগে বিচ্ছিন্নভাবে অভিনয় করেছি। খুব প্রফেশনালি ছিলোনা সেগুলো। ওই ভাবে যদি বলি তবে শুরু হয়েছিলো সহকারি পরিচালক হিসেবে। প্রশ্ন : কি ধরণের চরিত্রে কাজ করতে আপনি বেশি পছন্দ করেন? শাহেদ আলী : আসলে আমি সব ধরণের চরিত্রে অভিনয় করতে চাই। পছন্দ করি বললে বলবো যে- যেকোন ধরণে চরিত্রে অভিনয় করতে চাই। ব্যাক্তিগত জীবনে আমি যা না সেই রকম কোন চরিত্রে কাজ করতে আগ্রহ পাই। প্রশ্ন : আপনার ব্যস্ততার মাঝে আমাদের সময় দিয়েছেন সে জন্য আবারও ধন্যবাদ। আপনার অভিনিত মুক্তি পাওয়া নতুন সিনেমা হালদার জন্য শুভ কামনা। শাহেদ আলী : ধন্যবাদ। আমারও খুব ভালো লাগলো আপনাদের সঙ্গে কথা বলে। পাঠকদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই- আপনারা হালদাএবং এধরণের যে যে সিনেমা আসছে বা মুক্তি পেয়েছে সবগুলো সিনেমা হলে গিয়ে দেখবেন। যতবেশি প্রেক্ষাগৃহ পূর্ণ থাকবে ততবেশি ভালো সিনেমা আসবে। এমএ/১১:২০/০৩ ডিসেম্বর
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2iIIPX0
December 04, 2017 at 05:41AM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন