নিউইয়র্ক, ১৩ ডিসেম্বর- নিউইয়র্কে আকায়েদ উল্লাহ্ সন্ত্রাসবাদী কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে প্রবাসী বাংলাদেশীরা বিক্ষোভে ফেটে উঠেছেন। ১২ ডিসেম্বর মঙ্গলবারও দ্বিতীয় দিনের মত জ্যাকসন হাইটস, ব্রঙ্কস এবং ব্রুকলীনের বিভিন্ন স্থানে ৪টি মানববন্ধন-র্যালি অনুষ্ঠিত হয়। সবকটিতেই আকায়েদ উল্লাহকে বাংলাদেশী হিসেবে চিহ্নিত না করে শুধুমাত্র সন্ত্রাসী হিসেবে বিবেচনা করে তাকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়। নিউইয়র্ক অঞ্চলের প্রবাসীদের সবচেয়ে বড় সংগঠন বাংলাদেশ সোসাইটির ব্যানারে র্যালি এবং সংবাদ সম্মেন অনুষ্ঠিত হয় জ্যাকসন হাইটসের বেলাজিনো পার্টি হলে। সংগঠনের সভাপতি কামাল আহমেদের সভাপতিত্বে এ সংবাদ সম্মেলন পরিচালনা করেন সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন সিদ্দিক। নেতৃবৃন্দের মধ্যে ছিলেন আবুল খায়ের খালেক, মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী, রিজু মোহাম্মদ, মনিকা রায় প্রমুখ। প্রবাসের বিশিষ্টজনেরাও উপস্থিত থেকে আকায়েদ উল্লাহ্র প্রতি ধিক্কার জানান। এ ধরনের জঙ্গি তৎপরতাকে মানবতার শত্রু হিসেবে অভিহিত করে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশী-আমেরিকানরা কখনো জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসকে প্রশ্রয় দেয়নি, দেবেও না। উল্লেখ্য, ১১ ডিসেম্বর সকাল ৭টা ২০ মিনিটে নিউইয়র্কের ব্যস্ততম টাইমস স্কোয়ার সাবওয়ে থেকে সুরঙ্গপথে পোর্ট অথরিটি বাস টার্মিনালে যাতায়াতের পথে আকায়েদ বহনকরা পাইপ বোমা বিস্ফোরিত হবার ঘটনার চার্জশিট প্রদান করা হয় ১২ ডিসেম্বর মঙ্গলবার। নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্য এটর্নী জেনারেল এবং ফেডারেল আদালতের এটর্নী জেনারেল পৃথক পৃথকভাবে আকায়েদ উল্লাহর বিরুদ্ধে চার্জশিট প্রদান করেন। তার বিরুদ্ধে ব্যাপক গণবিধ্বংসী অস্ত্র বহন, নীরিহ মানুষ হত্যা এবং আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসীদের সহযোগিতার অভিযোগ গঠন করা হয়। এগুলো প্রমাণিত হলে কমপক্ষে তাকে ২২ বছর কারাগারে থাকতে হবে বলেও আইনজীবীরা উল্লেখ করেছেন। চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের মূছাপুরের মুক্তিযোদ্ধা সানাউল্লাহর পুত্র আকায়েদ উল্লাহ বেড়ে উঠেন ঢাকার হাজারিবাগ এলাকায়। ২০১১ সালে অভিবাসন ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে আসার আগে ইসলামী ছাত্রশিবিরের ক্যাডার ছিলেন বলে তার ঘনিষ্ঠজনেরা এ সংবাদদাতাকে নিশ্চিত করেন। তবে নিউইয়র্কে বসবাসকালে জামাত-শিবিরের সমর্থক প্রবাসীদের দ্বারা গঠিত মুসলিম উম্মাহ অথবা এ ধরনের অন্য কোন সংগঠনের কর্মকান্ডে এই আকায়েদকে কখনো দেখা যায়নি বলেও দাবি করেন অনেকে। নিউইয়র্ক সিটির ব্রুকলীনে বসবাসকালেই দুবছর আগে তার বাবা ইন্তেকাল করেন। এরপর বড়ভাই আহসানউল্লাহ এবং ছোট বোন ও মায়ের সাথে একই বাসায় দিনাতিপাত করতেন আকায়েদ। বাংলাদেশী মালিকানাধীন একটি কন্সট্রাকশন কোম্পানীতে ইলেকট্রিক্যাল কাজকর্ম করতেন। ২০১৪ সাল থেকেই সে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী নেটওয়ার্কের মতবাদে বিশ্বাসী হয়ে অনলাইনেই বোমা তৈরীর শিক্ষা গ্রহণ করে বলে তদন্ত কর্মকর্তারা চার্জশিটে উল্লেখ করেছেন। ব্রুকলীনের বাসায় অভিযান চালিয়ে বোমা তৈরীর অনেক সরঞ্জামও উদ্ধার করেছে এফবিআই এবং পুলিশ। আকায়েদের সহযোগী হিসেবে কারো অস্তিত্ব উদঘাটিত হয়নি বলেও পুলিশ উল্লেখ করেছে। আকায়েদের প্রতি ধিক্কার জানিয়ে ১২ ডিসেম্বর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ব্রঙ্কসে বাংলাদেশী অধ্যুষিত স্টার্লিং-বাংলাবাজার এভিনিউ এলাকায় আরেকটি সমাবেশ হয়। বাংলাদেশী-আমেরিকান কমিউনিটি কাউন্সিল এ বিক্ষোভ-সমাবেশের আয়োজন করে। বাংলাদেশী-আমেরিকান কমিউনিটি কাউন্সিলর প্রেসিডেন্ট বিশিষ্ট আইনজীবী মোহাম্মদ এন মজুমদারের সভাপতিত্বে সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন হোস্ট সংগঠনের সেক্রেটারী নজরুল হক, ব্রঙ্কস বাংলাদেশ এসোসিয়েশনের সভাপতি এন ইসলাম মামুন, কমিউনিটি এ্যাক্টিভিস্ট সারোয়ার জাহান লাহীন, রেজা আবদুল্লাহ, আকসাদ আলী বাবুল, জাকির চৌধুরী, মোঃ মতিন সরকার, এশিয়ান ড্রাইভিং স্কুলের সিইও সাইদুর রহমান লিংকন প্রমুখ। প্রচন্ড ক্ষোভের সাথে মোহাম্মদ এন মজুমদার উল্লেখ করে বলেন, আকায়েদ বাংলাদেশি নামের কলঙ্ক। আমরা তাকে ঘৃণা করি। এ ন্যাক্কারজন ঘটনায় বাংলাদেশীদের মান-সম্মান ধূলিস্মাৎ হয়েছে। বাংলাদেশিদের মুখ পুড়েছে কুলঙ্গার আকায়েদের কারণে। হুমকির মুখে পড়েছে প্রবাসী বাঙালিদের জীবন-জীবিকা। নজরুল হক বলেন, গোটা কমিউনিটিতে প্রভাব পড়েছে অপ্রত্যাশিত এ ঘটনায়। বাংলাদেশী কমিউনিটি এ ধরনের ঘৃন্য কাজকে কোনভাবেই মেনে নিতে পারে না। অপর বক্তারা বলেন, এদেশ আমাদের সকলের। এ দেশকে নিরাপদ রাখা আমাদের সকলেরই দায়িত্ব। বক্তারা সস্ত্রাসীদের যুক্তরাষ্ট্র ছাড়ার পরামর্শ দিয়ে বলেন, সস্ত্রাসীর জায়গা যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে হবে না। এ ধরণের ন্যাক্কারজন ঘটনার পুনঃরাবৃত্তি দেখতে চান না বলেও তারা উল্লেখ করেন। ১১ ডিসেম্বর সোমবার রাতে জ্যাকসন হাইটসের খাবার বাড়ি চত্বরের র্যালিতে সর্বস্তরের প্রবাসীদের মানববন্ধন থেকে বক্তারা অভিভাবকদের সন্তানদের বেশি করে সময় দেয়ার পরামর্শ দিয়ে বলেন, সন্তানেরা কি করছে, কখন কার সঙ্গে মিশছে, এগুলো খেয়াল রাখতে হবে মা-বাবাদের।এব্যাপারে সচেতন হতে হবে সকলকে। কোথাও অসঙ্গতিপূর্ণ কিছু দেখলে সংশ্লিষ্টদের অবহিত করারও পরামর্শ দেন তারা। আকায়েদের আচরণের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি প্রদান করেছেন নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি জাকারিয়া চৌধুরী এবং ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নূরল আলম বাবু, যুক্তরাষ্ট্র সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের সভাপতি রাশেদ আহমেদ এবং সেক্রেটারি রেজাউল বারি, যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু প্রজন্মলীগের সভাপতি আলহাজ্ব আব্দুল কাদের মিয়া এবং সেক্রেটারি এটি এম রানা, আমেরিকা-বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের সভাপতি ও মুক্তিযোদ্ধা লাবলু আনসার এবং ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি রিজু মোহাম্মদ। বিবৃতিসমূহে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশ জাতি ও দেশ হিসেবে সন্ত্রাসের বিষয়ে জিরো টলারেন্সে বিশ্বাসী। সন্ত্রাসকে ঘৃনাভরে প্রত্যাখান করে। একইভাবে এই প্রবাসেও তারা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সর্বদা সোচ্চার। একজন আকায়েদের আচরণকে কোনভাবেই বাংলাদেশী-আমেরিকান জনগোষ্ঠির ওপর চাপিয়ে দেয়া চলবে না। আত্মঘাতি আকায়েদ উল্লাহ বাংলাদেশি অভিবাসী হলেও সে কিছুতেই বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করে না। সূত্র: এনআরবি নিউজ এফ/২৩:৫০/১৩ সেপ্টেম্বর
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2o4vGJO
December 14, 2017 at 05:52AM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন