সুরমা টাইমস ডেস্ক:: যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে হাজিরা দিয়েছেন নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটন পোর্ট অথোরিটি বাস টার্মিনালে বোমা বিস্ফোরণ ঘটনায় অভিযুক্ত বাংলাদেশি আকায়েদ উল্লাহ। তবে সশরীরে নয়, হাসপাতাল থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আদালতে হাজিরা দেন তিনি।
স্থানীয় সময় বুধবার বিকালে প্রথমবারের মতো আদালতে কথা বলেন, আকায়েদ। অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি থাকায় মার্কিন ম্যাজিস্ট্রেট জাজ ক্যাথেরিন এইচ পার্কার তাকে জামিন অযোগ্য আটকের নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে আগামী ১৩ই জানুয়ারি শুনানির দিন ধার্য করেছেন।
গত ১১ই ডিসেম্বর ম্যানহাটনের বাস টার্মিনালে বোমা হামলার চেষ্টা করেন আকায়েদ। বিস্ফোরণে তিনিসহ কয়েকজন আহত হন। এরপর সবাই হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। হাসপাতালের বিছানা থেকেই আদালতে অংশ নেন তিনি। জেলা জজ ক্যাথরিন পার্কার তাকে তার অধিকার পড়ে শোনান।
জবাবে মাথা নেড়ে আকায়েদ বুঝিয়ে দেন তিনি বুঝতে পেরেছেন।
তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে তিনি জজকে দেখতে পারছেন কী না। তিনি জবাবে বলেন ‘হ্যা আমি পাচ্ছি’। তবে কোনো শপথ নেননি আকায়েদ। আদালতে হাজিরার সময় আইনজীবীদের জানানো হয়, যে সে কোনো জামিন পাবে না। তার আইনজীবীও সেটা মেনে নেন। আদালত পাবলিক ডিফেন্ডার এমি গ্যালিশিওকে আকায়েদের অ্যাটর্নি নিয়োগ দেন। কারণ আকায়েদের অর্থনৈতিক সামর্থ্য নেই।
এদিকে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি দপ্তরের মন্ত্রী কির্সেটন এম নিলসনের কাছে আকায়েদের তথ্য চেয়ে এক চিঠিতে অনুরোধ করেছেন সিনেটের জুডিশিয়ারি কমিটির চেয়ারম্যান চাক গ্রাসলি।
গ্রাসলি বলেছেন, আকায়েদের কোনো অপরাধের রেকর্ড আছে কিনা। কিংবা কোনো সন্ত্রাসী সন্দেহভাজন তালিকায় তার নাম ছিল কী না।
ডিভি লটারি পাওয়া চাচার সুবাদেই যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসের সুযোগ পেয়েছিল নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটনে বাস টার্মিনালে সোমবারের বিস্ফোরণের ঘটনায় সন্দেহভাজন আকায়েদ উল্লাহ। প্রায় সাত বছর আগে অভিবাসী হিসেবে বাংলাদেশ থেকে আমেরিকায় গিয়ে স্থায়ী হয় ২৭ বছরের আকায়েদ। সে গ্রিন কার্ডধারী এবং যুক্তরাষ্ট্রের বৈধ নাগরিক।
গ্রাসলি বলেন, ‘কেউ লটারি জিতে কিংবা কারো আত্মীয়ের সুপারিশে আমরা বুঝতে পারি না সে কেমন। বিচার বিভাগ এই কেসসহ সবগুলোই খতিয়ে দেখবে। যারা যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষতি করতে চায় তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনবো আমরা। ’
এফবিআই-এর সহকারী পরিচালক উইলিয়াম সুইনি বলেন, আকায়েদ উল্লাহ বড় আকারের হামলার পরিকল্পনা থেকে সরে আসে। তার শরীরের সঙ্গে বাঁধা পাইপ বোমা দিয়েই বিস্ফোরণ ঘটাতে চায় সে।
তিনি বলেন, তার আগের সবার মতো আমাদের ধারণা সে নিজেও প্রযুক্তির মাধ্যমে সহিংস ভাবধারায় উদ্বুদ্ধ হয়েছিল। এমন ধারার আক্রমণগুলোর কোনো উদ্দেশ্য খুঁজে পাওয়া যায় না যতক্ষণ সেটা অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে মেলানো না হয়। আমরা এ জন্য স্থানীয়দের সহায়তা চাই।
সাত বছর আগে পরিবার ভিসায় বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে যান আকায়েদ। তার বিরুদ্ধে বোমা হামলার চেষ্টার অভিযোগ এনে মামলা করেছে পুলিশ। নিউ ইয়র্কের দক্ষিাণাঞ্চলের মার্কিন জেলা আদালতে তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। কেন এই হামলা?
পরিস্কার হয়নি পোর্ট অথোরিটিতে আকায়েদ উল্লাহ’র হামলার উদ্দেশ্য:-
আকায়েদ কেন এমন কাজ করলেন তা এখনো পরিষ্কার নয়। নিরীহ, কোনো রাজনৈতিক মতের সঙ্গে সম্পৃক্ততা না থাকা এক তরুণ কীভাবে উগ্রবাদী হলেন—বিশেষজ্ঞেরা এখন সেই প্রশ্ন নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন। তাঁর কোনো ব্যক্তিগত সংকট রয়েছে কি না, তাও খতিয়ে দেখছেন তাঁরা।
এদিকে ইসরায়েলি দৈনিক হারেৎস জানায়, জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতির প্রতিবাদ হিসেবে এই কাজ করেছেন আকায়েদ। যদিও পুলিশের কাছ থেকে এই দাবির সত্যতা মেলেনি। পুলিশকে আকায়েদ জানিয়েছেন, কাজটা তিনি একাই করেছেন। তবে এর পেছনে আইএসের প্রেরণা কাজ করেছে।
আইএসের কথা বললেও সংগঠনটির সঙ্গে তাঁর যোগাযোগের প্রমাণ পায়নি পুলিশ। হাসপাতালে চিকিত্সাধীন আকায়েদকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ এই সন্ত্রাসীর মনোচিত্রটি নির্মাণের চেষ্টা করছে।
আন্তর্জাতিক সন্ত্রাস নিয়ে কাজ করেন এমন বিশেষজ্ঞরা একমত যে কাজটি একদমই আনাড়ির মতো হয়েছে। যে বোমাটি আংশিক বিস্ফোরিত হয়, তা তিনি বানিয়েছিলেন ছোট পাইপে বিস্ফোরক, লোহা ও স্ক্রু ভরে। নিউ ইয়র্কের গভর্নর এন্ড্রু কুওমে বলেছেন, আজকাল যে কেউই ইন্টারনেটের সাহায্যে এমন বোমা বানাতে সক্ষম। আরো অনেক আকায়েদ উল্লাহ হয়তো আছেন, যাঁরা দৃষ্টি আকর্ষণের আশায় এমন সন্ত্রাসী পথ বেছে নিতে পারেন।
নিরাপত্তা প্রশ্নে কাজ করেন পিটার বার্গেন। তিনি সিএনএনকে মনে করিয়ে দিয়েছেন, ২০০১ সালে নিউ ইয়র্কের টুইন টাওয়ারে সন্ত্রাসী হামলার পর এ পর্যন্ত যে ১২টির মতো সফল সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে, তার প্রতিটির পেছনেই রয়েছে কোনো না কোনো অপেশাদার সন্ত্রাসী।
এর আগে ২০১১ সালের ১৭ই অক্টোবর বোমা হামলার ষড়যন্ত্রে যুক্ত থাকার অভিযোগে ফাঁদে ফেলে (স্টিং অপারেশন) নিউ ইয়র্ক থেকে গ্রেপ্তার করা হয় তরুণ কাজী রেজওয়ানুল আহসান নাফিসকে (২১)।
from Sylhet News | সুরমা টাইমস http://ift.tt/2CmcwSP
December 14, 2017 at 11:32PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন