মোঃ আবুল কাশেম, বিশ্বনাথ :: বাঙালির পরাধীনতার শৃঙ্খল মুক্তির দিন আজ। হাজার বছরের প্রতীক্ষা শেষে, বহু কাক্সিক্ষত সেই দিনটির দেখা মিলেছিল ইতিহাসের পাতায় রক্তিম আখরে লেখা এক সংগ্রামের শেষে, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ৯ মাস সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের পর ঢাকার ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৪৬ বছর আগে একাত্তরের এই দিনে বর্বর পাকিস্তানি বাহিনী হাতের অস্ত্র ফেলে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়েছিল বিজয়ী বীর বাঙালির সামনে। স্বাক্ষর করেছিল পরাজয়ের সনদে। পৃথিবীর মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন বাংলাদেশের।
যে অস্ত্র দিয়ে বর্বর পাকিস্তানি বাহিনী দীর্ঘ ৯ মাস ৩০ লাখ বাঙালিকে হত্যা করেছে, ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমহানি করেছে সেই অস্ত্র পায়ের কাছে নামিয়ে রেখে একরাশ হতাশা এবং অপমানের গ্লানি নিয়ে লড়াকু বাঙালির কাছে পরাজয় মেনে নিয়ে বাংলাদেশ ছাড়ে তারা। সেই থেকে ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস পালিত হয়ে আসছে। এবার জাতি ৪৭তম বিজয় দিবস উদযাপন করবে।
বিজয়ের দীর্ঘ সময় পর দেশের মাটিতে অনেক দেশবিরোধী যুদ্ধাপরাধীর বিচার হয়েছে, বাকিদের বিচার চলমান রয়েছে। শহীদের রক্তস্নাত পবিত্র মাটিতে অর্থনৈতিকভাবে অগ্রসরমান বাংলাদেশকে নিয়ে নতুন স্বপ্ন দেখেই আজ বিজয়ের ৪৬ বছর উদযাপন করতে যাচ্ছে গোটা জাতি। এবারের বিজয় দিবস পালিত হবে ভিন্ন প্রেক্ষাপটে। শোক আর রক্তের ঋণ শোধ করার গর্ব নিয়ে উজ্জীবিত জাতি দিবসটি পালন করবে অন্যরকম অনুভূতিতে। অফুরন্ত আত্মত্যাগ এবং রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই মহান বিজয়ের ৪৬ বছর পূর্ণ হবে আজ। সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন নিয়ে এক বুক রক্তের বিনিময়ে স্বাধীন হয়েছিল এ দেশ। বিজয়ের এ দিনে সবার অঙ্গীকার সুন্দর ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার। যেসব বৈষম্য থেকে বাংলাদেশের জš§ সেই বৈষম্যগুলো থেকে এ জাতি বেরিয়ে আসতে আবার দৃঢ় প্রত্যয় নেবে আজ।
সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে জনতার ঢল নামবে। শ্রদ্ধার সঙ্গে তারা শহীদের উদ্দেশে নিবেদন করবেন পুষ্পাঞ্জলি। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের সব প্রান্তের মানুষ অংশ নেবে বিজয়ের কর্মসূচিতে। বঙ্গবন্ধুর বজ -নিনাদ ভাষণ আর মুক্তিযুদ্ধের সময়ের জাগরণী গানে আকাশ-বাতাস হবে মুখরিত।
বিজয় দিবস সরকারি ছুটির দিন। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। রাজধানীসহ দেশের বড় বড় শহরের প্রধান সড়ক ও সড়ক দ্বীপে জাতীয় পতাকায় সজ্জিত করা হবে। রাতে গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনায় করা হবে আলোকসজ্জা। হাসপাতাল, কারাগার ও এতিমখানাগুলোতে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হবে। সংবাদপত্র বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করবে, বেতার ও টিভি চ্যানেলগুলো সম্প্রচার করবে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা।
১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ‘যার যা কিছু আছে’ তা নিয়েই স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানান। পরে ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে গ্রেফতার হওয়ার আগে বঙ্গবন্ধু আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে বাঙালিরা অস্ত্র হাতে পাকিস্তানি হানাদারদের বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। এই মুক্তিযুদ্ধে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, ভুটান, সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সাহায্য-সহযোগিতা করে। অবশেষে বাঙালি দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধ করে বুকের উষ্ণ রক্তে রাঙিয়ে অমানিশার কালরাতের বৃন্ত থেকে ছিনিয়ে আনে ফুটন্ত সকাল।
বিজয়ের এই ৪৬ বছর অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়েছে জাতি। কখনো সামনে এগিয়েছে, আবার পিছিয়ে গেছে নানা রাজনৈতিক টানাপড়েনে। তবুও হতোদ্যম হয়নি। বিলম্বে হলেও ইতিহাসের দায় মোচনের প্রচেষ্টায় অনেকটা এগিয়েছে দেশ। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার সম্পন্ন হয়েছে, চলছে একাত্তরের মানবতাবিরোধী-যুদ্ধাপরাধীদের বিচার। এ ছাড়া হার না মানা বাঙালি অর্থনৈতিক-সামাজিক এবং ক্রীড়াতেও উড়াচ্ছে বিজয় নিশান।
জাতীয় কর্মসূচি: যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান বিজয় দিবস-২০১৭ উদযাপনের লক্ষ্যে এবার জাতীয় পর্যায়ে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। ১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় প্রত্যুষে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসটির সূচনা হবে। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এরপর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর নেতৃত্বে উপস্থিত বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। বাংলাদেশে অবস্থিত বিদেশি কূটনীতিক, বাংলাদেশের সযুদ্ধে মিত্রবাহিনীর সদস্য হিসেবে অংশগ্রহণকারী ভারতীয় সেনাবাহিনীর আমন্ত্রিত সদস্য এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের জনগণ পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন।
সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে তেজগাঁও পুরনো বিমানবন্দরস্থ জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে সম্মিলিত বাহিনীর বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমভিত্তিক যান্ত্রিক বহর প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে। রাষ্ট্রপতি এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও সালাম গ্রহণ করবেন। প্রধানমন্ত্রীও এ কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন।
দিনটি হবে সরকারি ছুটির দিন। সব সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে এবং গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনাগুলো আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হবে। ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন শহরের প্রধান সড়ক ও সড়কদ্বীপগুলো জাতীয় পতাকা এবং অন্যান্য পতাকায় সজ্জিত করা হবে। ঢাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বিভিন্ন বাহিনীর বাদক দল বাদ্য বাজাবেন।
দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে এদিন সংবাদপত্রগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়াগুলো মাসব্যাপী মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালা প্রচার করবে। এ উপলক্ষে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, বাংলা একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, বাংলাদেশ শিশু একাডেমিসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক আলোচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শিশুদের চিত্রাঙ্কন, রচনা ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা এবং মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনের আয়োজন করবে।
এ ছাড়া মহানগর, জেলা ও উপজেলায় বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং শহীদ পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশ ডাক বিভাগ স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করবে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে দেশের শান্তি ও অগ্রগতি কামনা করে বিশেষ দোয়া ও উপাসনার আয়োজন করা হবে এবং এতিমখানা, বৃদ্ধাশ্রম, হাসপাতাল, জেলখানা, সরকারি শিশু সদনসহ অনুরূপ প্রতিষ্ঠানগুলোয় উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হবে। দেশের সব শিশুপার্ক ও জাদুঘর বিনা টিকিটে উন্মুক্ত রাখা হবে।
জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে এবং বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসেও দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে অনুরূপ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে।
from সিলেট – দ্যা গ্লোবাল নিউজ ২৪ http://ift.tt/2ClAGw2
December 16, 2017 at 11:37AM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Click to see the code!
To insert emoticon you must added at least one space before the code.