নিজস্ব প্রতিনিধি:: হবিগঞ্জ জেলার বাহুবলের মিরপুরে সরকারি অনুষ্ঠানে সন্ত্রাসী হামলার শিকার এমপি কেয়া চৌধুরী সুস্থ হয়ে তৃণমূল জনতার কাছে ফিরেছেন। এ উপলক্ষে বাহুবল সন্ত্রাস-দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির উদ্যোগে শুক্রবার (০১ ডিসেম্বর) দুপুরে অনুষ্ঠিত এক শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করেছেন এমপি কেয়া চৌধুরী।
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের শায়েস্তাগঞ্জ নতুন ব্রিজ গোল চত্তরে পথ সভার মাধ্যমে এ শোভাযাত্রা শুরু হয়। হবিগঞ্জ থেকে নতুন ব্রিজ এসে পৌঁছালে এমপি কেয়া চৌধুরীকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান, বীর মুক্তিযোদ্ধা রাজিয়া খাতুন, আব্দুল মন্নান মেম্বার, আব্দুর রকিব মাস্টারসহ স্থানীয় আওয়ামী পরিবারের তৃণমূল নেতাকর্মী।
তাৎক্ষণিক পথসভায় বক্তব্য রাখেন- এমপি কেয়া চৌধুরী। এরইমধ্যে বাহুবল থেকে দেড়শতাধিক মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার, লাইটেস ও নোহা গাড়ী করে শত শত নেতাকর্মী নতুন ব্রিজ এসে উপস্থিত হন।
বাহুবল সন্ত্রাস-দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির উদ্যোগে এমপি কেয়া চৌধুরীর উপস্থিতিতে এ গাড়ী বহর নিয়ে শোভাযাত্রাটি প্রথমে মিরপুর বাজার (চৌমুহনী) পৌঁছে পথ সভা করে। পর্যায়ক্রমে বাহুবলের নতুন বাজার, রশিদপুর বাজার, ডুবাঐ বাজার, পুটিজুরী বাজার,গাংধার বাজার, স্নানঘাট বাজার, ফতেহপুর বাজার, চলিততলা বাজার, বাহুবল বাজার, নন্দনপুর বাজার, কঠিয়াদি বাজারে গিয়ে এ শোভাযাত্রার সমাপ্তি ঘটে। প্রত্যেকটি পয়েন্টে অনুষ্ঠিত সভায় হাজার হাজার তৃণমূল জনতার সমাগম হয়েছে।
বাহুবল সন্ত্রাস-দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির আহবায়ক উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ডাঃ আবুল হোসেনের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আব্দুল মোছাব্বির শাহীনের সঞ্চালনায় এসব সভায় প্রধান অতিথি’র বক্তব্যে এমপি কেয়া চৌধুরী বলেন- আমি বাহুবলেন সন্তান। জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে এমপি নির্বাচিত করে মাঠে এসে উন্নয়ন করতে বলেন। তাই আমি বিশেষ করে বাহুবল-নবীগঞ্জের স্থানে স্থানে উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করছি। নেত্রীর কাছ থেকে যে সকল বরাদ্দ নিয়ে আসছি, তা ফেসবুক ও গণমাধ্যমে প্রকাশ হচ্ছে। এসব উন্নয়ন করার পূর্বে আমি মাঠে গিয়ে সবার সাথে কথা বলছি। পরে বরাদ্দ সাপেক্ষে তৃণমূলের কল্যাণে উন্নয়ন কাজ হচ্ছে।
তিনি বলেন- এসব দেখে কুচক্রীমহলের সহ্য হচ্ছে না। আমি উন্নয়ন করছি। একটি চক্র জুয়া ও পাহাড় কেটে অবৈধ পন্থায় বালু ব্যবসা করে লাখ লাখ হাতিয়ে নিচ্ছে। তারা মানুষের ভাল চায় না। তাই জনগণও তাদেরকে চায় না। জনগণ চায় উন্নয়ন। আমি এ কাজটি করছি।
আমি শেখ হাসিনা সরকারের কাছ থেকে বরাদ্দ এনে ১০ নভেম্বর মিরপুরের বসবাসরত বেদে সম্প্রদায়ের ২৮ জনের মাঝে আর্থিক অনুদান বিতরণ করতে গিয়েছিলাম। এ সময় চক্রটি আমার ওপর সন্ত্রাসী হামলা করেছে। আপনাদের দোয়ায় আমি সুস্থ হয়েছি।
এমপি কেয়া চৌধুরী বলেন- হামলাকারীরা জানেনা, তাদের চেয়ে বড় শক্তি তৃণমূল জনগণ। আমি সুস্থ হয়ে ফিরে এসেছি। হাজার হাজার জনতা আমাকে স্বাগত জানাচ্ছে। আমার পিতা মরহুম বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডেন্ট মানিক চৌধুরী আমাকে এতিম করে যাননি। বাহুবলে আমার পাশে হাজার হাজার অভিভাবক রয়েছেন। তারাই আমার শক্তি। আমি তৃণমূল জনগণের এ ভালবাসা কোন দিন ভুলতে পারব না। আগামীতে কোন সুযোগ তৈরী হলে, আমি আরও ব্যাপকভাবে উন্নয়ন করার চেষ্টা কবর। তিনি বলেন, আমি জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের সৈনিক। জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমি উন্নয়ন কাজ করে যাচ্ছি। কাজেই আমাকে ভয় বা আমার ওপর সন্ত্রাসী হামলা করে লাভ হবে না, তৃণমূল জনতাকে নিয়ে মাঠে আছি। আজীবন জনগণের পাশে থাকব। পরিশেষে তিনি বলেন, আওয়ামীলীগে কোন সন্ত্রাসী ও জুয়াড়ির স্থান নেই।
এতে বক্তব্য রাখেন, বাহুবল উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি আসকার আলী, বীর মুক্তিযোদ্ধা নুর মিয়া, শ্রমিকলীগের সভাপতি লামাতাসী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান চৌধুরী টেনু, উপজেলা যুবলীগ আহবায়ক অলিউর রহমান অলি, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ফারুকুর রশিদ, মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের শামীমুর রহমান, ছাত্রলীগ নেতা আলাউদ্দিন, সৈয়দ মশিউর রহমান, আওয়ামীলীগ নেতা সাবাজ মিয়া, পারুল মিয়া, সাহিত্যিক আব্দুল কাদির চৌধুরী বাবুল, নিরাপদ সড়ক চাই জেলা কমিটির সভাপতি মামুনুর রশিদ মামুন, রাহেলা মেম্বার, মেম্বার পারভীন আক্তার প্রমুখ।
উল্লেখ্য, ১০ নভেম্বর শুক্রবার বিকেলে উপজেলার মিরপুরে বেদে পল্লীতে সরকারী চেক বিতরণ করতে যান এমপি কেয়া চৌধুরী। এ সময় নবনির্বাচিত উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও যুবলীগ নেতা তারা মিয়ার মার্কেটের ম্যানেজার জসিম উদ্দিন অঙ্গভঙ্গিভাবে ছবি তুলছিল। এ নিয়ে এমপি কেয়া চৌধুরীর সমর্থকদের সাথে তার কথা কাটাকাটি হয়। পরবর্তীতে এ নিয়ে প্রশাসনের উপস্থিতিতে এমপি কেয়া চৌধুরীর ওপর তারা মিয়া ও জেলা পরিষদের সদস্য আলাউর রহমান সাহেদসহ তাদের সমর্থকরা হামলা চালায়।
এ সময় হামলার শিকার হন এমপি কেয়া চৌধুরী, মহিলা ইউপি সদস্য পারভীন আক্তার, সাবেক ইউপি সদস্য রাহিলা আক্তারসহ আরো কয়েকজন।
ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশের পাশাপাশি শ্রীমঙ্গল থেকে র্যাব-৯ এর একদল সদস্য ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি শান্ত করেন। পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে এমপি কেয়া চৌধুরী সেখানে স্থানীয়দের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দেন।
বক্তব্য চলকালে হঠাৎ তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়েন। তাকে প্রথমে বাহুবল ও পরে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সিলেট নেয়ার পর এমপি কেয়া চৌধুরীকে অজ্ঞান অবস্থায় ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাকে হাসপাতালের আইসিইউতে রাখা হয়েছিল। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা নেওয়া হয়।
অবশেষে বিচারের দাবিতে ১৮ নভেম্বর রাতে একটি মামলা দায়ের করেন উপজেলার লামাতাসী ইউপি’র ১নং (সাধারণ ওয়ার্ড ১, ২ ও ৩) সংরক্ষিত ওয়ার্ডের নারী সদস্য পারভীন আক্তার। মামলায় নবনির্বাচিত বাহুবল উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ তারা মিয়া ও হবিগঞ্জ জেলা পরিষদ সদস্য আলাউর রহমান সাহেদসহ ৩ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরো ১৪/১৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে।
অপরদিকে এমপি কেয়া চৌধুরীর উপর হামলাকারীদের গ্রেফতার দাবিতে উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে ৫ ঘন্টা অবস্থান ধর্মঘট কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৬ নভেম্বর) সকাল থেকে সন্ত্রাস-দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির উদ্যোগে উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গনে অনুষ্ঠিত ধর্মঘট শুরু হয়। চলে বিকাল পর্যন্ত। এ ধর্মঘট থেকে ২৬ নভেম্বর ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধের কর্মসূচি ঘোষণা করা হলে, তা শান্তিপূর্ণভাবে পালিত হয়।
এ ঘটনায় ১৬ দিন অতিবাহিত হলেও ঘটনার সাথে জড়িত তারা মিয়া ও আলাউর রহমান সাহেদকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। এ নিয়ে তৃণমূল মানুষের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে বাহুবল মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) মোঃ মাসুক আলী বলেন, একটি মামলা দায়ের হয়েছে। পুলিশ গুরুত্বসহকারে মামলাটি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে।
from Sylhet News | সুরমা টাইমস http://ift.tt/2nlLYNZ
December 02, 2017 at 01:43AM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন