সুরমা টাইমস ডেস্ক :: একটি হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে সিলেটে জাতীয় পার্টিতে তোলপাড় চলছে। শীর্ষ নেতৃবৃন্দ থেকে শুরু করে মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে বিভক্তি। ঘটনাকে কেন্দ্র করে চলছে কাদা ছোড়াছুড়ি। তবে প্রশ্ন সবার- সিলেটে তাজের সমাবেশে হামলা চালিয়েছে কারা? এ ঘটনায় সরাসরি তাজ রহমানের পক্ষ থেকে কোনো পক্ষকে দোষারোপ না করলেও একপক্ষ অপরপক্ষকে ঘায়েল করার রাজনীতিতে মেতে উঠেছেন। সামনে জাতীয় নির্বাচন। ভাগ-বাটোয়ারার এমপি হতে পারবেন জাতীয় পার্টির নেতারা।
এ কারণে আগে থেকেই শুরু হয়েছে মুল্লযুদ্ধ। হামলার ঘটনা গত শুক্রবার বিকেলে। এ দিন সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির হলরুমে সিলেট জেলা ও মহানগর শ্রমিক পার্টির উদ্যোগে মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়েছিল। এ সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন- দলের কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সিলেটের আহবায়ক এটিইউ তাজ রহমান।
বিকালে অনুষ্ঠান শুরু হলে জাতীয় পার্টির একটি গ্রুপ হঠাৎ করে হামলা চালায় অনুষ্ঠানস্থলে। মহানগর ছাত্র সমাজের একটি অংশের নেতারা অনুষ্ঠানস্থলে ঢুকে হামলা শুরু। আকস্মিক এ হামলায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকা নেতাকর্মীরা হতভম্ব হয়ে পড়েন। ছাত্র সমাজের নেতারা হামলাকালে ভাঙচুর শুরু করে। পাশাপাশি তারা মঞ্চের ব্যানারও ছিনিয়ে নেয়। এ সময় অনুষ্ঠানের আয়োজকরা পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তুললে শুরু হয় সংঘর্ষ। উভয়পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় উভয়পক্ষের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হন। হামলার ঘটনাটি ছড়িয়ে পড়েছিল জেলা পরিষদের সামন পর্যন্ত। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে। ঘটনায় আহতরা সিলেটের বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিকে চিকিৎসা নিয়েছেন।
এদিকে- এ ঘটনার পর সিলেট জেলা জাতীয় পার্টিতে তোলপাড় চলছে। এ ঘটনার সময় ধারণ করা একটি ভিডিও ইতিমধ্যে সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ওই ভিডিওতে অনুষ্ঠানস্থলে সংঘর্ষের দৃশ্য সহ ব্যানার ছিনিয়ে নেয়ার দৃশ্য রয়েছে। এই ভিডিও নিয়ে তোলপাড় হচ্ছে সিলেটে। তবে- ভিডিওতে হামলাকারী কারা তাদের শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। সিলেটে জাতীয় পার্টি এখন তিন ধারায় বিভক্ত। এক ধারার নেতৃত্বে রয়েছেন কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য ও জেলার আহ্বায়ক তাজ রহমান, অপর ধারায় জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও হুইপ সেলিম উদ্দিন এবং নতুন একটি গ্রুপের নেতৃত্বে রয়েছেন জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও মহানগরের আহ্বায়ক ইয়াহ্হিয়া চৌধুরী এহিয়া।
হামলায় আক্রান্ত হওয়া এটিইউ তাজ রহমানের অনুসারীরা দাবি করেছেন- সিলেটে শ্রমিক পার্টির সমাবেশে অনুষ্ঠানে বিরোধীরাই হামলা করেছে। তারা এজন্য সেলিম উদ্দিন ও ইয়াহ্হিয়া অংশকে অভিযুক্ত করেন। কিন্তু সেলিম উদ্দিন ও ইয়াহ্হিয়া চৌধুরীর সম্পর্কও সাপে-নেউলে। তারা এক হয়ে এই হামলা চালিয়েছে তেমনটি বিশ্বাস করতে চান না তারা। তবে- মহানগর ছাত্র সমাজের একাংশ এ হামলার জন্য দায়ী। এই অংশটি কোন নেতার শেল্টারে রয়েছে সেটি এখনো পরিষ্কার হয়নি।
জাতীয় পার্টির কেউ কেউ বলছেন- ওই অংশটি হচ্ছে এমপি ইয়াহ্হিয়া চৌধুরীর সমর্থিত। তবে- জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় যুগ্ম-মহাসচিব ও সিলেট মহানগরের আহ্বায়ক ইয়াহ্ইয়া চৌধুরী এহিয়া এমপি বলেন, সিলেটে এ ধরনের কোনো কর্মসূচি ছিল বলে আমার জানা নেই। আর কর্মসূচিতে হামলা ও লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনা যদি ঘটে থাকে তা অবশ্যই দুঃখজনক। সঠিকভাবে সবাইকে নিয়ে কোনো কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হলে এ রকম অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা হয়তো ঘটত না। হামলার ঘটনায় তার অংশের কেউ জড়িত নয় বলে জানান তিনি।
আর সেলিম উদ্দিনের দাবি- তিনি অনুষ্ঠানে দাওয়াতি ছিলেন। কিন্তু অন্য অনুষ্ঠানে ব্যস্ত থাকায় তিনি যেতে পারেননি। আর ঘটনার দিন তার অংশের লোকজনকে নিয়ে তিনি ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সিলেটে সমাবেশ ও মিছিল করেন।
এদিকে- ঘটনার দিন শুক্রবারের একটি যোগদান অনুষ্ঠানের নিউজ গতকাল পাঠিয়েছেন জাতীয় পার্টি নেতা চেয়ারম্যান ওসমান আলী। ওই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সিলেট জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক এটিইউ তাজ রহমান।
নগরীর সুরমা মার্কেটের অনুষ্ঠানে এটিইউ তাজ রহমানের হাতে ফুলের তোড়া দিয়ে শাহজাহান সিরাজী, সেলিম আহমদ, সাদিকুর রহমান, মোছা. দীনা, শফিক মিয়া, তরিক মিয়া, নজরুল ইসলাম, আবদুল মন্নান, হেলাল মিয়া, ফরিদ মিয়া, আবদুল আজিজ, ফয়সল মিয়া, আবদুর রহিমসহ অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী জাতীয় পার্টিতে যোগদান করেন।
জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য ও সিলেট জেলার সদস্য সচিব মো. উছমান আলী চেয়ারম্যানের পরিচালনায় যোগদান অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন- জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক এমপি মকসুদ ইবনে আজিজ লামা, জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় সদস্য সাইফুদ্দীন খালেদ, জেলা জাতীয় পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক এমএ মালিক খান, আলতাফুর রহমান আলতাফ, আবদুর রহমান বারাকাত, জাপা নেতা আরশ আলী বাবুল, মো. দৌলা মিয়া, জেলা জাতীয় যুব সংহতির নেতা আবুল কালাম আজাদ, সেলিম আহমদ, মো. শাহজাহান, আবদুস শহীদ, ফখরু মিয়া, হাজী শিতাব আলী, লিয়াকত আলী মেম্বার, তাজ উদ্দিন বাবুল প্রমুখ।
from Sylhet News | সুরমা টাইমস http://ift.tt/2yVggrD
December 19, 2017 at 01:18PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন