কলকাতা, ২০ ডিসেম্বর- হাতে একটা চাঁদির চুরি ছিল। অনেক কষ্ট করে গড়ানো। ভোরবেলা উঠে কাগজ কুড়োতে গিয়ে এক দিন এক ছিনতাইবাজ সেটা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। তাকে বাধা দিতে গেলে সে গলায় খুর মেরে পালিয়ে যায়। তোপসিয়া থানায় অভিযোগ করতে গেলে সেখানে অভিযোগ নেওয়া হয়নি। পরে বেনিয়াপুকুর থানায় অভিযোগ জানানো হয়েছে, এখন ছেলেটা আটক। আবার কাজ করে এসে স্নান করতে গিয়ে নানা ভাবে অপমানিত, লাঞ্ছিত হতে হয়। কাজের সময় লোকেরা চোর বলে অপবাদ দেয়। সন্দেহ করে, বলেন কাগজকুড়ানি মনোহরা বিবি। সমাজ স্বচ্ছতার পথে হাঁটছে। নানা উপায়ে পরিবেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার উপর জোর দেওয়া হচ্ছে। আর এই সমাজের যাঁরা পরিচ্ছন্নতার প্রধান ভিত তাঁরা হলেন প্রত্যেক এলাকার কাগজকুড়ানি। অথচ তাঁদেরই কাজের আইনত কোনো স্বীকৃতি নেই। নেই তাঁদের কোনো রকম নিরাপত্তা। স্বাস্থ্য ক্ষেত্রেও তাঁদের জন্য কোনো রকম সাহায্যের ব্যবস্থা নেই। বাসস্থান, বাথরুম, শিক্ষাব্যবস্থা, স্বাস্থ্য, জলের সুবিধা, শিশু ও নারীদের নিরাপত্তার দাবি, পাশাপাশি ১০০ দিনের কাজের দাবি, কাজের স্বীকৃতি হিসেবে পরিচয়পত্রের দাবি, সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের অধীনে আসার দাবিতে সরকারের কাছে আবেদনপত্র জমা দেওয়ার লক্ষ্যে মঙ্গলবার পথে নামে কাগজকুড়ানিদের সমিতি, দ্য অ্যাসোসিয়েশন অফ র্যাগ পিকার্স অফ ক্যালকাটা। তাঁদের অন্যতম দাবি, সকলের নাম বিপিএল তালিকায় তুলতে হবে। এত দিন জনগণনায় তাঁদের নাম তোলা হত না, এ বার থেকে যেন তাঁদেরও গোনা হয়। স্থায়ী বাসস্থানের ঠিকানা না থাকায় বিভিন্ন কার্ড করতে এদের সমস্যায় পড়তে হয়। কাগজকুড়ানিদের এই আভিযানে সহযোগিতা করছে তিলজলা শেড নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। সংস্থার অন্যতম প্রধান আয়েসা বিবি বলেন, এঁরা কিন্তু স্বচ্ছ ভারত অভিযানের বিভিন্ন পরিকল্পনায় নেটওয়ার্কিং-এ যোগদান করে। তিনি বলেন, ১৭ বছরের সংগঠন এটা। কাগজকুড়ানিদের নিয়েই মূলত কাজ করে এই সংস্থা। গত বছর মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের কাছে ডেপুটেশন জমা দেওয়া হয়েছিল। সাড়াও পাওয়া গেছে। সরকার থেকে নানা ভাবে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সেইমতো এগোনো হচ্ছে। তার পর প্রায় ৬০% কাগজকুড়ানি ভোটার কার্ড পেয়েছেন। এখন এঁদের দাবি, সাফাইকর্মী হিসেবে তাঁরা যেন স্বীকৃতি পান। আরও পড়ুন: বিয়ের দাবিতে নেতার বাড়ির সামনে অবস্থান দুই সন্তানের জননীর! কাগজকুড়ানি সমিতির প্রধান শেখ মৈদুল বলেন, কমপ্যাকটর এসে যাওয়ায় বিপুল সমস্যায় পড়েছেন তাঁরা। এর ফলে দৈনিক আয় কমে অর্ধেক হয়ে গিয়েছে। তা ছাড়া তাঁরা রেশনে ২ টাকা কেজি দরে চাল পান না। ব্ল্যাকে ৩০ টাকা কেজি দরে চাল কিনতে বাধ্য হন। শিশুদের শিক্ষার ব্যবস্থা করতে পারেন না। এই সব কিছুর জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা করতে হবে এটাই সরকারের কাছে তাঁদের দাবি। তিলজলা শেডের সেক্রেটারি মহম্মদ আলমগির বলেন, বঞ্চিতদের ঠিক পাওনা বুঝিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে এই অভিযান। লক্ষাধিক কর্মী আছেন। তাঁদের কোনো রকম সুবিধে দেওয়া হয়নি। সেই সব দিতে হবে। বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হবে। সুরক্ষার জন্য কার্ড করতে হবে। এঁরা নানা ভাবে বঞ্চিত হন। বর্জ্য বিক্রি করেও ন্যায্যমূল্য পান না এঁরা। সরকারকে এই বিষয়েও জানানো হবে। বর্জ্য পুনর্ব্যবহারযোগ্য করে তোলার জন্য যে পদ্ধতি সরকারি প্রকল্প রয়েছে তার সঙ্গে এঁদের যুক্ত করতে হবে। তিনি বলেন, জিএসটি চলে আসার পর এঁদের রোজগার অনেক কমে গিয়েছে। তা ছাড়া সামাজিক নিরাপত্তা বিষয়ে যে সব প্রকল্প রয়েছে তাঁদের সেই সব কিছু পাইয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে এই আভিযান। তোপসিয়ার আজমেরি বলেন, কাজটা বোঝার পর থেকেই করতে শুরু করেছেন। বহু বছর হয়ে গেল। এতটা বয়স হয়ে গেল কিন্তু কেউ এতটুকু সম্মান দেয় না। চোর সন্দেহ করতে, গাল মন্দ করতেও কারো বাঁধে না। এই পরিচয়পত্র পেলে আর হয়ত অপমানিত হতে হবে না। ঘরের বাচ্চাগুলোকেও পড়াশোনা শেখাতে পারি না। ওরাও কি আমাদের মতো হবে? আমরা চাই ওরা লেখাপড়া শিখুক। ভালো কাজ করুক। এই দাবি পূরণ হলে যদি কিছু সুযোগ সুবিধে পাই তা হলে এই সব স্বপ্ন পূরণ করতে পারব। সূত্র: খবর অনলাইন আর/১২:১৪/২০ ডিসেম্বর



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2DbRw1u
December 20, 2017 at 06:21AM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top