ডেস্ক রিপোর্টঃ তখন ফুল দেয়া শেষ। সবাই শহীদ মিনারের ভেতরেই দাঁড়িয়ে আছেন। এমন সময় সেখানে পৌঁছলেন কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতা আজাদুর রহমান আজাদ। পৌঁছে দেখেন তাকে রেখে ফুল দেয়া হয়ে গেছে। ক্ষুব্ধ হলেন তিনি। উপস্থিত আওয়ামী লীগ নেতাদের একহাত নিলেন।
জানতে চাইলেন- ‘ফোনে বলার পরও কেনো তাকে রেখে ফুল দেয়া হলো।’ এ নিয়ে কিছুটা উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে এগিয়ে আসেন আরেক আওয়ামী লীগ নেতা তপন মিত্র। তিনি এসে পরিস্থিতি সামলানোর চেষ্টা চালান। এমন সময় কাউন্সিলর আজাদ রাজনৈতিক সহকর্মী তপনকেও ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেন। গতকাল সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের ভেতর এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় বিব্রত হয়েছেন সিলেট আওয়ামী লীগের নেতারা। শহীদ মিনারে উপস্থিত বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দও বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করেন। মহান বিজয় দিবসের প্রথম প্রহরে প্রতিবছর সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শহীদদের প্রতি ফুলেল শ্রদ্ধা জানানো হতো। এবার সেটি হয়নি। আগেই সিদ্ধান্ত নিয়ে সকাল ৬টা ৩১ মিনিট থেকে ফুলেল শ্রদ্ধা জানানোর পর্ব শুরু হয়। এ কারণে শহীদ বেদিতে শ্রদ্ধা জানাতে ভোর থেকে জনতার ঢল নামে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। মহানগর আওয়ামী লীগ প্রতিবারের ন্যায় এবারো সব নেতা-কর্মীদের নিয়ে শহীদ মিনারে ফুলেল শ্রদ্ধা জানানোর আয়োজন করে। তাদের সময় নির্ধারণ করা ছিল সকাল ৮টা। সেই অনুযায়ী তারা সবার কাছে বার্তাও পৌঁছে দেয়। এ কারণে সকাল সাড়ে ৭টা থেকে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জড়ো হতে শুরু করেন মহানগর আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। ৮টার অনেক আগেই শহীদ মিনারে পৌঁছেন আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদরউদ্দিন আহমদ কামরান ও সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদসহ সিনিয়র নেতারা। ৮টা বাজার পরও তারা প্রায় আরো ৩ মিনিট অপেক্ষা করে শহীদ মিনারে ফুলেল শ্রদ্ধা জানান। শ্রদ্ধা জানিয়ে যখন সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ নেতা-কর্মীরা শহীদ মিনারের ভেতর দাঁড়িয়ে কথা বলছিলেন তখন সেখানে পৌঁছেন মহানগর আওয়ামী লীগের শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক আজাদুর রহমান আজাদ। শহীদ মিনারের ভেতর ঢুকেই তিনি জানতে পারেন তাকে রেখেই ফুল দেয়া হয়েছে। এতে ক্ষেপে উঠেন আজাদ। এ সময় তিনি উপস্থিত থাকা নেতা-কর্মীদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদরউদ্দিন আহমদ কামরানকে তিনি প্রশ্ন করে বলেন- ‘আমি ফোনে জানিয়েছিলাম একটু অপেক্ষা করার জন্য। কিন্তু আপনারা অপেক্ষা করলেন না। আমাকে রেখেই ফুল দিয়ে দিলেন।’ আজাদ যখন উচ্চস্বরে কথা বলছিলেন। তখন শহীদ মিনারে উপস্থিত সবার দৃষ্টি পড়ে তাদের দিকে। আজাদ উচ্চস্বরে ক্ষোভ প্রকাশ করলে এগিয়ে আসেন মহানগর আওয়ামী লীগের আরেক নেতা তপন দে। তাকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন। কিন্তু আজাদ নিবৃত্ত না হয়ে তপনকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেন। এ সময় অবশ্য সভাপতি বদরউদ্দিন আহমদ কামরান গিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেন। পরে বদরউদ্দিন আহমদ কামরান কাউন্সিলর আজাদকে সঙ্গে নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের হয়ে ফুল দেয়াতে অংশ নেন। পাশাপাশি কাউন্সিলর আজাদের পক্ষ থেকে দেয়া শ্রদ্ধাঞ্জলিতেও অংশ নেন কামরান। শহীদ মিনারের এ ঘটনা সম্পর্কে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদরউদ্দিন আহমদ কামরান বলেন- ‘ওখানে কিছুই ঘটেনি। আজাদ আমাদের ছোট ভাই। সে আসার আগেই আমরা ফুল দিয়ে দিয়েছি। সে যখন ফোন দিয়েছিল তখনই আমরা ফুল দিচ্ছিলাম। নিউজ করার মতো কিছুই ঘটেনি বলে দাবি করেন তিনি।’ কাউন্সিলর আজাদও শহীদ মিনারে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন- ‘বড় ভাইদের সঙ্গে ক্ষোভ দেখিয়েছি। এটা নিউজের বিষয় নয়।’ তবে, আজাদের এই আচরণে হতবাক হয়েছেন অনেক আওয়ামী লীগ নেতা। তারা জানিয়েছেন, সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে কী রকম আচরণ করতে হয় সেটি জানা উচিত। সবাই সিনিয়রদের শ্রদ্ধা করে চলেন। এই প্রথা সিলেট আওয়ামী লীগে যুগ যুগ ধরে রয়েছে। এটি বজায় রাখা সবার উচিত বলে জানান তারা।
from Sylhet News | সুরমা টাইমস http://ift.tt/2k3C0g8
December 17, 2017 at 03:28AM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন