কলকাতা, ১৬ ডিসেম্বর- নোটবাতিল আর জিএসটির পর এবার এফআরডিআই বিল।বহুচর্চিত ফিনান্সিয়াল রেজলিউশন অ্যান্ড ডিপোজিট ইনসিওরেন্স (এফআরডিআই) বিল নিয়ে রাস্তায় নেমে আন্দোলন করবে তৃণমূল। সংসদের দুই কক্ষের সঙ্গেই জনতার দরবারেও তৃণমূল হাজির হবে এই বিলের গ্রাহক স্বার্থবিরোধী অংশ নিয়ে। আর এভাবেই কেন্দ্রের বিজেপি সরকার বিরোধী জেহাদকে আরও বাড়াতে চাইছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার তৃণমূল ভবনে দলের কোর কমিটির বর্ধিত সভায় প্রস্তাবিত এই বিলের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করে মমতা এটিকে ড্রাকোনিয়ান (দানবীয়) বলে উল্লেখ করেছেন। দলের এমপিদের প্রতি তাঁর নির্দেশ, এই বিলের প্রতিবাদে সংসদে সরব হতে হবে। আন্দোলন করতে হবে রাস্তায় নেমেও। বৈঠকে তিনি বলেন, কেন্দ্র সরকার একের পর এক জনস্বার্থ বিরোধী সিদ্ধান্ত নিয়েই চলেছে। কী ভাবে এই বিল বিরোধী আন্দোলন চালানো হবে, তা নির্ধারণ করার জন্য বর্ষীয়ান কয়েকজন এমপিকে নিয়ে একটি কোর গ্রুপও এদিন গঠন করে দিয়েছেন মমতা। সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, সৌগত রায়, দীনেশ ত্রিবেদি, সুখেন্দুশেখর রায়, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ডেরেক ওব্রায়েন রয়েছেন এই গ্রুপে। এফআরডিআই বিলের খারাপ দিকটা বাকি এমপিদের বোঝাবেন তাঁরাই। এই কোর গ্রুপই দলের অন্যস্তরের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে সমন্বয় রক্ষা করবে বলে তৃণমূল সুপ্রিমো নির্দেশ দিয়েছেন। প্রসঙ্গত, শুক্রবার শুরু হয়েছে সংসদের শীতকালীন অধিবেশন। এই অধিবেশনেই বিজেপি সরকার এই বিলটি পাশ করাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। এর আগে গত আগস্ট মাসে লোকসভায় বিলটি পেশ করার পর তা যৌথ সংসদীয় কমিটির কাছে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু কী রয়েছে এফআরডিআই বিলে, যা নিয়ে এত বিতর্ক? মূলত প্রস্তাবিত বিলটির ৫২ নম্বর অনুচ্ছেদ নিয়েই জলঘোলা বেশি হচ্ছে। ওই অনুচ্ছেদ অনুসারে সঙ্কটাপন্ন কোনও ব্যাঙ্ক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে বাঁচাতে আমানতকারীর প্রতি তার যে দায়, তা মকুব করা হবে। অর্থাৎ আমানতকারীর আমানত ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা থাকছেই না। এরই পাশাপাশি বিল অনুযায়ী, যে নিষ্পত্তি নিগম গঠন করা হবে, একমাত্র তাদেরই সংশ্লিষ্ট আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে আমানতকারীর প্রতি দায় থেকে মুক্ত করার অধিকার বর্তাবে, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নয়। এই অনুচ্ছেদ নিয়েই আপত্তি তুলেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো। তাঁর কথায়, সাধারণ গ্রাহকদের পাশাপাশি এই বিলে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের অধিকারও বিঘ্নিত হচ্ছে। এই বিষয়টি নিয়েই সংসদের ভিতরে ও বাইরে আন্দোলন করার নির্দেশ দিয়েছেন মমতা। যদিও বিষয়টি নিয়ে দেশজুড়ে বিতর্ক শুরু হওয়ায় গত ১৩ ডিসেম্বর বণিকসভা ফিকির বার্ষিক সভায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জানিয়েছেন, ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার জন্যই এই বিল আনা হচ্ছে। সরকার গ্রাহক স্বার্থ সুরক্ষিত রাখার জন্যই কাজ করছে। প্রধানমন্ত্রীর অভিযোগ ছিল, এই বিলের খসড়া নিয়ে চারদিকে গুজব ছড়ানো হচ্ছে। এদিনের দলীয় বৈঠকে আধার কার্ড সংযুক্তিকরণ নিয়ে ফের সমালোচনায় সরব হন মমতা। কোর কমিটির বৈঠকে মমতা সাফ জানিয়ে দেন, বিজেপিই এখন প্রধান শত্রু। তাঁর হুঁশিয়ারি, কোনও অবস্থাতেই ওই দলের বক্তব্য কাউন্টার করার সময় দলের কেউ কোনও কটূ কথা বা খারাপ ভাষা প্রয়োগ না করেন। এটা তৃণমূলের সংস্কৃতি নয়। দলের সর্বস্তরের প্রতি তাঁর পরামর্শ, এলাকায় এলাকায় নজর রাখুন। মানুষের কাছে যান। যাতে কোনওভাবেই বিভেদকামী শক্তি মাথাচাড়া দিতে না পারে। সবাইকে নিয়ে চলাটাই আমাদের পথ। সামনে পঞ্চায়েত নির্বাচন। সবাইকে নিয়ে ভোট যুদ্ধে নামতে হবে। তবে দলের নির্বাচনী রণকৌশল নির্ধারণ নিয়ে কোনও আলোচনা এদিন হয়নি। তৃণমূল সূত্রের খবর, আগামী ৩১ জানুয়ারি দলের কোর কমিটির যে বর্ধিত সভা ডাকা হয়েছে, সেখানেই সেই সংক্রান্ত দিকনির্দেশ করবেন নেত্রী। এদিনের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দেন, মিড ডে মিল প্রকল্পে আর চাল দিতে চাইছে না কেন্দ্র। আর্থিক প্রতিকূলতা সত্ত্বেও রাজ্যই চালিয়ে যাবে মিড ডে মিল। বৈঠকে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের যে সমস্ত জেলা সভাপতি অনুপস্থিত ছিলেন, তাঁদের কারণ দর্শানোর নির্দেশ দিয়েছেন মমতা। সেই কারণ যথপোযুক্ত না হলে, সংশ্লিষ্ট সভাপতিকে সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশও দিয়েছেন তিনি। তথ্যসূত্র: বর্তমান এআর/১৯:৪০/১৬ ডিসেম্বর
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2kB99zk
December 17, 2017 at 01:39AM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন