কলকাতা, ২৭ ডিসেম্বর- চাণক্যের কথাই কি তাহলে সত্যি হল? মুকুল রায় সদর্পে ঘোষণা করেছিলেন, রাজ্যের প্রতিটি ভোটের বুথে চারজন তৃণমূল কর্মীর মধ্যে তাঁর হয়ে কাজ করবেন দুইজন৷ সবং বিধানসভা উপনির্বাচনের ফলাফল সেটারই প্রমাণ দিয়ে গেল৷ যেখানে কোন সংগঠনই নেই, সেখানে বিজেপির ভোট পাওয়ার হার দুই শতাংশ থেকে বেড়ে আঠারো শতাংশ হল কি করে ? প্রশ্নের উত্তরের মধ্যেই লুকিয়ে আছে স্যাবোটেজের গল্প৷ অন্তর্ঘাতের পুরনো কাহিনী৷ সামনের পঞ্চায়েত ও ২০১৯ এর লোকসভা ভোটে যা যথেষ্ট চিন্তায় ফেলতে চলেছে তৃণমূল শিবিরকে৷ না, সবং-এ জেতেনি বিজেপি৷ তারা তৃতীয় স্থানে, শাসক তৃণমূল কংগ্রেস ও সিপিএম প্রার্থীরও পর৷ গতবারের জয়ী কংগ্রেসের ঠিক আগে৷ কিন্তু দেড় বছরে ভোট বেড়েছে দুই শতাংশ থেকে আঠারো শতাংশ৷ বছর ঘুরতে না ঘুরতেই ভোট বেড়েছে প্রায় ৩২ হাজার৷ আর তাতেই, ঘুম উড়েছে শাসকের৷ মাত্র দেড় বছরে দুই শতাংশ থেকে আঠারো শতাংশ হল কি করে ? প্রশ্ন উঠে গেছে শাসক দলের অন্দরেই৷ যতই মুকুল রায় দলে যোগ দিন না কেন, এই দেড় বছরে বিজেপির সংগঠন এমন কিছু বাড়েনি সবংয়ে৷ কিন্তু ভোট বাক্সে এত গেরুয়া ভোট এল কি করে! যদিও তৃণমূলের ভোটও বেড়েছে অনেক৷ ২০১৬ বিধানসভা ভোটে সবং কেন্দ্রে তৃণমূলের ভোট ছিল ৩৬.৬ শতাংশ৷ যেটা ২০১৭ র উপনির্বাচনে হয়েছে ৫১.৩১ শতাংশ৷ বেড়েছে প্রায় ১৫ শতাংশ৷ কিন্তু সেটা তো হওয়ারই কথা ছিল৷ কংগ্রেস ভেঙে তৃণমূলে গিয়েছেন সবং-এর স্থানীয় ছেলে ১৯৮২ সাল থেকে বিধায়ক মানস ভুঁইয়া৷ তাঁর সঙ্গে তাঁর কংগ্রেসি ভোটব্যাঙ্কও গিয়েছে ঘাসফুলে৷ ফলে তৃণমূলের ভোট যে বাড়বে তা একপ্রকার নিশ্চিতই ছিল৷ কিন্তু ২০১৬ তে বিজেপির ভোট ছিল মাত্র ২.৬ শতাংশ, ভোটের নিরিখে নামমাত্র বলা যায়৷ ২০১৭-তে সেটাই দাঁড়িয়েছে ১৮.১১ শতাংশ৷ প্রায় ৩২ হাজার ভোট বেড়েছে পদ্মের৷ না, শাসক দলের চিন্তার কোন কারণ ছিল না, এখনও নেই৷ চিন্তাটা অন্য জায়গায়৷ সংগঠন না থাকা প্রায় গেরুয়া শূন্য সবংয়ে যদি বিজেপির ভোট শতাংশ এত বাড়ে তাহলে যেখানে সংগঠন আছে সেখানে কি হবে? প্রশ্ন উঠেছে, এত ভোট বিজেপি পেল কোথা থেকে? সব বুথে তো বিজেপির এজেন্টই ছিল না, তাহলে? কোথা থেকে এত এত ভোট, এত ভোটার ? তাহলে কি সর্ষের মধ্যেই লুকিয়ে আছে ভূত? বুথের ভিতরে বসে থাকা তৃণমূল কর্মীরাই কি বিজেপির হয়ে কাজ করেছে? ঠিক যেমন, ২০১১ এর বিধানসভা ভোটে সিপিএমের এজেন্টদের বিরুদ্ধেই তৃণমূলের হয়ে ভোট করানোর একটা অভিযোগ উঠেছিল৷ বাম নেতারা আজও ২০১১ এর বাংলায় ঐতিহাসিক পরিবর্তনের জন্য লাল নেতা কর্মীদের স্যাবোটেজ বা অন্তর্ঘাতকেই দায়ী করেন৷ ঠিক তেমনই কি সবংয়েও স্যাবোটেজের পুরনো গল্প লেখা হল ? প্রশ্ন কিন্তু উঠছে৷ ওঠার কারণও আছে৷ বিজেপিতে যোগদান করার পরই পঞ্চায়েত ভোট ও ২০১৯ এর লোকসভা ভোট নিয়ে বলতে গিয়ে স্বয়ং মুকুল রায়ই প্রকাশ্যে দাবি করেছিলেন, রাজ্যের যেকোন বুথে চার জন তৃণমূল কর্মীর মধ্যে দুই জন তাঁর হয়ে কাজ করবে ভোটের দিন৷ সবংয়ে কি তাই হয়েছে? শাসকদলের অন্দরে কান পাতলেই এই আশঙ্কার কথা শোনা যাচ্ছে৷ তার মধ্যেই, ভোটের পরই পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার ও মুখ্যমন্ত্রীর পছন্দের অফিসার ভারতী ঘোষের হঠাৎ বদলিতে এই আশঙ্কারই ছায়া পাচ্ছে রাজনৈতিক মহল৷ আরও পড়ুন: বিয়ে রুখতে ৪ কিমি হেঁটে থানায় অভিযোগ নাবালিকার সবং বিধানসভা জিতে আপাতত স্বস্তিতে তৃণমূল কংগ্রেস৷ তবে আশঙ্কার কালো মেঘ শাসক শিবিরের নেতাদের হাবভাবেই পরিস্কার৷ সংগঠনহীন এলাকায় বিজেপি এই কান্ড করলে, যেখানে সংগঠন আছে যেখানে পদ্মফুলের ভোট কি আরও বাড়বে? প্রশ্ন কিন্তু উঠছে৷ যেখানে ইতিমধ্যেই বিজেপির একটা ভোটব্যাংক আছে, সেখানে কি হবে? সেখানে কি শাসক দলকে রীতিমতো লড়াই দেবে গেরুয়া শিবির? ভালো ব্যবধানে জেতার পরও প্রশ্ন কিন্তু উঠছে৷ কারণ শাসক শিবিরের নেতারা জানেন, বিরোধীদের অভিযোগও আছে যে সবংয়ে ৩০৬টি বুথের মধ্যে এক তৃতীয়াংশের বেশি বুথে ভোট করিয়েছেন ঘাসফুল নেতা-কর্মীরা৷ তারপরেও বিজেপির এই বাড়বাড়ন্ত৷ তাহলে কি পরিষ্কার অন্তর্ঘাত? স্যাবোটেজ বা অন্তর্ঘাত কে কে করল ? তারই চুলচেরা হিসাব এখন করছেন তৃণমূল নেতারা৷ বুথ ধরে ধরে কি করে বিজেপির ভোট বাড়ল, তার হিসাব করছেন নেতারা৷ আরও পড়ুন: এবার মুকুলের থাবা উত্তরে, তৃণমূলে ভাঙন ধরিয়ে বিজেপিতে পা বাড়াচ্ছেন কারা মানস ভুঁইয়াকে নিয়ে নিজেদের মধ্যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ছিল৷ কিন্তু আর এক ভোট বিশেষজ্ঞ শুভেন্দু অধিকারী শেষ এক মাসে তা অনেকটাই মিটিয়ে এনেছিলেন৷ তাহলে কি সেই গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব পুরোপুরি মেটে নি? প্রশ্ন উঠছে তা নিয়েও৷ তবে, মুকুল রায়ের অন্তর্ঘাতের দাবি যে এই নির্বাচনের পর খুব জোরালো হচ্ছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না৷ পঞ্চায়েত নির্বাচনেও কি এই অন্তর্ঘাতের গল্প চলতে থাকবে? শাসক দলের এই চিন্তাকেই হাতিয়ার করছে বিরোধী বিজেপি৷ আরও পড়ুন: পশ্চিমবঙ্গের স্কুলপাঠ্যে বাধ্যতামূলক বাংলা ভাষা পঞ্চায়েত ভোটের ফলেই কিছুটা বোঝা যাবে মুকুল রায়ের অনৈতিক ভোটম্যাজিক কি সত্যি কাজ শুরু করেছে৷ সত্যি কি বুথের ভিতর থাকা তৃণমূল কর্মীদের অনেকেই আগামীদিনে মুকুল রায়ের বিজেপির হয়ে কাজ করবে? প্রশ্ন কিন্তু উঠছে৷ একটা নির্বাচনই অনেক প্রশ্ন তুলে দিয়ে গেছে৷ ভোট এলেই বোঝা যাবে বাকি রহস্য৷ আপাততঃ পঞ্চায়েত ভোটের ফলাফলের দিকেই নজর থাকবে রহস্যপ্রেমী রাজনীতিপ্রিয় বাঙালির৷ তৃণমূলের অন্তর্ঘাত ভোটবাক্সে বিজেপিকে কতটা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে আগামীদিনে সেই নাটকের দিকেই লক্ষ থাকবে রাজ্যবাসীর৷ তথ্যসূত্র: কলকাতা২৪৭ এআর/১৭:৩৫/২৭ ডিসেম্বর
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2DqN12x
December 27, 2017 at 11:34PM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন