ঢাকা, ১৯ ডিসেম্বর- দুটি গোল তো করলেন, একদম কায়সার হামিদের মতো-ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলন কক্ষে ঢুকতেই একজন ক্রীড়া সাংবাদিকের এ কথা শুনে লাজুক হাসি আঁখির মুখে। জাতীয় দলের সাবেক তারকা ডিফেন্ডার কায়সার হামিদকে এ প্রজন্মের আঁখি খাতুন হয়তো চেনেন না। কিন্তু মঙ্গলবার সকালে কমলাপুর বীরশ্রেষ্ঠ মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামের এ কিশোরী ফুটবলার যে মনে করিয়ে দিলেন কায়সার হামিদকে। সাড়ে ৫ ফুট লম্বা বিকেএসপির নবম শ্রেণীর ছাত্রীর দুর্দান্ত নৈপূণ্য আর জোড়া গোলেই সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ চ্যাম্পিয়নশিপে ভুটানকে হারিয়েছে বাংলাদেশ। ফরোয়ার্ডরা যখন ব্যর্থ হচ্ছিলেন তখন ডিফেন্ডার আঁখি দুটি গোল করে ফাইনালের কাছাকাছি নিয়ে যান দলকে। ২২ খেলোয়াড়ের মধ্যে সহজেই আলাদা করা যায় আঁখিকে। সবার চেয়ে লম্বা। গায়ের রঙ কালো। মুখ সর্বদা মিষ্টি হাসি। খেলার ধরণ অনেকটাই কায়সার হামিদের মতো। রক্ষণের দায়িত্ব পালনের পর দলের পাওয়া সেটপিসগুলো থেকে গোল বের করার জন্য আঁখিই থাকেন অগ্রণী ভূমিকায়। এর আগে তাজিকিস্তানে ক্যারিয়ারের প্রথম গোলটি করেছিলেন নেপালের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার করলেন জোড়া গোল। হ্যাটট্রিকও হতে পারতো। তার নেয়া গোটা তিনেক ফ্রি-কিক থেকে গোল হতে হতেও হয়নি। তার প্রথম গোলটি মারজিয়ার কর্নার থেকে হেডে, দ্বিতীয়টি বাঁ পায়ের প্লেসিংয়ে। দুটি গোলই হয়েছে দুর্দান্ত। ম্যাচের পর কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনও আঁখির গোল দুটিকে স্বীকৃতি দিয়েছেন দারুণ হিসেবে। সবার চেয়ে লম্বা হওয়ার পরও অনেকটা লাফিয়ে হেড দিয়েছিলেন আঁখি। ভুটানের গোলরক্ষকের সে বল ঠেকানোর কোনো উপায়ই ছিল না। আরও পড়ুন: নেপালকে উড়িয়ে দিল বাংলাদেশ বাঁ পায়ের প্লেসিংয়ে করা আঁখির করা দ্বিতীয় গোল প্রথমটিকে যেন ভুলিয়ে দিলো। মারজিয়ার কর্নার একটু নিচু হয়ে পড়েছিল আঁখির সামনে। মুহুর্তেই বাঁ পা ঘুরিয়ে প্লেসিং, ব্যবধান ২-০। আঁখির ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিল মিডফিল্ডার হিসেবে। দেহের গড়ন ও সাহসিকতায় কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন তাকে তৈরি করেছেন ডিফেন্ডার হিসেবে। একজন ডিফেন্ডার হয়ে জোড়া গোল, কেমন লাগছে? অবশ্যই ভালো লাগছে। আগে আমার একটি আন্তর্জাতিক গোল ছিল। প্রথম কোনো ম্যাচে জোড়া গোল করলাম। দেশের জয়ে ভূমিকা রাখতে পারায় আমি খুশি-ম্যাচের পর বলছিলেন বিকেএসপির ছাত্রী আঁখি। জোড়া গোল করেছেন, ম্যাচ সেরা হয়েছেন। এমন একটি ম্যাচ খেলা আঁখিকে নিয়ে কি বললেন তার গুরু ছোটন? আসলে আখি এ ম্যাচে নিজেকে প্রমাণ করেছে। সে ডিফেন্স থেকে ওপরে ওঠে খেলেছিল। গত ম্যাচে মনিকা সেরা খেলোয়াড় হয়েছিল। তবে আঁখি অন্যতম সেরা খেলোয়াড় ছিল ওই ম্যাচে-শিষ্যকে মূল্যায়ন ছোটনের। ফুটবলে কিভাবে আসলেন আঁখি? জানা যাক সিরাজগঞ্জের এ কিশোরীর কাছেই। বাড়ির পাশে মনসুর আহমেদ স্যারের অধীনে অনুশীলন করেছি। বঙ্গমাতা স্কুল ফুটবল খেলেছি শাহজাদপুর ইব্রাহিম পাইলটস বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের। রাজশাহী বিভাগীয় পর্যায়ে ওঠেছিল আমাদের স্কুল। এরপর ২০১৫ সালে ক্যাম্পে ডাক পাই। তাজিকিস্তানে অনূর্ধ্ব-১৪ আঞ্চলিক চ্যাম্পিয়নশিপে খেলেছিলাম। এটা আমার দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট-ফুটবলার হওয়ার গল্পটা বলছিলেন আঁখি। হ্যাটট্রিক হতে হতেও হয়নি। তাই বলে আঁখির কোন আফসোস নেই, হ্যাটট্রিক করতে পারিনি বলে কষ্ট পাইনি। আফসোসেরও কিছু নেই। কারণ দল জিতেছে এটাই বড় বিষয়। দ্বিতীয় গোলটিতে দারুণ বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছেন। এভাবে গোল করতে হয় তা কি কারো কাছ থেকে শিখেছেন? জবাবে আঁখি বলেছেন,টিভিতে মেসিকে অনেক ভালো ভালো গোল করতে দেখেছি। আমার ভাই নাজমুল উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ে। সে আমাকে ইউটিউবে অনেক খেলা দেখায়। সেভাবে মাঠে চেষ্টাও করি। আজকে হয়ে গেলো। সিরাজগঞ্জ শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে শাহজাদপুরের পাটগোলায় আঁখিদের বাড়ী। বাবা আক্তার হোসেন তাঁতের কাজ করেন। ফুটবলার হওয়ার আগে বাবার তাঁতের কাজে সহযোগিতাও করতেন। এখন দেশের নারী ফুটবলের অন্যতম প্রতিভা আঁখি নিজেকে চেনাচ্ছেন অন্যভাবে। আমার বাবা তাঁতের কাজ করেন। বাবা-মা পরিবারের সবারই খেলা নিয়ে আগ্রহ আছে। জোড়া গোল করেছি শুনে অবশ্যই খুশি হবেন আমার বাবা-মা। ক্যাম্পে সপ্তাহে একদিন কথা বলার সুযোগ পাই আমরা। তখনই বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা হবে-বলছিলেন আঁখি। ছিলেন মিডফিল্ডার। এখন ডিফেন্ডার। জোড়া গোল করার পর এখন কী মনে হয় স্ট্রাইকার হলেই ভালো হতো? আসলে তা নয়। ছিলাম মিডফিল্ডার। কোচ এখন খেলাচ্ছেন ডিফেন্সে। তিনি যেটা ভালো মনে করবেন সেটাই করবেন। কোচ যেখানে খেলাবেন আমি সেখানেই খেলবো। প্রয়োজনে গোলরক্ষক হিসেবেও । আমি সব পজিশনে খেলতেই প্রস্তুত-বলছিলেন নারী অনূর্ধ্ব-১৫ ফুটবল দলের এ ডিফেন্ডার। সূত্র: জাগোনিউজ২৪ আর/১৭:১৪/১৯ ডিসেম্বর
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2DdSj2b
December 19, 2017 at 11:52PM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন