গুয়াহাটি, ২৯ ডিসেম্বর- বিশ্ব যখন ৩১ ডিসেম্বর মধ্য রাতে নতুন বছর বরণ করতে থাকবে, তখন রিকশা চালক শামসুল হক, টাটা ইনস্টিটিউট অব সোস্যাল স্টাডিজের আবদুল কালাম আজাদ এবং সেইসাথে আরো ৪৭ লাখ লোক, যারা আসামের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় গ্রুপ সৃষ্টি করেছেন, তারা তাদের ভাগ্য কোন দিকে নিয়ে যাবে, তা নিয়ে ভাবতে থাকবেন। ওই সময় ভারতের ন্যাশনাল রেজিস্টার অব সিটিজেন্স (এনআরসি)-এর প্রথম খসড়া প্রকাশিত হবে। ১৯৫১ সালের পর এ ধরনের প্রকাশনা এটিই প্রথম। আসামে ভারতীয়দের নাম-সংবলিত এই প্রকাশনার জন্য রেজিস্ট্রার জেনারেল অব ইন্ডিয়া সাত বছর ব্যয় করেছে। যারা তাদের পূর্বপুরুষদের সাথে নিজেদের সম্পর্কিত করতে পারবে, তাদের নাম সুপ্রিম কোর্টের তদারকিতে তৈরি এই তালিকায় স্থান পাবে। ১৯৮৫ সালের আসাম চুক্তি অনুযায়ী, যারা ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চ মধ্য রাত পর্যন্ত রাজ্যটিতে প্রবেশ করেছে, তারাই ভারতীয় নাগরিক হিসেবে চিহ্নিত হবে। দশকের পর দশক ধরে আসামে অবৈধ অভিবাসী ইস্যুতে যে গোলযোগ চলছে, এনআরসি তা অবসানে সহায়ক হবে বলে আশা করা হচ্ছে। রাজ্যটির মুসলিম সম্প্রদায়ের (তারা রাজ্যের এক তৃতীয়াংশ) ৯০ ভাগ বাংলা ভাষাভাষী। তাদেরকে এখন বাংলাদেশি বা মিয়া হিসেবে যে গাল দেওয়া হয়, এর অবসানও ঘটাতে পারে এনআরসি। জাতিগত সঙ্ঘাতের কারণ নিয়ে কর্মরত আজাদ বলেন, আমাদের চিত্রই আমাদের কাছে পাল্টে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। সুপ্রিম কোর্ট মুসলিম নারীদের জন্য পঞ্চায়েতের সনদপত্র গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত দিয়েছে। এর ফলে পারিবারিক বন্ধন রক্ষার ব্যবস্থা হয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের মেয়েরা স্কুলে যায় না, তাদের জন্ম হাসপাতালে হয় না, তাদের তাড়াতাড়ি বিয়ে হয়ে যায়। ফলে তাদের আইনগত সম্পর্ক দেখানোর জন্য স্কুল বা জন্ম নিবন্ধন দেখানোর সুযোগ থাকে না। তবে শামসুলের অবস্থা ভালো নয়। যে ৪৭ লাখ লোক পূর্বপুরুষদের সাথে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি, তিনি তাদের একজন। তিনি এই অবস্থায় পড়েছেন নথিপত্র না থাকার কারণে। তিনি বলেন, এনআরসি কর্মকর্তারা সত্যায়ন যাচাই করার জন্য আমার বাড়ি এসেছিল। আমি কাগজপত্রে আমার বাবার সাথে কোনো সম্পর্ক দেখাতে পারিনি। বিজেপি-নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকার ইতোমধ্যেই নাগরিকত্ব আইন ১৯৫৫ সংশোধনী চেয়েছে, যাতে ১৯৭১ সালের পর আগতদের নাগরিকত্বের বৈধতার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়। আরও পড়ুন:বিজেপি মুসলিমদের তাড়িয়ে আসামকে মিয়ানমার বানাতে চায় তবে ১৯৭৯-৮৫ সময়কালে বিদেশিবিরোধী আন্দোলনকারী অল আসাম স্টুডেন্টস ইউনিয়ন (এএএসইউ) মনে করছে না, বাংলাদেশ থেকে আসা ৭১-পূর্ব অবৈধ অভিবাসীদের জন্য বড় ধরনের কোনো পরিবর্তন হবে। এএএসইউ সভাপতি দীপঙ্ক কুমার নাথ বলেন, আসাম চুক্তি অনুযায়ী, আমরা তাদের ভারতীয় নাগরিক হিসেবে গ্রহণ করে নিচ্ছি। তবে কেন্দ্রের সাথে আমাদের একটি চুক্তি আছে। তা হলো আসামের আদিবাসী লোকজনের জন্য সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত করা। আমরা চাচ্ছি, যেসব বাংলাদেশি অভিবাসীর নাম ১৯৫১ সালের এনআরসির সাথে সম্পর্কিত থাকবে, কেবল তাদের বংশধরদেরই আদিবাসী আসামি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হবে।-আমাদের সময় এমএ/১০:৪০/২৯ ডিসেম্বর
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2leZwrl
December 29, 2017 at 04:48PM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন