কলকাতা, ২৬ ডিসেম্বর- মাতৃভাষার মর্যাদা সবার আগে। তাই মা-মাটি-মানুষের সরকারের সৌজন্যে রাজ্যের সমস্ত স্কুলে বাংলা ভাষাকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। বাঙালি হয়ে বাংলা পড়বেন না, সেদিন শেষ হতে চলেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে। সকল বাঙালিকে বাংলা পড়তেই হবে। সরকারি, সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত বা বেসরকারি স্কুলে পাঠ্যক্রমেও তাই বাংলা আবশ্যিক। প্রথম শ্রেণি থেকেই এই বিধি চালু করার কথা জানিয়ে দিয়েছে রাজ্যের তৃণমূল সরকার। ২০১৭-য় বাংলা ভাষা পাঠ্যে বাধ্যতামূলক করা এক যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত হিসেব গণ্য হয়েছে। মাতৃভাষা বাংলা হোক অবশ্য পাঠ্য প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় ভাষা হিসেবে যেকোনও ভাষা চয়নের অধিকার থাকছে পড়ুয়ার হাতে। তবে তার মধ্যে যেকোনও ভাষা হিসেবে রাখতে হবে বাংলাকে। শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ঘোষণা করেন, আসন্ন শিক্ষাবর্ষ থেকেই এই নিয়ম কার্যকর হচ্ছে। তাঁর কথায়, আমরা মাতৃভাষার প্রতি শ্রদ্ধাশীল। প্রতি ছাত্ররই তাঁর মাতৃভাষার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা উচিত। সবার আগে মাতৃভাষা। তারপর অন্য কোনও ভাষা। এটাই ধারা হওয়া উচিত। আমদের সবার উচিত মাতৃভাষা পড়া। মোদের গরব মোদের আশা সরকার বিশ্বাস করে, প্রতিটি ছাত্রই মাতৃভাষার প্রতি আবেগকে সর্বাগ্রে গুরুত্ব দেবে। তারপর তো প্রত্যেক ছাত্রের কাছেই অন্য ভাষা চয়নের অধিকার থাকছে। শুধু বাধ্যতামূলক হচ্ছে তিন ভাষার মধ্যে যেন বাংলা অবশ্যই থাকে। এটা সকলের মেনে নেওয়া উচিত। কারণ আমাদের কাছে মাতৃভাষার স্থান সবার আগে। আমাদের সকলের কাছেই বাংলা ভাষা হল মোদের গরব, মোদের আশা। সেই গর্ব আর আশাই তো বাংলা ভাষা। ইংরেজি মাধ্যমেও বাংলা আবশ্যিক প্রথম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত সমস্ত পাঠ্যক্রমেই বাংলা থাকছে। এমনকী রাজ্যের বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য এই নিয়ম। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইচ্ছানুসারেই বাংলা ভাষা আবশ্যিক করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সরকারের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন শিক্ষাবিদরা। যেহেতু প্রত্যেক পড়ুয়ারই তিনটি ভাষা চয়নের অধিকার থাকে, সেখাবে ইংরেজি মাধ্যম হলেও বাঙালি হিসেবে তিনটির মধ্যে একটা স্থান বাংলাকে দেওয়া যেতেই পারে, কারও বাংলা ভাষা গ্রহণ করতে অসুবিধা থাকারই কথা নয়। আরও পড়ুন: বিয়ে রুখতে ৪ কিমি হেঁটে থানায় অভিযোগ নাবালিকার বাংলায় গুরুত্ব পায় না বাংলা ভাষাই তামিলনাড়ু, কেরালা, কর্ণাটকে মাতৃভাষা তথা ওই রাজ্যের আঞ্চলিক ভাষা যেভাবে গুরুত্ব পায়, পশ্চিমবঙ্গে সে অর্থে বাংলা ভাষা তত গুরুত্ব পায় না। তাই বাংলা ভাষার মানোন্নয়ন জরুরি। আর বাংলা ভাষার মান বাড়াতেই রাজ্য সরকারে এই উদ্যোগ। এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন প্রায় সকল শিক্ষাবিদই। অধিকাংশ শিক্ষাবিদেরই মত, বাংলা ভাষার এই মর্যাদা অনেক আগেই প্রাপ্য ছিল। কিন্তু এইভাবে কেউ ভাবেনি। মমতার ভাবনা সাধুবাদযোগ্য বাংলা ভাষা আবশ্যিক করার যে ভাবনা রাজ্যের সরকার নিয়েছে, তা সাধুবাদযোগ্য। বাংলার জন্য এই ভাবনা, বাংলা ভাষার জন্য এই ভাবনা খুব ভালো পদক্ষেপ। প্রথম শ্রেণি থেকে বাংলা পড়া আবশ্যক হোক। অনেকে ভাবে স্কুলে বাংলা পড়ানো মানে পড়ুয়ারা ইংরেজি শিখতে পারবে না। তা একেবারেই ভুল। শিক্ষাবিদ নৃসিংপ্রসাদ ভাদুড়ি বলেন, বাংলা মাধ্যমে পড়াশোনা করে আমরা যাঁরা বড় হয়েছি, কোনও ইংরেজি মাধ্যমের পড়ুয়ার থেকে কম ইংরেজি জানি বলে মনে হয় না। বিশ্বের দরবারে সেরা বাংলা ভাষা বাংলা ভাষা শুধু বাংলার মাতৃভাষা নয়, এই ভাষা দেশের দ্বিতীয় তথা বিশ্বের চতুর্থ সর্বাধিক প্রচলিত ভাষা। বিশ্বের মোট ৩০ কোটি মানুষ এই ভাষায় কথা বলেন। এই বাংলা ভাষা যেমন বাংলাদেশের প্রধান জাতীয় সরকারি ভাষা, তেমনই ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরা রাজ্যের প্রধান সরকারি ভাষা। ভারতের সাংবাধানিক ২৩টি ভাষার মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে রয়েছে এই বাংলাভাষা। এমনকী সাগর পেরিয়ে আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের প্রধান ভাষার স্থান দখল করে রয়েছে বাংলা। এছাড়া ঝাড়খণ্ড রাজ্যের দ্বিতীয় সরকারি ভাষা হল বাংলা। পাকিস্তানের করাচি শহরেও বাংলা ভাষা দ্বিতীয় সরকারি ভাষা বলে স্বীকৃত। শুধু তাই নয়, সিয়েরা, লিওনের সরকারি ভাষাও বাংলা। লন্ডনের দ্বিতীয় বৃহত্তম ভাষা হল বাংলা। বিশ্বের এই একটি মাত্র ভাষাতেই তিন দেশের জাতীয় সঙ্গীত রচিত হয়েছে। ভারত, বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার জাতীয় সঙ্গীত বাংলা ভাষায় রচিত। ভারতের জাতীয় স্ত্রোত্রও এই ভাষায় লেখা হয়েছে। সূত্র: ওয়ানইন্ডিয়া আর/১৭:১৪/২৬ ডিসেম্বর



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2BUL8yG
December 26, 2017 at 11:31PM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top