সুরমা টাইমস ডেস্ক ঃঃকম ভাড়া আর যাতায়াতে সুবিধার কারণে সিলেট নগরে টাউন বাসের ব্যাপক চাহিদা থাকলেও এখন বন্ধ হতে চলেছে টাউন বাস সার্ভিস। শুরুর সময়ে ৬টি সড়কে টাউন বাস চলাচল করলেও এখন চলছে মাত্র ২টি সড়কে।
২০০৮ সালের মার্চ মাসে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় সিলেটে চালু করা হয় টাউন বাস সার্ভিস। ৩৫টি গাড়ি নিয়ে যাত্রা শুরু হলেও ৯বছরের মাথায় এসে এখন আছে মাত্র ৯টি গাড়ি। ফলে গণপরিবহন সংকটে পড়েছেন জনসাধারণ।
নগরীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইরফান আহমদ বলেন, এক সময় হেতিমগঞ্জ থেকে সরাসরি বন্দরবাজার আসতাম মাত্র ১৫ টাকা দিয়ে। কিন্তু এখন টাউন বাস কমে যাওয়ায় সব সময় টাউন বাস পাওয়া যায় না। তাই ২টি গাড়ি পরিবর্তন করে অন্তত ৩০ টাকা ভাড়া খরচ করে বন্দর আসতে হয়।
টাউনবাসের কয়েকজন চালক ও টাউন বাস কোর্ট পয়েন্ট স্ট্যান্ডের পরিচালকের সাথে কথা বলে জানা যায়, শুরুর সময়ে কোর্ট পয়েন্ট থেকে লালাবাজার, কোর্ট পয়েন্ট থেকে জালালপুর, কোর্ট পয়েন্ট থেকে মোগলা বাজার হাজিগঞ্জ, কোর্ট পয়েন্ট থেকে টুকের বাজার, কোর্ট পয়েন্ট থেকে বটেশ্বর, কোর্ট পয়েন্ট থেকে কামাল বাজার এসব সড়কে প্রতিদিন মোট ৩৫টি গাড়ি চলাচল থাকলেও এখন কোর্ট পয়েন্ট থেকে মোগলা বাজার-হাজিগঞ্জ, কোর্ট পয়েন্ট থেকে হেতিমগঞ্জ এই দুই সড়কে মাত্র ৯টি গাড়ি চলাচল করছে।
কোর্ট পয়েন্ট টাউন বাস স্ট্যান্ডের পরিচালক নছির মিয়া নানামুখি সমস্যার কথা জানান। তিনি বলেন, ২০০৮ সালের তুলনায় এখন শহরে যানজট বেড়েছে, তাই সময় বেশি লাগার কারণে যাত্রীরা আর আগের মতো টাউন বাসে চড়তে চায় না। সিএনজি অটোরিকশার সংখ্যাও বেড়েছে অনেক। ফলে যাত্রীরা সহজেই সিএনজিতে চলাচল করতে পারে। এসব কারণে টাউন বাসের ব্যবসায় ভাটা পড়েছে। প্রতিবন্ধীদের জন্য নির্ধারিত ২ আসনসহ মোট ২৫ আসনের গাড়িকে বেশির ভাগ সময়ই ১০ থেকে ১৫জন যাত্রী নিয়ে ছাড়তে হয়। সারা দিনে যা উপার্জন হয় তা দিয়ে চালক কন্ট্রাক্টর, মালিক কারোরই পোষায় না। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে মালিকরা গাড়ি বিক্রি করে দিচ্ছেন। চালকরাও অন্যান্য সড়কে চলে যাচ্ছেন।
তবে যাত্রিরা বলছেন, যথেষ্ট চাহিদা থাকা সত্ত্বেও নগরীতে টাউন বাস সার্ভিস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। বাড়তি উপার্জনের লোভে বাস মালিকরা এসব গাড়িগুলো অন্যান্য সড়কে চালাচ্ছেন। এমনকি কিছু গাড়ি নামে টাউনবাস থাকলেও তা কদমতলী থেকে ইচ্ছামত বিভিন্ন সড়কে চলাচল করছে। এসব গাড়ি শহরের ভিতরে ঢুকে না বলে অভিযোগ যাত্রীদের।
মোগলা বাজারের বাসিন্দা সুরাইয়া আঞ্জুম বলেন, মোগলা বাজার থেকে কিছু টাউন বাস ছেড়ে আসলেও এসব গাড়ি কদমতলী এসে আর শহরে ঢুকে না। কদমতলীতেই যাত্রী নামিয়ে দেয়। চালকরা যানজটের অজুহাত দেখিয়ে শহরে ঢুকতে চায় না।
সিলেট টাউন বাস মালিক সমিতির সভাপতি শাহ জিয়াউল কবির পলাশ বলেন, ২০০৮ সালে যখন টাউন বাস চালু হয় তখন বিআরটিএ থেকে টাউন বাসের জন্য ১০টি সড়ক নির্ধারণ করা হলেও আমরা গাড়ি চালানো শুরু করি ৬টি সড়কে। এর মাঝে একটি গাড়ি সরাসরি হেতিমগঞ্জ থেকে কোর্ট পয়েন্ট হয়ে মেডিকেলের দিকে গিয়ে বাগবাড়ি সড়ক দিয়ে পৌঁছাত টুকের বাজার। এই সড়কে ভালো ব্যবসাও হতো। কিন্তু কিছুদিন চলাচল করার পর বাগবাড়ি এলাকার কাউন্সিলর বাগবাড়ি সড়কের উপর গেট নির্মাণ করে দেন। তাই এই সড়ক দিয়ে গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সময় সময় অটোরিকশা চলাচল বাড়তে থাকে। এতে করে যাত্রীরা টাউনবাস থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন। তাছাড়া সিটি কর্পোরেশন থেকে কোন স্ট্যান্ড না দেওয়ার কারণে দেখা দেয় পুলিশি ঝামেলা। নানা সমস্যার কারণে মালিকরা গাড়ি বিক্রি শুরু করেন।
তবে সিটি কর্পোরেশন, প্রশাসনসহ সকলের সহযোগিতা পেলে আবারো টাউন বাস পূর্বের অবস্থা ফিরে পাবে বলে তিনি মনে করেন। টাউন বাস মালিক সমিতির এই সভাপতি বলেন, সিটি কর্পোরেশন যদি একটি স্ট্যান্ড করে দেন একই সাথে বাগবাড়ি সড়ক দিয়ে গাড়ি চলাচল করার সুযোগ করে দেওয়া হয় তাহলে এই সড়কে প্রতিদিন অন্তত ১৫ থেকে ২০টি বাস ছেড়ে যেতে পারবে। একই সাথে কোর্ট পয়েন্ট থেকে আম্বরখানা হয়ে লাক্কাতুরা স্টেডিয়াম পর্যন্ত প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫টি গাড়ি চালানো সম্ভব।
বিভিন্ন জটিলতার কারণে টাউন বাস চালু রাখা কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে জানান তিনি।
জিয়াউল কবির পলাশ আরও বলেন, প্রায় দুই বছর আগে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী টাটা কোম্পানির সাথে একটি চুক্তির উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তখন আমাদেরকে নিয়ে টাটা কোম্পানির সাথে দুটি মিটিংও হয়েছিলো। টাটা কোম্পানি আমাদেরকে ৯৯ হাজার টাকা প্রদান সাপেক্ষে কিস্তিতে ৩১ আসনের গাড়ি দিতে রাজি হলেও পরবর্তিতে মেয়র কারাগারে থাকায় তা আর কার্যকর হয়নি বলে জানান তিনি।
এ ব্যাপারে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, নতুন করে টাউন বাস আনার ব্যাপারে টাটা কোম্পানির সাথে একটি চুক্তির আলোচনা চলছে। টাটা কোম্পানি থেকে লোক আসবে। যারা বর্তমানে টাউন বাস চালাচ্ছেন তাদেরকে সাথে নিয়ে আমরা শীঘ্রই টাটা কোম্পানির সাথে চুক্তির বিষয়টি একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছাবো। টাউন বাস আরও বাড়ানো, একই সাথে নতুন করে কোন কোন সড়ক যুক্ত করা যায় এসব বিষয় নিয়েও ইতিমধ্যে পরিকল্পনা শুরু করেছেন বলে জানান তিনি।
from Sylhet News | সুরমা টাইমস http://ift.tt/2Cxzwxr
December 18, 2017 at 12:48PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন