আমরা বিজয়ী জাতি,কারোর কাছে মাথানত করে চলবো না-প্রধানমন্ত্রী

সুরমা টাইমস ডেস্ক:: মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও ত্যাগের মহিমায় নিজেদের গড়ে তোলার জন্য দেশের নতুন প্রজন্মের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিজয় দিবস উপলক্ষে আজ শনিবার (১৬ই ডিসেম্বর) বিকেলে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বক্তৃতায় তিনি এ আহ্বান জানান।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা বীরের জাতি, যুদ্ধ করে দেশকে স্বাধীন করেছি। এ কথা কখনোই ভুললে চলবে না। আমরা বিজয়ী জাতি, কারোর কাছে মাথানত করে চলি না, চলবো না। সারা বিশ্বের সামনে বিজয়ী জাতি হিসেবে আমরা সবসময় মাথা উঁচু করে চলবো। দেশে যাতে আর কোনো অন্যায়-অনিয়ম না হয়, বাংলাদেশের মানুষ শান্তিতে বসবাস করতে পারে, যুগের পর যুগ এভাবেই বিজয়ের আনন্দ-উৎসবে মেতে থাকতে পারে- বিজয়ের দিনে এই আমাদের প্রতিজ্ঞা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ’৭৫-এর ১৫ই আগস্ট সবাইকে হত্যা করে ঘাতকরা বঙ্গবন্ধুর পুরো রক্তকেই ধ্বংস করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু পারেনি। দেশবাসী আমাদের দেশ সেবার সুযোগ দেওয়ার কারণেই বাংলাদেশকে আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সমৃদ্ধ করে গড়ে তুলছি। বাংলাদেশ আজ সবদিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছে।
সারা বিশ্বের সামনে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল।
এ সময় দেশবাসীকে বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকেই ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা দিয়েছিলেন- ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম’। এই ভাষণের পথ ধরেই আমাদের এই স্বাধীনতা। বঙ্গবন্ধুর একটিমাত্র ভাষণে দেশের প্রতিটি ঘর এক একটি দুর্গে পরিণত হয়। বঙ্গবন্ধুর প্রতিটি নির্দেশ বাঙালি জাতি অক্ষরে অক্ষরে পালন করে যুদ্ধ করে দেশকে স্বাধীন করে। হাতে গোনা কয়েকটি রাজাকার-আলবদর ও পাকিস্তানের দোসর ছাড়া দেশের প্রতিটি মানুষ পাকিস্তানি শত্রুদের পরাজিত করে বুকের রক্ত ঢেলে দিয়ে।
তিনি আরো বলেন, ঐতিহাসিক এই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই বীর বাঙালিদের কাছে পাকিস্তানের ৯৬ হাজার সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণে বাধ্য হয়। ২৫শে মার্চ পাক হানাদাররা গণহত্যা চালানোর পর ২৬শে মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে শেষ শত্রু থাকা অবস্থায় যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন। এ অপরাধে পাক হানাদাররা বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে পাকিস্তানে নিয়ে যায় এবং প্রহসনের বিচারের মাধ্যমে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যার চেষ্টা করে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আন্তর্জাতিক চাপে এবং তাদের ৯৬ হাজার সৈন্যের প্রাণ বাঁচানোর কারণে পাক হানাদারদাররা বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। মুক্তি পেয়ে ১৯৭২ সালের ১০ই জানুয়ারি এই ঐতিহাসিক উদ্যানেই বঙ্গবন্ধু তার ভাষণে মুক্ত-স্বাধীন বাংলাদেশ কীভাবে পরিচালিত হবে তার নির্দেশনা দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ আজ পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ভাষণ হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে। বঙ্গবন্ধুর ভাষণকে ইউনেস্কো ‘ওয়ার্ল্ডস ডকুমেন্টারি হেরিটেজ’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। সারা বিশ্বের ঐতিহ্যে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ স্থান পাওয়ার কারণে সমগ্র বাঙালির সম্মান অনেক উচ্চস্তরে পৌঁছে গেছে, বাঙালি জাতির কাছে এটি গৌরবেরও।

এ ছাড়াও মুক্তিযোদ্ধাদের জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান হিসেবে আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিজয় দিবসের এই দিনে ঘৃণা ও ধিক্কার জানাই যারা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে পাক হানাদারদের দোসর হিসেবে আমাদের মা-বোনদের তাদের হাতে তুলে দিয়েছিল। ঘৃণা জানাই যারা রাজাকার-আলবদর-আলশামস হয়ে সারা দেশে গণহত্যা চালিয়েছে, আমাদের পরাজিত করতে চেয়েছে, কিন্তু আমরা পরাজিত হয়নি। বরং বীর বাঙালিরা তাদেরই পরাজিত করে বিজয়ী হয়েছে।

এই ভিডিও কনফারেন্সে নিজের বক্তব্যের পর সোহওয়ার্দী উদ্যানে উপস্থিত হাজার হাজার দর্শক-শ্রোতাদের মধ্য থেকে কয়েকজনের সরাসরি প্রশ্নেরও উত্তর দেন শেখ হাসিনা।

অনুষ্ঠান শেষে তিনি নতুন প্রজন্মের কয়েক তরুণের সঙ্গে জয় বাংলা স্লোগানের সঙ্গে কণ্ঠ মেলালে গোটা সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ওই স্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে।



from Sylhet News | সুরমা টাইমস http://ift.tt/2j7Bugh

December 16, 2017 at 11:46PM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top