ক্রিকেটটা যে ভদ্রলোকের খেলা, সেটার প্রমাণ বেশির ভাগ ক্রিকেটারই রাখেন। তবে মাঝেমধ্যে কিছু ঘটনা ক্রিকেটকে তুলে দেয় অন্য উচ্চতায়। নিছক জয়-পরাজয় ছাপিয়ে মূর্ত হয়ে ওঠে ক্রিকেটীয় চেতনা। সেদিন রাতে যেমন চট্টগ্রামের জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ক্রিকেটীয় চেতনাবোধের অনন্য এক উদাহরণ তৈরি করলেন তামিম ইকবাল। ঢাকা ডায়নামাইটসের বিপক্ষে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস অধিনায়ক প্রতিপক্ষের কেভিন কুপারকে আউটের পর উইকেটে আবার ফিরিয়ে আনেন। আউটের ধরনটা ঠিক খেলোয়াড়ি চেতনার সঙ্গে যায় না বলে। ক্রিকেট দুনিয়ায় তামিম এমন অনন্য সৌজন্যবোধের সর্বশেষ উদাহরণ। ক্রিকেট ইতিহাসে আউট হওয়ার পরও ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়ে আনার উদাহরণ খুব বেশি নেই। তামিমের আগে কিংবদন্তি গুন্ডাপ্পা বিশ্বনাথ, ইমরান খান, মহেন্দ্র সিং ধোনি, অ্যান্ড্রু সাইমন্ডস ও ড্যানিয়েল ভেট্টোরিরা এমন মহানুভবতার পরিচয় দিয়েছিলেন। ১৯৮০ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মুম্বাই টেস্টে গুন্ডাপ্পা বিশ্বনাথ ইংলিশ ব্যাটসম্যান বব টেলরকে ফিরিয়েছিলেন। আম্পায়ার তাঁর বিপক্ষে কট বিহাইন্ডের আবেদনে সাড়া দিলে টেলর মানতে পারেননি। আম্পায়ারকে বোঝাতে চাইছিলেন বল কোনোভাবেই তাঁর ব্যাট স্পর্শ করেনি। বিশ্বনাথ সতীর্থদের সঙ্গে আলোচনা করে টেলরকে ফেরান। ভারত ম্যাচটা হেরেছিল। কিন্তু বিশ্বনাথ প্রশংসিত হয়েছিলেন আন্তরিকভাবেই। ইমরান খান ১৯৮৯ সালে এমন একটা ঘটনার নায়ক। ভারতের বিপক্ষে লাহোর টেস্টে ওয়াকার ইউনিসের বলে কৃষ্ণমাচারি শ্রীকান্তের বিপক্ষে কট বিহাইন্ড দিয়েছিলেন আম্পায়ার। শ্রীকান্ত সেই সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ আর হতাশ হয়েই মাঠ ত্যাগ করছিলেন। কিন্তু লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে পাকিস্তানের সমর্থকদের অবাক করে দিয়ে ইমরান তাঁকে ডেকে পাঠান। মজার ব্যাপার হচ্ছে, পরের বলে ঠিক একইভাবে আউট হয়েছিলেন শ্রীকান্ত। ২০১১ সালে ইয়ান বেল বুঝতে পেরেছিলেন মহেন্দ্র সিং ধোনির ক্রিকেটীয় চেতনা। ডেড বল ভেবে ক্রিজের বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলেন বেল। একটি বিরতির আগে শেষ ওভার ছিল ওটা। আম্পায়াররা ওভারও ঘোষণা করেননি। এই সময় ধোনি বেলকে রান আউট করে দেন। কিন্তু পরক্ষণেই ব্যাপারটা ক্রিকেটীয় চেতনার সঙ্গে যায় না ভেবে সতীর্থদের সঙ্গে আলাপ করে বেলকে ডেকে নেন। ম্যাচটা ভারত হেরেছিল। ২০১২ সালে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে একটি ম্যাচে নন-স্ট্রাইকিং প্রান্তে থাকা লাহিরু থিরিমান্নে বেরিয়ে গেলে রান আউট করে দেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন। কিন্তু ব্যাপারটা ক্রিকেটীয় আইনে ঠিক থাকলেও ক্রিকেটীয় চেতনায় ঠিক হয়নি। সেটা বুঝতে পারেন শচীন টেন্ডুলকার আর বীরেন্দর শেবাগ। থিরিমান্নেকে ফেরান ভারতীয় ক্রিকেটের এই দুই গ্রেট। এমন আরও একটি ঘটনার সাক্ষী অ্যান্ড্রু সাইমন্ডস। ২০০৪ সালে শ্রীলঙ্কা-অস্ট্রেলিয়া ওয়ানডে ম্যাচে কুমার ধর্মসেনার বলে সাইমন্ডসের বিপক্ষে এলবিডব্লু দিয়েছিলেন আম্পায়ার। লঙ্কান ক্রিকেটাররা প্রাথমিক উদ্যাপনও সেরে ফেলছিলেন। কিন্তু পরক্ষণেই তাঁরা বুঝতে পারেন বল সাইমন্ডসের ব্যাটে লেগে প্যাডে লেগেছে। আম্পায়ারের ভুল সিদ্ধান্তটা সেদিন ফিরিয়ে দিয়েছিলেন লঙ্কান ক্রিকেটাররা। ২০০৬ সালে এক গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে টেন্ডুলকারের বিরুদ্ধে দেওয়া ভুল সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করেছিল অস্ট্রেলিয়া দল। ২০১২ সালে ড্যানিয়েল ভেট্টোরি জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ক্রিকেটীয় চেতনার অনন্য এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন। সুযোগ পেয়েও রেগিস চাকাভাকে আউট করেননি। ম্যাচটা টাই হয়েছিল। ক্রিকেটীয় চেতনাকেই বুধবার সন্ধ্যায় ঊর্ধ্বে তুলে ধরেছিলেন তামিম। ওই সিদ্ধান্তের কারণে তাঁর দল হেরেও যেতে পারত। ম্যাচটায় উত্তেজনা বেশ জমে উঠেছিল। কিন্তু তামিম দলের দিকে না তাকিয়ে ক্রিকেটীয় চেতনার দিকে তাকিয়েছিলেন। সেদিন তাঁর দল ম্যাচ শেষে জিতেছে। তবে ম্যাচ শেষ হওয়ার আগেই জিতে গিয়েছিলেন তামিম। এমএ/০৬:০০/০১ ডিসেম্বর



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2nkWkhi
December 02, 2017 at 12:07AM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top