সুরমা টাইমস ডেস্ক:: সিলেটের বিতর্কিত শিল্পপতি, বিভিন্ন মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামী রাগীব আলী উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ‘রাগীব নগর’ ব্যবহার করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
পাশাপাশি প্রতারণা করে রাগীব নগর পোষ্ট অফিস স্থাপনেরও অভিযোগ উঠে। উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন ও পোষ্ট অফিস বন্ধের দাবি জানিয়েছেন গ্রামবাসী। এ ব্যপারে তারা প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
মঙ্গলবার সিলেটের জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে এক স্মারকলিপিতে গ্রামের লোকজন এমন অভিযোগ করেন। পাশাপাশি তারা তালিবপুর নাম ঐহিত্য রক্ষা পরিষদের আহবায়ক কবি লায়েক আহমেদ নোমানসহ নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে হত্যার ষড়যন্ত্র ও ক্ষতি সাধনে লিপ্ত রাগীব আলী চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনেরও দাবি জানানো হয়। সিলেটের জেলা প্রশাসক রাহাত আনোয়ার স্মারকলিপি গ্রহন করেন।
স্মারকলিপিতে অতীতের বিভিন্ন বিতর্কিত কর্মকান্ড ও বিভিন্ন দপ্তরের প্রদানকৃত স্মারকলিপির কথাও উল্লেখ করা হয়। সিলেটের বিশ্বনাথ-দক্ষিণ সুরমার কামালবাজার এলাকার তালিবপুর গ্রামবাসী ও তালিবপুর মামলার বাদির পক্ষে প্রদান করা স্মারকলিপিতে গণ্যমান্য ব্যাক্তিরা সাক্ষর করেন।
স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, ২০১৫ সালে সিলেটের সহকারি জজ আদালত তালিবপুর গ্রামের নাম পরিবর্তন মামলায় (৭১/১০) ‘রাগীব নগর’ ঘোষনা ও ব্যবহার অবৈধ বলে রায় দেন। বিবাদী তখন জজ আদালতে আপিল করেন। আপিলের রায় বিবাদির পক্ষে গেলে ওই রায়ের বিরুদ্ধ হাইকোর্টে আপিল করা হয় এবং জজ আদালতের রায় স্থগিত করেন বিচারপতি। পরবর্তীতে হাইকোর্ট ডিভিশন ২০১৬ সালের ২২শে আগষ্ট সিভিল রিভিশন মামলায় (২৭৫১/১৬) বিচারপতি রাগীব নগরের উপর এক বছরের ইনজাংশন (নিষেধাজ্ঞা) জারি করেন। সর্বশেষ চলতি বছরের ৭ই আগষ্ট ‘রাগীব নগর’ নাম ব্যবহারে পুনরায় অন্তবর্তিকালীন নিষেধাজ্ঞা জারি করেন হাইকোর্ট ডিভিশন। কিন্তু রাগীব আলী ও তার লোকজন নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে তার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও কাগজপত্রে ‘রাগীব নগর’ ব্যবহার করছেন।
স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, তারাপুর চা বাগানের ভূমি জালিয়াতি ও প্রতারণা মামলার আসামী রাগীব আলী তালিবপুরের মাটিতে ‘রাগীব নগর’ পোষ্ট অফিস করেছেন। ওই পোষ্ট অফিসের অনুমতি নেওয়া হয় বিমানবন্দর এলাকার মালনিছড়ায়। কিভাবে সেটি তালিবপুরে করা হলো। অথচ কামালবাজার পোষ্ট অফিসও একই এলাকায়। এক কিলোমিটারের ভেতর কিভাবে রাগীব নগর পোষ্ট অফিস স্থাপিত হলো সেই বিষয়টি তদন্তেরও দাবি জানানো হয়। এমনকি এক পোস্ট মাস্টার ও এক পিয়নে দুটি পোষ্ট অফিস পৃথক দুটি সময়ে খোলা হচ্ছে। এটা কোন আইনে রয়েছে বলেও স্মারকলিপিতে প্রশ্ন তোলা হয়।
রাগীব আলী চক্র অবৈধভাবে রাগীব নগর প্রতিষ্ঠা করার জন্য এলাকার যুবসমাজকে নারী, মদ, ইয়াবা দিয়ে ধ্বংশের দিকে ঠেলে দিচ্ছে এবং এর মাধ্যমে তালিবপুরবাসীর বিপক্ষে একটি দল দাঁড় করানোর চেষ্টা করা হচ্ছে উল্লেখ করে স্মারকলিপিতে বলা হয়, স্থানীয়দের প্রতিবাদের মুখে অনেক অপরাধ স্পট বন্ধ হলেও বন্ধ হচ্ছে না রাগীব আলীর দোসরদের ফার্ম, তার বাড়ি ও হাসপাতাল, নিজাম উদ্দিনের বাসা, কামাল আহমদ শিশু, জামাল উদ্দিন মোল্লা, স্থানীয় এনজিও আশা ও এনামুল হক এনামের বাসস্থানের অসামাজিক আস্তানা।
রাগীব নগর ব্যবহারে হাইকোর্টের অন্তবর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞার পর এবং সম্প্রতি রাগীব আলী জেল থেকে জামিনে বের হওয়ার পর এলাকায় রাগীব আলী চক্রের উৎপাত বৃদ্ধি পেয়েছে
উল্লেখ করে বলা হয়, তালিবপুর নাম রক্ষা আন্দোলনের আহবায়ক কবি লায়েক আহমেদ নোমানসহ অন্যদের হত্যার চেষ্টা করা হচ্ছে। এ হত্যা প্রচেষ্টায় রয়েছে রাগীব আলী চক্রের হুতা তার ভাতিজা হান্নান। তার সাথে রয়েছে দুদু, এনাম, শিশুসহ অনেকেই। এ ছাড়া মিথ্যা মামলায় জড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। সম্প্রতি এলাকায় সন্দেহভাজন লোকের ঘুরাফেরা, সিএনজি, কার ও মোটর সাইকেলের আনাগুনা বৃদ্ধি পেয়েছে।
রাগীব আলী চক্রের হয়ে গিয়াস উদ্দিন সরকার ভান্ডারি নামে রহস্যজনক বহিরাগত এক ব্যাক্তি কবি নোমানকে হত্যার চেষ্টা করছে। সে বাইর থেকে এসে এনামুল হক এনাম, লন্ডন প্রবাসী রিয়াজ উদ্দিন, ইসলাম কমপ্লেক্সের ভাড়াটিয়া জামাল উদ্দিন মোল্লা ও আশা এনজিও সংস্থার বাসায় বসবাস করে। গিয়াসের অপকর্মে অতীষ্ঠ হয়ে ২০১৬ সালের ১৯শে মে লায়েক আহমদ নোমান প্রধানমন্ত্রী ববরাবরে স্মারকলিপি দেন। স্মারকলিপিতে ভান্ডারি গিয়াস একজন রহস্যজনক ব্যাক্তি উল্লেখ করে সে গুপ্তচর না জঙ্গি তা তদন্ত করার দাবি করা হয়।
স্মারকলিপিতে নভাগ তালিবপুরের ইউনুছ আলীর ছেলে এনামুল হক এনামের ঘরে দিনরাতে সন্দেহভাজন লোক ও যানবাহনের অবাধ যাতায়াতে তদন্তের দাবি করে বলা হয়, এনাম একটি নিষিদ্ধ সংগঠনের সাথে জড়িত। তার অপরাধ কর্মকান্ডের সাথে জড়িত রয়েছেন তার মা মায়া বেগম, বোন আলমা বেগম ও ভাবি আসমা বেগম। তার ঘর তল্লাশি করলে মোবাইল ফোন হ্যাকিং- ট্র্যাকিং করা যন্ত্র ও অচেনা পুরুষ এবং জাত বেজাতের মেয়ে থাকার কথা। অসময়ে রাতে তার ঘর থেকে মেয়ে-পুরুষ যাতায়াত করে। ওরা কারা। কোথা থেকে আসে আর কোথায় যায়। তাদের পেশাই বা কি? তাদের অপরাধ ও দৌড়াত্ম বিষয়ে প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপি বা অভিযোগ করলে তারা গা ঢাকা দেয়। কিছুদিন পর আবার কচ্ছপের ন্যায় মাথা বের করে।
কবি লায়েক আহমদের পক্ষ থেকে ২০১৬ সালের ২৬শে এপ্রিল সিলেটের জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবরে একটি স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। এই স্মারকলিপির প্রেক্ষিতে কবি নোমানের সমস্যা সাময়িক বন্ধ হলেও তার ঘরে প্রবেশের সমস্য এখনও সমাধান হয়নি। বিভিন্নভাবে লোকজন ঘরে প্রবশের আলামত পাওয়া যায়। এই ঘরে ঢুকার কারিগর এনামুল হক এনাম ও তার বাড়ির লোকজন ছাড়া কেউ প্রবেশ করেনা উল্লেখ করে বিষয়টিরও পূণঃতদন্ত দাবি করা হয়।
আদালতের নিষেধাজ্ঞার পর তালিবপুরবাসীর পেছনে রাগীব আলী নানা ষড়যন্ত্র করছেন দাবি করে স্মারকলিপিতে উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন, অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন, পোস্ট অফিসের কার্যক্রম বন্ধ, হত্যার ষড়যন্ত্র, গিয়াসের চক্রান্ত, অসামাজিকতা ও উৎপাৎ বন্ধ এবং কবি নোমানসহ তালিবপুর নাম রক্ষা আন্দোলনের নেতৃবৃন্দের নিরাপত্তা বিধানে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়।
স্মারকলিপি প্রদানকালে উপস্থিত ছিলেন, তালিবপুর নাম রক্ষা পরিষদের আহবায়ক কবি লায়েক আহমেদ নোমান, বিশ্বনাথ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ওয়াহিদ আলী, পরিষদের সচিব শাহ মো. ওয়ায়েছ মিয়া, ব্যবসায়ী মাসুক মিয়া, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা তাজুল ইসলাম তাজু, তালিবপুর নাম রক্ষার মামলার বাদি আবু সাইদ, মুরব্বি তমিজ উদ্দিন, মকবুল আলী, আহমদ আলী প্রমুখ।
from Sylhet News | সুরমা টাইমস http://ift.tt/2AYe0Fv
December 05, 2017 at 11:41PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন