ঢাকা, ১৯ জানুয়ারি- জোর করে অনেকেই এটাকে বাংলাদেশ আর হাথুরুসিংহের লড়াই বলে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছেন। এই লঙ্কান প্রায় চার বছর বাংলাদেশের কোচের দায়িত্ব পালন করেছেন। এখন তিনি শ্রীলঙ্কার কোচ। তাই আজ টাইগারদের সাথে লঙ্কানদের খেলাকেও কোন কোন পক্ষ হাথুরুসিংহে আর বাংলাদেশের লড়াই বলে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছেন। এবং সবচেয়ে বড় কথা হলো, সেটা শ্রীলঙ্কার পক্ষ থেকে নয়। বাংলাদেশের ক্রিকেট অনুরাগিদের মধ্য থেকেই এমন কথা প্রচারের চেষ্টা চলেছে। বোঝাই যাচ্ছে, হাথুরুর হঠাৎ চলে যাওয়ার ধরণ, যাবার আগে ও পরে নানা কথা বার্তা এবং কোচিংয়ের পাশাপাশি বাড়তি খবরদারি, নজরদারি এবং দল নির্বাচনে মাতব্বরির কারণে বাংলাদেশ সমর্থক মহলের একটা বড় অংশের বিরাগভাজন এখন তিনি। রীতিমত রোষানলে এ লঙ্কান কোচ। এক কথায়, রাজধানী ঢাকা সহ দেশের সর্বত্র একটা হাথুরু বিরোধী সেন্টিমেন্ট তৈরি হয়েছে। সেই সমর্থকরা শ্রীলঙ্কার সাথে ম্যাচকে নিয়েছেন অন্যভাবে। তাদের মনোভাবটা এমন- কাপ ঘরে তোলা সম্ভব হোক আর নাই হোক; শ্রীলঙ্কাকে হারাতেই হবে। লঙ্কানদের হারানোই হবে হাথুরুকে সমুুচিত জবাব দেয়া। দর্শক ও ভক্তদের মধ্য থেকে এমন আবেগতাড়িত কথা বার্তা অনেকটা ঝাঁঝালো স্লোগানের মত ছড়িয়ে পড়েছে গোটা দেশে। সে কারণেই হয়তো আগের দুই ম্যাচের তুলনায় আজ শেরে বাংলায় অনেক বেশি দর্শক হয়েছিল। অন্তত হাজার কুড়ি দর্শক এসেছিলেন খেলা দেখতে। লড়াইটা বাংলাদেশ আর শ্রীলঙ্কার। তার উপর সাপ্তাহিক ছুটি, দর্শক হতেই পারে। তারপরও এত দর্শক হবে, এমন ধারণা ছিল না কারোরই। দর্শক উপস্থিতিই বলে দিচ্ছিল, আজকের খেলাটা আসলে বাংলাদেশের ভক্ত ও সমর্থকদের মনে অন্যরকম সাড়া ফেলেছে। প্রিয় জাতীয় দলকে উদ্যমী করে তুলতেই আসলে মাঠে এসেছিলেন এত সমর্থক। তাদের অনেকেই চেয়েছিলেন মাশরাফির দল জিতুক। সে জয় হবে হাথুরুর বিপক্ষে জয়। দর্শক ও ভক্তদের কেউ কেউ বা একটা অংশ এমন চিন্তা-ভাবনা করতেই পারেন। সেটা তাদের মত ও দৃষ্টিভঙ্গি। তবে দুদলের কোনো ক্রিকেটার ও কোচিং স্টাফই কিন্তু তিন জাতি ক্রিকেটে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা ম্যাচকে হাথুরুর সাথে টাইগারদের লড়াই মানতে রাজি হননি। বাংলাদেশের সহকারি কোচ রিচার্ড হ্যালসল, লঙ্কান ব্যাটিং কোচ থিলান সামারাবিরা, টাইগার অধিনায়ক মাশরাফি; সবাই এমন চিন্তার বিপক্ষে কথা বলেছেন। তাদের সবার কথা ছিল একটাই, খেলাটা বাংলাদেশের সাথে শ্রীলঙ্কার। কোনোভাবেই বাংলাদেশ আর হাথুরুর নয়। আর পেশাদারিত্বের যুগে এমন ভাবনার কোনো যৌক্তিকতাও নেই। ক্রিকেট, ফুটবলে একজন আন্তর্জাতিক কোচের দলবদল খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। আজ এই দলের কোচ তো কাল ওই দলের দৌনাচার্য্য-এটাই রীতি। ক্রিকেটে কোচের দল পাল্টে এক দেশ থেকে আরেক দেশের কোচ হবার নজির আছে বেশ কটি। শ্রীলঙ্কার বিশ্বকাপ বিজয়ী কোচ ডেভ হোয়াটমোর পরে বাংলাদেশ, পাকিস্তান, জিম্বাবুয়ের কোচের দায়িত্ব পালন করেছেন। ভারতকে কোচিং করানো জন রাইট পরবর্তীতে নিজ দেশ নিউজিল্যান্ডের কোচ হিসেবে ভারতের বিপক্ষেও লড়াই করেছেন। একইভাবে ফিল সিমন্স নিজের দেশ ওয়েস্ট ইন্ডিজ, আয়ারল্যান্ডের পর এখন আফগানিস্তানের কোচ হয়েছেন। তারা যখন এক দল ছেড়ে অন্য দলে কোচিং করাতে গেছেন, তখন ওই দুই দলের লড়াইকে নিশ্চয়ই জন রাইট, হোয়াটমোর আর ফিল সিমন্সের সাথে লড়াই বলে অভিহিত করা হয়নি। তারপরও যারা এ ম্যাচকে হাথুরুর সাথে টাইগারদের লড়াই বলে ভেবেছেন, এখনো তাই ভাবছেন; তাদের জন্য এক বিশেষ বার্তা আছে। দিয়েছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটের সোনার ছেলে জাতীয় দলের প্রাণভোমরা সাকিব আল হাসান। এ ম্যাচের সাথে হাথুরুসিংহেকে না জড়ানোর উদাত্ত অাহ্ববান বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডারের। আরও পড়ুন: শ্রীলংকাকে ১৬৩ রানের বড় ব্যবধানে হারাল টাইগাররা আজ ব্যাট (৬৩ বলে ৬৭) ও বল হাতে (৩/৪৭) নৈপুণ্যের দ্যুতিতে মাঠ আলোকিত করার পাশাপাশি শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশের জয়ের নায়ক হওয়া সাকিব খেলা শেষে অনেক কথার ভিড়ে সবান্ধব অনুরোধ রেখেছেন, প্লিজ আমরা তো মাথায় আনছিই না। দয়া করে আপনারাও (মিডিয়া) মাথায় আইনেন না। ম্যাচের পর অফিসিয়াল ব্রিফিংয়ে এসেছিলেন সাকিব। তার কাছে বার তিনেক হাথুরু ইস্যুতে প্রশ্ন করা হলো। বার বারই কৌশলে তা এড়িয়ে গেলেন সাকিব। কোনোভাবেই এ ম্যাচের সাথে হাথুরুসিংহেকে জড়াতে চাইলেন না। তারপরও একদম শেষে প্রশ্ন উঠলো, আচ্ছা হাথুরুসিংহে তো কোচ পদ থেকে পদত্যাগের পর আপনাদের নিয়ে নানা কথা বার্তা বলেছেন। আপনাদের কারো কারো মানসিকতা আর অ্যাপ্রোচের সমালোচনাও করেছেন। তা নিয়ে আপনারা কি ভিতরে ভিতরে তেঁতে ছিলেন? আজকের ম্যাচে আপনাদের মধ্যে হাথুরুসিংহেকে দেখিয়ে দেবার জেদ ছিল কী? সাকিবের সোজা সাপটা জবাব, আমরা ওসব কিছুই মাথায় নেইনি। আমি চাই আপনারাও যাতে মাথায় না নেন। সাকিবের এ বার্তা নিশ্চয়ই শুধু মিডিয়ার জন্য নয়। ভক্ত ও সমর্থকরাও কি দয়া করে প্রিয় ক্রিকেটারের কথা মন দিয়ে শুনবেন? আর/১০:১৪/১৯ জানুয়ারি
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2Bfv7OP
January 20, 2018 at 04:23AM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন