সুরমা টাইমস ডেস্কঃ অস্ত্রের মুখে তুলে নিয়ে জোরপূর্বক বিয়ে করা ক্ষমতা অপব্যবহারকারী পুলিশের ডিআইজি মিজানের অপরাধের ফিরিস্তি যেন শেষ হচ্ছে না। জানা গেছে, পুলিশে চাকরি নেয়ার আগে থেকেই অপরাধ জগতের সঙ্গে এই পুলিশ কর্মকর্তার সখ্য ছিল।
সূত্র মতে, ডিআইজি মিজান ছাত্র থাকা অবস্থায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকাশ্যে মেয়েদের জুতাপেটা খেয়েছেন। তিনজন মেয়ে তাকে সেদিন জুতাপেটা করে। সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি থাকাবস্থায় নারী কেলেঙ্কারি ঘটনা ঘটিয়েছিলেন তিনি। এমনকি পুলিশ কনস্টেবল নারী সদস্যরাও তার নির্যাতন থেকে রেহাই পায়নি। সিলেটে থাকাকালে ডিআইজি মিজানের বাসায় সব সময় সুন্দরী রমনীদের যাতায়াত বা দহরম মহরম ছিল বলে জানা গেছে। বিশেষ করে কুমিল্লার তানিয়া ইয়াসমিন মনির নাম ওই সময় সবার মুখে মুখে ছিল। ওই মনিকে দিয়েই সিলেটের জৈষ্ট্য সাংবাদিক চৌধুরী মমকে মিথ্যা মামলায় ফাসিয়েছিলেন ডিআইজি মিজান। টার্গেটে ছিলেন সিলেটের আরো ৩জন সাংবাদিক। মিজানের সময় সিলেটে বাড়ি পুলিশ সদস্যদের উপর ছিলো তার তৈরী নিজস্ব কালো আইন, এসএমপির করা সেই তালিকা সহ অনেক অজানা কাহিনী এখনও চাউর আছে।
পুলিশের অনেক উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানেন তার চরিত্র সম্পর্কে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর অনেকেই বলছেন, তার চরিত্র ভাল নয়।
বর্তমানে নামমাত্র প্রত্যাহার হওয়া ডিআইজি মিজান জামাই আদরে থেকে ভুক্তভোগীর পাশাপাশি সাংবাদিকদেরও হুমকি দিতে পারছে। এখানেই শেষ নয়, নারী কেলেঙ্কারীর ঘটনায় ডিআইজি মিজান সাংবাদিকদের হত্যার হুমকির পর ডিএমপির ভাটারা থানা সাধারণ ডায়েরিও নেয়নি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী যারা ডিআইজি মিজানের সহপাঠী ছিলেন তাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, ছাত্র থাকাবস্থায় একাধিক নারীঘটিত কেলেঙ্কারীর জন্ম দেন মিজান। তার প্রকাশ্যে জুতাপেটার খাওয়ার ঘটনাও সেসময় সবার মুখে মুখে ছিল।
এদিকে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইজিপি, ডিএমপি কমিশনার বলছেন, দেখছি, তদন্ত করছি। দশদিন পার হয়ে গেলো প্রকাশ্যে ডিআইজি মিজান সাংবাদিকদের প্রাণহানির হুমকি দিলেও ব্যবস্থা নেয়নি কতৃপর্ক্ষ।
সম্প্রতি শেষ হওয়া পুলিশ সপ্তাহের আগে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মিজানের বিরুদ্ধে ‘এক নারীকে অস্ত্রের জোরে তুলে নিয়ে বিয়ে করা’ এবং ‘ক্ষমতার অপব্যবহারের’ অভিযোগ উঠে। আবার বিয়ে করার পর নির্যাতন চালানোর অভিযোগ রয়েছে।
এই ঘটনা প্রকাশ হওয়ার পর মিজানকে প্রত্যাহার করে ডিএমপি। আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল পুলিশ সপ্তাহ শেষে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছিলেন। তবে পুলিশ সপ্তাহ শেষ হলেও মিজানের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে সেটা জানানো হয়নি।
ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তে অতিরিক্ত আইজিপি মঈনুর রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগের তদন্তে অসততা, ও আইন বহির্ভূত কাজ প্রমাণিত হলে মিজানের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও নিশ্চয়তা দেন ডিএমপি কমিশনার।
ডিআইজি মিজানের বিষয়ে সংবাদ প্রকাশের পর তিনি দুই সাংবাদিককে হত্যার হুমকি দিয়েছেন। আর এই দুই সাংবাদিকের জিডি পুলিশ নিচ্ছে না বলে অভিযোগ আছে। এ বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার বলেন, যদি কোনো কারণে জিডি না নেওয়া হয়, তার উপরস্থ স্তরে (আদালত) অভিযোগ করা যেতে পারে।
উল্লেখ্য, মরিয়ম আক্তার ইকো নামের এক নারী ব্যাংক কর্মকর্তা সম্প্রতি গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন গত জুলাই মাসে তার বাসা থেকে তাকে কৌশলে তুলে নিয়ে গিয়েছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা মিজান। পরে বেইলি রোডে তার বাসায় নিয়ে তিন দিন আটকে রাখা হয়েছিল ওই নারীকে।
আটকে রাখার পর বগুড়া থেকে তার মাকে ১৭ জুলাই ডেকে আনা হয় এবং ৫০ লাখ টাকা কাবিননামায় ডিআইজি মিজানকে বিয়ে করতে বাধ্য করা হয়। পরে লালমাটিয়ার একটি ভাড়া বাড়িতে ওই নারীর সঙ্গে বসবাস করেছেন ডিআইজি মিজান।
নিজের ফেসবুকে স্ত্রী পরিচয় দিয়ে একটি ছবি শেয়ারের পর ওই নারীর ওপর ক্ষেপে যান মিজান। বাড়ি ভাঙচুরের একটি মামলায় তাকে গত ১২ ডিসেম্বর কারাগারে পাঠানো হয়। সেই মামলায় জামিন পাওয়ার পর মিথ্যা কাবিননামা তৈরির অভিযোগে আরেকটি মামলায় তাকে আটক দেখানো হয়। দুই মামলাতেই জামিনের পর ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ তোলেন ওই নারী।
from Sylhet News | সুরমা টাইমস http://ift.tt/2G1n7Vj
January 22, 2018 at 08:25AM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন