সুরমা টাইমস ডেস্ক::
সদ্য বিদায়ী বছর ২০১৭ সালে প্রতিদিন গড়ে ১৪ জনের বেশি নারী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। আর ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৩ জনের বেশি নারী। ধর্ষণের ঘটনা বেশি ঘটেছে আগস্ট মাসে। ১২৮ জন নারী ও কন্যা শিশু ধর্ষণের শিকার হয়। আর জুলাই মাসে নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে বেশি। ৫৪৪ জন নারী জুলাই মাসে নির্যাতনের শিকার হয়। ২০১৬ সালে প্রতিদিন গড়ে নির্যাতনের শিকার হয় ১৩ আর ধর্ষণের শিকার হয় দুই জনের বেশি নারী। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের বার্ষিক প্রতিবেদনে এমন ভয়াবহ চিত্রই উঠে এসেছে।
পরিষদের তথ্য মতে, ২০১৭ সালে ৫ হাজার ২৩৫ নারী নির্যাতনের শিকার হয়। ধর্ষণের শিকার হয়েছেন এক হাজার ২৫১ জন। এর মধ্যে গণধর্ষণের শিকার হয়েছে ২২৪ জন, ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৫৮ জনকে। এছাড়া ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে ১৮০ জনকে। ২০১৬ সালে চার হাজার ৮৯৬ জন নারী ও কন্যা নির্যাতনের শিকার হয়। এর মধ্যে ৮৪০টি ধর্ষণ ও ১৬৬টি গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। ২০১৫ সালে এ সংখ্যা যথাক্রমে চার হাজার ৪৩৬, ৮০৮ ও ১৯৯, ২০১৪ সালে চার হাজার ৬৫৪, ৬৬৬ ও ১৭৪টি। ২০১৭ সালে ১৯৭টি, ২০১৬ সালে ১৭৭টি, ২০১৫ সালে ৯৪টি, ২০১৪ সালে ৯৩টি বাল্য বিয়ের ঘটনা ঘটেছে।
মানবাধিকার কর্মীরা দাবি করছেন, প্রতি বছরই অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে বাড়ে ধষর্ণ ও নারী নির্যাতনের ঘটনা। ২০১৭ সালেও ছিল নারীর প্রতি সহিংসতার এমন কিছু ঘটনা ঘটেছে, যা স্তম্ভিত করেছে পুরো জাতিকে। তারা বলছেন, ঢাকার বনানীর একটি হোটেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রীকে ধর্ষণ, বগুড়া থেকে ময়মনসিংহ যাওয়ার পথে চলন্ত বাসে জাকিয়া সুলতানা রূপাকে গণধর্ষণ করে হত্যা করে। পরে তার মৃতদেহ মধুপুরের জঙ্গলে ফেলে দেয়া; বগুড়ায় এসএসসি পাস এক শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ করে পরে মা ও মেয়েকে মাথা ন্যাড়া করা কিংবা চট্টগ্রামের পটিয়ায় এক বাড়িতে চার নারী ধর্ষণের ঘটনা দেশবাসীকে স্তম্ভিত করে দেয়। বখাটেদের যৌন নির্যাতনের প্রতিকার না পেয়ে ক্ষোভে-দুঃখে গাজীপুরের শ্রীপুরে বাবা-মেয়ের চলন্ত ট্রেনের নিচে ঝাঁপিয়ে পড়ে মৃত্যুর ঘটনা বিচারহীনতার সংস্কৃতি চিত্রই তুলে ধরেছে। পারিবারিক, সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে নারীদের সুরক্ষা না থাকায় নারী নির্যাতন আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে বলে মনে করেন তারা।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়শা খানম বলেন, নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে সরকার, নারী উন্নয়ন সংগঠন সবাই মিলে কাজ করছে কিন্তু তারপরও এই ধরনের সহিংসতা বেড়ে চলেছে। দেশে নারীর প্রতি সহিংসতার মূলে রয়েছে প্রতিরোধের অভাব, পিতৃতন্ত্র ও বৈষম্যমূলক আইন। আইনের প্রচার, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা থাকতে হবে এবং বিচার বিভাগকে জেন্ডার সেনসেটিভ হতে হবে।
মানবাধিকারকর্মী ও জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির সাবেক নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট সালমা আলী। তিনি বলেন, দেশে নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে আইন আছে। কিন্তু আইনের প্রয়োগ নেই। নির্যাতনের অনেক ঘটনায় মামলা হলেও বিচার প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতার কারণে অনেকে আপস-মীমাংসা করতে বাধ্য হচ্ছেন। বর্তমান সরকারের প্রচেষ্টায় নারী নির্যাতন প্রতিরোধে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হলেও, পরিস্থিতি বিশ্নেষণে নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতার দৃশ্যমান কোন পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়নি। বরং বিচারহীনতার কারণে নির্যাতনের ভয়াবহতা ও নৃশংশতা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত হলে সমাজে অপরাধ প্রবণতা কমে আসে।
from Sylhet News | সুরমা টাইমস http://ift.tt/2qmnmqe
January 04, 2018 at 12:52AM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন