সুরমা টাইমস ডেস্ক:: ছাত্রলীগের কোনো কর্মকাণ্ডে সরকারের অর্জন যেন ম্লান না হয় সে ব্যাপারেও সতর্ক থাকতে এবং যে কোনো মূল্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে ছাত্রলীগকে কড়া নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা।
গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ছয়টা থেকে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত ছাত্রলীগের নেতাদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতারা বৈঠক করেন বলে জানা গেছে। বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকার বিভিন্ন শাখার এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
চলতি বছরকে নির্বাচনী বছর হিসেবে উল্লেখ করে বিতর্কিত কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকতে ছাত্রলীগের প্রতি কড়া নির্দেশ দিয়ে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতারা বলেছেন, ছাত্রলীগের কোনো খারাপ কর্মকাণ্ডের দায় সরকার ও আওয়ামী লীগ। ফলে যারাই বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়াবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময় উপাচার্যের কার্যালয় ভাঙচুর এবং উপাচার্যকে উদ্ধার করতে গিয়ে ছাত্রলীগের সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ার ঘটনার দুই দিন পরে এ বৈঠক হচ্ছে। বৈঠকে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম এনামুল হক শামীম উপস্থিত ছিলেন। দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নির্দেশে এ বৈঠক করেন তারা।
বৈঠকে ঢাকার সাত কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করার ফলে সৃষ্ট পক্ষ-বিপক্ষের আন্দোলন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কার্যালয় ভাঙচুর এবং তাকে উদ্ধার করতে গিয়ে ছাত্রলীগের সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ার বিষয়ে ছাত্রনেতাদের বক্তব্য শোনেন আওয়ামী লীগ নেতারা।
বৈঠকে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক সাংবাদিকদের বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে একটি মহল বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শান্তিশৃঙ্খলা বিনষ্ট করার চেষ্টা করছে। গত ২৩শে জানুয়ারী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ঘটনাটি পরিকল্পিত।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাত কলেজ অধিভুক্ত হওয়ার বিষয়ে কলেজগুলোর শাখা ছাত্রলীগ নেতাদের মনোভাব শোনেন আওয়ামী লীগ নেতারা। এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতাদের বক্তব্যও শোনেন তারা। বৈঠক থেকে ছাত্রলীগকে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের ভূমিকা কী হতে পারে, তারও একটি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বৈঠক সূত্র জানায়, রুদ্ধদ্বার বৈঠকে ঢাবির পরিস্থিতি ছাড়াও ছাত্রলীগের আসন্ন সম্মেলন নিয়ে কথা বলেন সংগঠনের সিনিয়র নেতারা।
মঙ্গলবার ছাত্রী নিপীড়নে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতাদের বহিষ্কারের দাবিসহ চার দফা দাবিতে প্রশাসনিক ভবনের ফটক ভেঙে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামানকে অবরুদ্ধ করেন শিক্ষার্থীরা। সেখানে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের পিটিয়ে উপাচার্যকে ‘উদ্ধার’ করেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। এ ঘটনায় অন্তত ৫০ জন আহত হন। রাজধানীর সরকারি সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিলের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ১৫ই জানুয়ারি উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন। সেখানে ছাত্রলীগ নেতারা ছাত্রদের ছত্রভঙ্গ করে আন্দোলন নস্যাত্ করে দেন। এর প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা ১৭ই জানুয়ারি প্রক্টর কার্যালয়ের ফটক ভেঙে প্রক্টরকে অবরুদ্ধ করেন। পরদিন অজ্ঞাতনামা ৫০-৬০ জনকে আসামি করে মামলা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এরপর থেকে টানা আন্দোলন করে আসছেন শিক্ষার্থীরা।
এসময় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতারা অভিযোগ করেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তথাকথিত আন্দোলনের নামে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির জন্যই এই আন্দোলন করছে কতিপয় সংগঠন। আসলে তারা নির্বাচনী পরিবেশ ঘোলা এবং নির্বাচনের আগ মুহূর্তে শিক্ষার পরিবেশকে নষ্ট করতে চায়। তারা বলেন, ছাত্রলীগকে নিয়ে গণমাধ্যমও অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছে। ছাত্রলীগ কোন হামলার সঙ্গে জড়িত হয়নি বরং ভিসিকে উদ্ধার করতে গিয়ে তাদের আক্রমণের শিকার হয়েছে।
বৈঠক শেষে বেরিয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম সাংবাদিকদের বলেন, আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনাকাঙ্খিত ঘটনার জন্য ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দকে নিয়ে বসেছিলাম। তাদের বক্তব্য শুনেছি। আমরা নির্দেশ দিয়েছি, কারো উস্কানিতে কান না দিতে। কারণ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে নানামুখী ষড়যন্ত্র হতে পারে। তাই ক্যাম্পাসে অরাজক পরিস্থিতির পায়তারা হতে পারে। যে ঘটনা ঘটেছে তা সুষ্ঠ তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এতে যদি ছাত্রলীগও জড়িত থাকে তাহলে তাদেরও শাস্তি পেতে হবে।
আর দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক সাংবাদিকদের বলেন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে একটি মহল বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শান্তি-শৃঙ্খলা বিনষ্ট করতে লিপ্ত হয়েছে। গত ২৩শে জানুয়ারী ঢাবি ক্যাম্পাসের ঘটনাটি পরিকল্পিত। বিভিন্ন বাম ছাত্রসংগঠনের ব্যানারে বহিরাগতরা সেখানে গিয়েছিল। তারা ভাঙচুর ও ভিসিকে অবরুদ্ধ করে পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে নিয়ে গেছে, যে কোনো অঘটন সেদিন তারা ঘটাতো। এ অবস্থায় ছাত্রলীগ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হয়ে ভিসিকে উদ্ধার করতে এগিয়ে আসে। যেকোনো পরিস্থিতিতে ঢাবিসহ প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেকোনো মূল্যে শান্তি বজায় রাখতে হবে। এজন্য ছাত্রলীগকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
from Sylhet News | সুরমা টাইমস http://ift.tt/2neALwx
January 26, 2018 at 06:26PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Click to see the code!
To insert emoticon you must added at least one space before the code.