সুরমা টাইমস ডেস্ক ঃঃ ‘মা আমার শরীর জ্বলে-পুড়ে যাচ্ছে। আমি মরে গেলে আমার আঁখি মনির কি হবে? আমি মরে গেলে তোমরা ওকে দেখে রেখ। ওকে বাঁচিয়ে রেখ।’
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের বি-১২নং বেডে আগুনে দগ্ধ হয়ে কাতরাচ্ছেন জবা আক্তার (২০)। আর তার সদ্যজাত শিশু আঁখির চিন্তায় অস্থির হয়ে এসব কথা বলছিলেন তার পাশে থাকা স্বজনদেরকে।
দেশজুড়ে এখন হাড় কাঁপানো ঠাণ্ডা পড়ছে। উত্তরাঞ্চলে শীতের তীব্রতা আরো বেশি। কনকনে এই ঠাণ্ডার হাত থেকে বাঁচতে দরিদ্র অসহায় ছিন্নমূল মানুষেরা খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন।
আর এ থেকে ঘটছে অনেক সময় দুর্ঘটনা। গত ১০ জানুয়ারি (বুধবার) সকালে কুড়িগ্রামে বাবার বাড়িতে খড়কুটো জ্বালিয়ে আগুনের উত্তাপ নিচ্ছিলেন জবা আক্তার। এসময় অসাবধানতাবশত তার পরনে কাপড়ে আগুন ধরে যায়। এতে তার সমস্ত শরীর পুড়ে যায়। এখন মৃত্যুর সাথে পাঞ্চা লড়ছেন তিনি।
৬ দিন ধরে রংপুরের বার্ন ইউনিটে কাতরাচ্ছেন জবা। ৩৬ দিন শিশু কন্যা আঁখিকেও বুকের দুধ পান করাতে পারছেন না। তার দুগ্ধজাত শিশুর কি হবে সেই চিন্তায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন তিনি।
হাসপাতালে শয্যার পাশে থাকা জবার শাশুড়ি আমেনা বেগম তাকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন এই বলে, মা তোর কিছুই হয়নি, ভাল হয়ে যাবি।
আর জবার মা ফজিয়া অপলক দৃষ্টিতে শুধু থাকিয়ে আছেন মেয়ের ব্যান্ডেজ করা সারা শরীরের দিকে। নিজের অজান্তে চোখের পানি গড়িয়ে পড়ছে তার। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলছেন, আমার ছোট মেয়েটির জীবনে এমন বিপদ আসবে কখনও ভাবতে পারিনি। তার ভুমিষ্ট কন্যা সন্তানেরই বা কি হবে।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে দগ্ধ জবার বড় ভাই আব্দুল আজিজ পরিবর্তন ডটকমকে জানান, জবা তার ৩৬ তিন বয়সী কন্যা সন্তানকে নিয়ে তাদের বাড়িতে বেড়াতে আসেন। সেদিন (গত বুধবার) প্রচণ্ড ঠাণ্ডা ছিল। সকাল আনুমানিক সাড়ে ৭টা থেকে ৮টার দিকে তার বোন বাড়ির উঠানে খড়ে আগুন জ্বালিয়ে তাপ নিচ্ছিলেন। এসময় তার অজান্তেই আগুন তার পরনের শাড়িতে ধরে যায়।
তিনি জানান, এসময় বাড়ির অন্যান্য লোকেরা কাজের সন্ধানে বাইরে ছিলেন। জবার চিৎকারে পাশের মানুষ এসে তাকে উদ্ধার করে। এরপর তাকে রংপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়।
তিনি বলেন, ডাক্তার বলছেন অবস্থা ভাল না। শরীরের ৭০ শতাংশ পুড়ে গেছে। জানি না আমার বোনটা বাঁচবে কিনা। যদি তার একটা কিছু হয়ে যায় সেখানে তার কন্যা সন্তানকে কিভাবে রক্ষা করব। এখন মাছুম বাচ্চাটার জন্য যদি বোনটা বেঁচে যায় তাহলে আল্লাহর কাছে লাখো শুকরিয়া। সবাই দোয়া করবেন যেন তার বোনটি প্রাণে বেঁচে যান।
আব্দুল আজিজ জানান, বছর খানেক আগে পাশের থানা উলিপুরের খাগরিয়া ঘাট গ্রামের আনিসুর রহমানের সাথে তার বোনে বিয়ে হয়। আনিসুর ঢাকায় একটি গার্মেন্টসে চাকরি করেন। ৩৬ তিন আগে তাদের কোল জুড়ে ফুটফুটে একটি কন্যা সন্তানের জন্যও হয়েছে।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের চিকিৎসক নূর আলম সিদ্দিকী জানান, জবার শরীরের ৭০ শতাংশ পুড়ে গেছে। শুধু গলার অংশটুকু ভাল আছে। এই ধরনের রোগীকে বাঁচানো খুবই কঠিন। তারপরও আমাদের পক্ষ থেকে যথাসাধ্য চেষ্ঠা করা হচ্ছে।
তিনি জানান, এখন পর্যন্ত ৫৫ জন নারী-শিশু-বৃদ্ধ দগ্ধ হয়েছেন। তাদের বেশীর ভাগই শীতে আগুন পোহাতে গিয়ে দগ্ধ হন। এদের মধ্যে নারীই বেশি। এই দগ্ধদের মধ্যে সর্বশেষ ১৩ জন মারা গেছেন চিকিৎসাধীন অবস্থায়।
from Sylhet News | সুরমা টাইমস http://ift.tt/2mAn0a1
January 16, 2018 at 01:48PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Click to see the code!
To insert emoticon you must added at least one space before the code.