সুরমা টাইমস ডেস্ক ঃঃ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ অন্যদের রায়ের দিন ৮ ফেব্রুয়ারি ধার্য করেছেন আদালত। মামলার সম্ভাব্য রায় ও প্রতিক্রিয়া নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে। বিএনপি নেতারা বলছেন, নেতিবাচক রায় হলে সেদিন থেকে সরকার পতন তথা গণঅভ্যুত্থানের ভিত্তি তৈরি হবে। আর সরকার ও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, আদালতের রায়কে কেন্দ্র করে কেউ বিশৃঙ্খলা করলে প্রতিহত করা হবে।
খালেদা জিয়ার এই মামলার রায় নিয়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। খালেদার সাজা হলে দেশের রাজনীতিতে দীর্ঘমেয়াদে অনিশ্চয়তা তৈরি হবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তবে খালেদা জিয়ার সাজা হলেও বিকল্প ভেবে রেখেছে সরকার ও আওয়ামী লীগ।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে ২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দীর্ঘ প্রক্রিয়ার পর আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি মামলার রায়ের দিন ধার্য করেছেন আদালত।
খালেদা জিয়ার রায়ের দিন ধার্য হওয়ায় বিএনপি আশঙ্কা করছে, খালেদা জিয়াকে সাজা দিয়ে তাকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে চায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এনিয়ে বিএনপি নেতারা ইতোমধ্যে বক্তৃতা-বিবৃতিতে উত্তাপ ছড়াচ্ছেন।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘ক্ষমতাসীনরা বিএনপিকে বাদ দিয়ে আগামী নির্বাচন করতে চান। সেজন্যই তাড়াহুড়া করে বিচারকাজ শেষ করছেন। আমরা এখন পর্যন্ত কোনো কর্মসূচি ঘোষণা করিনি। কর্মসূচি দিলে কোথায় যাবেন তারা?’
দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, ‘৮ ফেব্রুয়ারি সরকারের আদিষ্ট হয়ে কোনো নেতিবাচক সিদ্ধান্ত দিলে, সেদিন থেকেই সরকার পতনের ঘণ্টা বাজতে শুরু করবে।’
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান বলেছেন, ‘মামলা যদি প্রত্যাহার না করা হয় তাহলে গণআন্দোলন, গণঅভ্যুত্থান হবে। তার দায়-দায়িত্ব আওয়ামী লীগকে নিতে হবে।’
এদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রায় নিয়ে সরকার কোনো হস্তক্ষেপ করছে না। এই রায়কে কেন্দ্র করে বিএনপি পুরনো সন্ত্রাসী কার্যক্রম শুরু করলে সচেতন জনগণ প্রতিহত করবে।
তিনি প্রশ্ন করে বলেন, ‘আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে তারা বিক্ষোভ করবেন, প্রতিঘাত করবেন? বেগম জিয়াকে বা বিএনপির রাজনীতিকে আমরা ভয় পাই না। ভয় পাই তাদের নেতিবাচক রাজনীতি; ২০১৩ ও ২০১৪ সালের পেট্রল বোমাকে। এগুলো আবারও করার চেষ্টা হলে প্রতিহত করা হবে।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, ‘খালেদা জিয়ার রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে কেউ বিশৃঙ্খলার চেষ্টা করলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এ বিষয়ে সতর্ক আছে। আগের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও এখনকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এক নয়। ’
দু’পক্ষের এমন পাল্টাপাল্টি হুমকিতে আসন্ন নির্বাচন নিয়ে দেশব্যাপী অস্থিরতা সৃষ্টির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এ সমস্যা থেকে উত্তরণে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সমাধানের পথ একটাই আলাপ-আলোচনা।
সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘সমাধান রাজপথে নয়, হুমকি-ধমকি বা সহিংসতায়ও নয়। এ সংকট সমাধানে আলোপ-আলোচনার মধ্যদিয়ে সমঝোতায় আসতে হবে। এটাই রাজনৈতিক পদ্ধতি।’
তবে সংলাপের দাবি নাকচ করে দিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘সংলাপের নামে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। অতীতে এই দেশে কোনো সংলাপ সফল হয়নি। ভবিষ্যতেও হবে না।’
তিনি বলেন, ‘চক্রান্তকারীরা এতে সুযোগ নেবে। সংলাপ ব্যর্থ হলে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হবে। তখন একটা শ্রেণি বলবে, কোনো পথ নেই, ১/১১ সৃষ্টি করো। আমরা এমন কোনো সংলাপে বিশ্বাস করি না।’
তবে সংকট যাতে চরম পর্যায়ে না পৌঁছায় সেজন্য সতর্কতা হিসেবে বিকল্প ভেবে রেখেছে আওয়ামী লীগ। দলের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, খালেদা জিয়াকে নির্বাচনে অংশ নিতে দেয়া হবে না- বিএনপির এ আশঙ্কা সঠিক নয়।
তাদের মতে, খালেদা জিয়ার মামলা যথাযথ প্রক্রিয়ায় চলবে। নিম্ন আদালতে সাজা হলেও উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে নির্বাচন করতে পারবেন তিনি। এনিয়ে শঙ্কার কিছু নেই। কারণ আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচন সবার অংশগ্রহণের অবাধ ও সুষ্ঠু করতে চায়। এতে বিএনপিরও অংশগ্রহণের সুযোগ থাকবে।
এরপরও সবার দৃষ্টি আগামী ৮ ফেব্রুয়ারির দিকে- সেদিন বকশীবাজার আলিয়া মাদ্রাসায় স্থাপিত বিশেষ আদালত-৫ এর বিচারক ড. আখতারুজ্জামান কী রায় দেন। আর ওই রায়েই হয়তো বাংলাদেশের রাজনীতি আরেকটি বিশেষ পর্যায়ে পা রাখবে।
from Sylhet News | সুরমা টাইমস http://ift.tt/2rHEFTj
January 27, 2018 at 01:03PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন