নিজস্ব প্রতিনিধি:: সিলেটের মৌলভীবাজারের দুই ছাত্রলীগ কর্মী হত্যার ১ মাস পেরিয়ে গেলেও ধরা-ছোঁয়ার বাইরে রয়েগেছে মূল আসামীরা। ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে গত বছরের ৭ই ডিসেম্বর সন্ধ্যায় মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ছাত্রাবাসের ফটকের সামনে হত্যা করা হয় মৌলভীবাজার সরকারি কলেজের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মোহাম্মদ আলী শাবাব এবং মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী নাহিদ আহমদ মাহিকে।
এ হত্যাকান্ডের দু’দিন পর ৯ই ডিসেম্বর নিহত ছাত্রলীগ কর্মী মোহাম্মদ আলী শাবাবের মা সেলিনা রহমান চৌধুরী বাদী হয়ে ১২ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরও ৬-৭ জনকে আসামি করে মৌলভীবাজার সদর মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
জানা যায়, নানা গ্রুপে বিভক্ত সরকার দলীয় রাজনীতিতে নিজেদের অবস্থান জানান দিতে নিহত শাবাব এবং মামলার প্রধান আসামী তুষার নিজেদের মধ্যে উপগ্রুপ সৃষ্টি করে। নিজ নিজ উপগ্রুপে অনুসারী বাড়াতে মরিয়া হয়ে উঠে শাবাব এবং তুষার। নিহত মাহি ছিল শাবাব গ্রুপের মৌলভীবাজার সরাকারী স্কুলের সক্রিয় কর্মী।
এরই প্রেক্ষিতে শুরু হতে থাকে তুচ্ছ ঘটনায় কথাকাটাকাটি, ঝগড়া, হাতাহাতি ও মারামারি। প্রায় ৬ মাস পুর্ব থেকে এ দ্বন্দ্ব ছিল চলমান। যার চূড়ান্ত রূপ পায় গত ৭ ডিসেম্বর। জোড়া খুনের ঘটনার মধ্য দিয়ে থেমে যায় গ্রুপ ও উপগ্রুপের কার্যক্রম।
এই জোড়া খুনের ঘটনায় মৌলভীবাজারের সর্বত্র আলোড়ন সৃষ্টি করে, সামাজিক মাধ্যমে ঘুরে ফিরে মাস জুড়েই আসে মাহি এবং শাবাবের কথা। স্কুল ড্রেস পড়া নাহিদ আহমদ মাহির ফেইসবুক প্রোফাইল ছবি ভাইরাল হয় সামাজিক মাধ্যমে। স্কুল পড়ুয়া ছেলে রাজনৈতিক হত্যার শিকার তা মানতে পারেনি সচেতন মহল।
পুলিশ এ পর্যন্ত মামলার এজাহারভুক্ত তিন জনকে গ্রেফতার করে এবং আরেক আসামী আরাফাত রহমান আদালতে আত্মসমর্ণপন করেছে। তবে মামলার প্রধান আসামি ছাত্রলীগ কর্মী আনিসুল ইসলাম তুষার এখনও গ্রেফতার হয়নি। ঘটনার ১ মাসেও মূল আসামিরা ধরা না পড়ায় হতাশ নিহতদের পরিবার। পুলিশ ও বর্তমান ক্ষমতাশীল দলের নেতাদের ভুমিকা নিয়ে প্রকাশ্যে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন ছাত্র, শিক্ষক, সাংবাদিক সহ সুশীল সমাজের অনেকে।
মামলার বাদী ও নিহত শাবাবের মা সেলিনা রহমান চৌধুরীর বলেন, পুলিশ অনেক চেষ্টা করছে বলে আমাকে জানিয়েছে তবে জোড়া খুন নিয়ে যতটা তৎপর হবার কথা তা হচ্ছে না। মৌলভীবাজারের সুশীল সমাজসহ ক্ষমতাসীনরা সোচ্ছার হলে অবশ্যই এই আসামীরা ধরা পড়বে।
তিনি আরো জানান, এই হত্যাকান্ডের বিচার না হলে মৌলভীবাজার বারবার অশান্ত হবে। আমি বিশ্বাস করি ক্ষমতাসীনা প্রশয় না দিলে এদের বিচার হবেই।
নিহত শাবাবের মামা শাম্মীর হাহিব চৌধুরী রবিন বলেন, “শাবাব ও মাহিকে যারা হত্যা করেছে তারা খুনি, খুনিদের কোন দল থাকতে পারে না। সমাজে আর কোন পরিচয় থাকতে পারে না। আমি এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই। যেনো শান্তির শহরে আর কোন বাবার কাদে সন্তানের লাশ না উঠে।
নিহত মাহির মামা মোহাম্মদ গোলাম ইমরান আলী জানান, জেলা পুলিশ সুপার ও সিলেট বিভাগের ডিআইজি সহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঘটনার পরপর আমাদেরকে আশ্বস্ত করেন, খুব দ্রুত প্রধান আসামী ছাত্রলীগ কর্মী আনিসুল ইসলাম তুষারসহ সবাইকে গ্রেফতার করা হবে কিন্তু ঘটনার এক মাসে গ্রেফতার না হওয়া হতাশাজনক।
তিনি আরো জানান, ছাত্রলীগের রাজনীতি করে প্রাণ দিলেও আজ পর্যন্ত ক্ষমতাশীন দলের কোন নেতা নিহত মাহীর মা-বাবা কে স্বান্তনা দিতে যাননি।
মাহির বাবা বিলাল আহমদ জানান, আমার শেষ সম্বল ছিল আমার ছেলে মাহি যারা আমার ছেলেকে তাদের স্বার্থে ফুসলিয়ে ব্যাবহার করেছে তারা এখন কোথায়? তারা একটি বারের জন্য আমাদের অবস্থা দেখতে আসেননি। তিনি হতাশা প্রকাশ করে বলেন, যাদের কারণে আমার পরিবার নিঃস্ব হল আল্লহ যেন তাদের বিচার করেন। যারা এই হত্যাকান্ড নিয়ে নিজেদের স্বার্থ দেখছে আল্লাহ তাদের পরিবারের জন্য আমার পরিবারের চেয়ে কঠিন কিছু রাখবে।
উক্ত ঘটনায় মাহির মা জুলেখা আক্তার ঘটনার পরপর পুত্র শোকে মানসিক ভারসাম্য হারিয়েছেন এখনো তিনি স্বাভাবিক হতে পারেন নি।
মোলভীবাজার মডেল থানার ওসি সোহেল আহমেদ জানান, এই মামলার আসামীদের ধরতে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। আসামিদের ধরতে আমরা অভিযান চালাচ্ছি বলেই স্বেচ্ছায় বাধ্য হয়ে তারা এখন আত্মসর্পন করছে।
এ পর্যন্ত এই মামলায় গ্রেফতারকৃতরা হলেন- কনক, আল-জামিল ও রুবেল মিয়া। ২নং আসামী আরাফাত রহমান আদালতে আত্মসমর্ণপন করেছেন। ৮নং ও ৫নং আসামী অপ্রাপ্ত বয়স্ক থাকায় আদালত ওই দু জনকে ঢাকা গাজীপুর কিশোর সংশোধন কেন্দ্রে পাঠিয়েছে। বাকী দুই জনকেই মৌলভীবাজার কারাগারে রাখা হয়েছে।
from Sylhet News | সুরমা টাইমস http://ift.tt/2mtgqlT
January 13, 2018 at 06:17PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Click to see the code!
To insert emoticon you must added at least one space before the code.