স্টাফ রিপোর্টার : ৫ই জানুয়ারি দশম জাতীয় নির্বাচনের চতুর্থবার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপি ঘোষিত দেশব্যাপী কালো পতাকা মিছিল পুলিশি বাধার মুখে পড়েছে বিভিন্ন জেলা-উপজেলায়। হামলা ও গ্রেপ্তারের শিকার হয়েছেন নেতাকর্মীরা। কালো পতাকা মিছিলকে কেন্দ্র করে খুলনা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, বান্দরবান
ও ঢাকার কেরানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর লাঠিচার্জ করেছে পুলিশ। এতে আহত হয়েছে শতাধিক। এ সময় অন্তত ৪০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। কয়েকটি জেলা ও উপজেলা বিএনপি কার্যালয় তালাবদ্ধ ও নেতাকর্মীদের ধাওয়া দিয়ে পণ্ড করা হয়েছে কর্মসূচি।
বরিশালের বিএনপি অফিসের সামনে মঞ্চ নির্মাণ করে আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে পুলিশের বাধার মুখেও কালো পতাকা মিছিল ও সমাবেশ করেছে চট্টগ্রাম মহানগর, রাজশাহী, নারায়ণগঞ্জ, যশোর, মুন্সীগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, মেহেরপুর, লক্ষ্মীপুর ও সিলেটের জকিগঞ্জ বিএনপি। এদিকে অনুমতি জটিলতায় ঢাকার সমাবেশটিও আয়োজন করতে পারেনি দলটি। প্রতিবাদে আজ শনিবার ঢাকা মহানগরের প্রতিটি থানায় থানায় বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে বিএনপি। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টায় নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, ৫ই জানুয়ারি গণতন্ত্র হত্যা দিবস উপলক্ষে বিএনপিকে সমাবেশের অনুমতি না দেয়ার প্রতিবাদে ৬ই জানুয়ারি শনিবার ঢাকা মহানগরীর থানায় থানায় বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হবে। উল্লেখ্য, ২০১৫ সাল থেকে ৫ই জানুয়ারিকে ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছে বিএনপি।
নয়াপল্টনে দিনভর পুলিশের কঠোর অবস্থান
৫ই জানুয়ারি একতরফা দশম জাতীয় নির্বাচনের চতুর্থবার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপির সমাবেশ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে গতকাল ভোর থেকে বিএনপির নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ও আশপাশের এলাকায় কঠোর অবস্থান নেয় পুলিশ। বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ছাড়াও বিজয়নগর থেকে ফকিরাপুল পর্যন্ত প্রতিটি গলির মুখে নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সেই সঙ্গে সাদা পোশাকে বিভিন্ন সংস্থার লোকজনের তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো। পুলিশ সদস্যদের উপস্থিতির পাশাপাশি মোতায়েন করা হয় এপিসি, জলকামান ও প্রিজন ভ্যান। পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, ৫ই জানুয়ারিকে কেন্দ্র করে যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। নয়াপল্টন এলাকায় পুলিশের কঠোর অবস্থান প্রসঙ্গে বিএনপির নেতাকর্মীরা জানান, সকালে পার্টি অফিসের সামনে পুলিশ সারিবদ্ধ হয়ে এমনভাবে অবস্থান নেয়, যাতে কার্যালয়ে একটা পাখিও ঢুকতে না পারে। এদিকে, প্রতিদিন নয়াপল্ট?নে দলের নেতাকর্মী?দের ব্যাপক উপস্থি?তি থাক?লেও গতকাল দৃশ্য ছিল ভিন্ন।
গণতন্ত্রের নিষ্ঠুর প্রতিপক্ষ বর্তমান সরকার
রিজভী আহমেদ বলেন, আওয়ামী লীগ ঢাকায় দু’টি সমাবেশ করছে, অথচ বিএনপিসহ বিরোধী দলকে সমাবেশ করতে বাধা দেয়া হলো। ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারি বিতর্কিত ও কলঙ্কিত নির্বাচনকে আড়াল করার জন্যই বিএনপির কর্মসূচি পালনে বাধা দিতে পোড়ামাটি নীতি অবলম্বন করেছে। আওয়ামী লীগ যে গণতন্ত্র হত্যাকারী দল বিএনপিকে সমাবেশ আয়োজনে বাধা দিয়ে আবার তা প্রমাণ দিলো। গণতান্ত্রিক রীতি-নীতিতে ন্যূনতম বিশ্বাসী দল হলে বিএনপিকে সভা-সমাবেশ করতে বাধা দিতো না। এর মাধ্যমে সরকারের গণতন্ত্র ও গণতন্ত্রে স্বীকৃত বিরোধী দলের অধিকারের ওপর দুর্বৃত্তমূলক আচরণের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। আসলে বর্তমান ভোটারবিহীন সরকার গণতন্ত্রের নিষ্ঠুর প্রতিপক্ষ। তিনি বলেন, ভোটারবিহীন ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন দেশে বিদেশে যা বিতর্কিত ও কলঙ্কিত নির্বাচন হিসেবে গণ্য হয়েছে, কেউ তাদের সে নির্বাচনকে স্বীকৃতি দেয়নি। সেই লজ্জা ঢাকতে বিএনপিসহ বিরোধী দলের কণ্ঠ রোধ করতেই কর্মসূচিতে দুর্বিনীত কায়দায় বাধা দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মূল উপাদান ছিল গণতন্ত্র। আর এই গণতন্ত্র হচ্ছে বহু মত ও পথের বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে যাওয়া। কিন্তু আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মূলত আওয়ামী চেতনা, তারা বহুমাত্রিকতা ও বৈচিত্র্যে বিশ্বাস করে না। আওয়ামী মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অন্তর্নিহিত উপাদান হচ্ছে নিজেদের লোভ, দুর্নীতি ও দখলবাজি অব্যাহত রাখা। এসব অপকর্মের বিরুদ্ধে আওয়াজ উঠবে বলেই তারা বিরোধী দল সহ্য করতে পারে না। বিএনপির মুখপাত্র বলেন, সরকারের লোভ ও দুর্নীতির প্রকোপে প্রতি বছর দেশ থেকে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার মতো অর্থ পাচার হয়ে যাচ্ছে। দেশে যখন দীর্ঘদিন ধরে বিনিয়োগই নেই তখন এই অর্থ পাচারে স্পষ্ট প্রমাণিত হয় দেশে চলছে গণবিরোধী লুটেরাদের রাজত্ব। আদিম অমানবিকতার মনোবৃত্তি নিয়ে গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ছাড়াও দুর্নীতি ও অনৈতিক উপায়ে অর্থ উপার্জন এবং মালয়েশিয়ায় আলোচিত সেকেন্ড হোম ও কানাডায় বেগম পাড়া তৈরি ইত্যাদি আড়াল করে রাখতেই বিরোধীদলহীন রাষ্ট্রব্যবস্থা কায়েমের নীলনকশা বাস্তবায়ন করছে বর্তমান বিনা ভোটের সরকার। আর সে কারণেই বিএনপিকে ৫ই জানুয়ারি গণতন্ত্র হত্যার কালো দিবসের কর্মসূচিতে উন্মত্ত সন্ত্রাসী দলের মতো আচরণ করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। রিজভী বলেন, গণতন্ত্র হত্যা দিবসে বিএনপি যাতে কালো পতাকা মিছিল করতে না পারে সেজন্য প্রশাসন যন্ত্রকে টর্চারিং মেশিন হিসেবে ব্যবহার করেছে সরকার। সারা দেশে বিএনপি নেতাকর্মীদের হুমকি দিয়েছে পুলিশ। পুলিশ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিএনপি কার্যালয়গুলোতে তালা লাগিয়ে দিয়েছে। গাজীপুর বিএনপি কার্যালয়ের পিওনকে স্থানীয় পুলিশ হুমকি দিয়ে বলেছে ‘সারা দিন রাত অফিস বন্ধ রাখবি, নইলে তোকে গুলি করে মেরে ফেলা হবে’। গাজীপুর, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে দলের কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে পুলিশ। সারা ময়মনসিংহ জেলা জুড়ে যেন এক অঘোষিত কারফিউ চলেছে। জেলা সদর ও থানাগুলোতে চলছে পুলিশের দানবীয় তাণ্ডব। দেশের বিভিন্ন জেলা ও মহানগরে বিএনপির কর্মসূচি বানচাল করার জন্য কার্যালয়গুলো বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে পুলিশ। শুক্রবার সকাল থেকে বরিশালে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সরোয়ারের বাসা ঘিরে রাখে পুলিশ। পাশাপাশি সরকারি দলের সমর্থকরাও সারা দেশে ব্যাপকভাবে বাধা ও হুমকি দিয়েছে। কিন্তু সরকারের সকল বাধা, শৃঙ্খল, নিপীড়ন, উৎপীড়ন, নিষ্ঠুরতা, নির্দয়তা, মামলা ও গ্রেপ্তার মোকাবিলা করেই দেশব্যাপী কালো পতাকা মিছিলের কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি ও অঙ্গ এবং সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
আইইবি’র সাধারণ সম্পাদকের মন্তব্য অশালীন
বিএনপির মুখপাত্র রিজভী আহমেদ বলেন, ২রা জানুয়ারি ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশনের আলোচনা সভায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপস্থিতি বাধাগ্রস্ত করতে ইন্সটিটিউট কর্তৃপক্ষের নানামুখী ঠগবাজি আপনারা প্রত্যক্ষ করেছেন। দেড় মাস আগে ৯ই নভেম্বর সেখানে অনুষ্ঠানের জন্য স্থান বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করেছিল ছাত্রদল। হলের ভাড়াও পরিশোধ করা হয়। ২৭শে ডিসেম্বর অনুষ্ঠানের নিরাপত্তার বিষয়ে চিঠি দিয়ে মহানগর পুলিশ কমিশনার ও শাহবাগ থানাকে অবহিত করে। অনুষ্ঠানের আগের রাতে ছাত্রদল নেতাকর্মীরা হল ও মঞ্চের সাজসজ্জা করে। রিজভী বলেন, ২রা জানুয়ারি ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভার বক্তব্যে বিষয়গুলো উল্লেখ করায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশনের সাধারণ সম্পাদক এমএ সবুর যে মন্তব্য করেছেন তা রুচিগর্হিত ও অশালীন। তিনি বিএনপি মহাসচিবের বক্তব্যকে স্বভাবসুলভ মিথ্যাচার বলে উল্লেখ করেছেন। রিজভী বলেন, একজন প্রকৌশলী হিসেবে আইইবি’র মতো প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীল পদে অধিষ্ঠিত থেকে বিএনপি মহাসচিবের মতো একজন জাতীয় নেতার বক্তব্য নিয়ে সবুর সাহেবের এধরনের বক্তব্য দেশের মানুষের কাছে অমার্জিত ও অরুচিকর প্রতীয়মান হয়েছে। কোন সজ্জন, শিক্ষিত ও পেশাজীবী ব্যক্তি কখনই একজন জাতীয় নেতার বক্তব্য নিয়ে এধরনের অশোভন ও ধৃষ্টতাপূর্ণ বক্তব্য দিতে পারে না। শুধুমাত্র আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাই নয় বরং সমর্থকরাও কুরুচিপূর্ণ উন্মাদনার সংস্কৃতিতে ভোগে। আমি তার এ ধরনের বক্তব্যের ধিক্কার ও ঘৃণা জানাই। সংবাদ সম্মেলনে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, কেন্দ্রীয় নেতা নাজিমউদ্দিন আলম, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, সানাউল্লাহ মিয়া, হাবিবুল ইসলাম হাবিব উপস্থিত ছিলেন।
from Sylhet News | সুরমা টাইমস http://ift.tt/2Eemrdk
January 06, 2018 at 02:24PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন