নিউজ ডেস্ক ঃঃ যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত মানবতাবিরোধী অপরাধী চৌধুরী মঈনুদ্দীন পুলিশের আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারপোলের ‘মোস্ট ওয়ান্টেড ব্রিটিশ ফিউজিটিভ’এর তালিকায় রয়েছে। অথচ অনেকটা প্রকাশ্যেই দিন কাটাচ্ছেন এই কুখ্যাত অপরাধী। ইন্টারপোল তার ‘হদিস না পেলেও’ ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য সান তাকে সহজেই খুঁজে পায়, অনুসরণ করে।
দ্য সানের ম্যাট উইলকিনসনের করা এক প্রতিবেদনে এমনটিই উঠে এসেছে।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য বাংলাদেশের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে ইন্টারপোল বেশ আগেই চৌধুরী মঈনুদ্দীনের নামে রেড নোটিশ জারি করে। ইন্টারপোলের পলাতক ২৫ জন মোস্ট ওয়ান্টেড ব্রিটিশের প্রকাশিত তালিকায় চৌধুরী মঈনুদ্দীনের ছবি রয়েছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ২০১৩ সালের ৩ নভেম্বর আলবদর নেতা চৌধুরী মঈনুদ্দীনকে ফাঁসির আদেশ দেন। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে ১৮ জন বুদ্ধিজীবীকে হত্যার দায়ে দণ্ডিত হয় চৌধুরী মঈনুদ্দীন। এছাড়াও একই অপরাধে ফাঁসির আদেশ পায় আরেক আলবদর নেতা আশরাফুজ্জামান খান।
পলাতক এই দুই বদর নেতা বিচারের মুখোমুখি দাঁড়াননি। আত্মসমর্পণ না করায় তারা আপিলের সুযোগ হারায়। চৌধুরী মঈনুদ্দীন যুক্তরাজ্যের লন্ডনে অবস্থান করছে বলে পূর্বে থেকেই প্রচারিত। আশরাফুজ্জামান খান যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছে বলেও জানা যায়।
সাবেক এনএইচএস নেতা চৌধুরী মঈনুদ্দীন (৬৯) লন্ডনের শহরতলীতেই দিব্যি বসবাস করছে। নর্থ লন্ডনের সাউথগেটে ১ মিলিয়ন ব্রিটিশ পাউন্ড মূল্যমানের এক বাড়িতে সহজেই তাকে খুঁজে পায় ব্রিটিশ গণমাধ্যম সান।
ওই প্রতিবেদনে তার এক প্রতিবেশির বরাতে বলা হয়: চৌধুরী মঈনুদ্দীনকে বাজার করতে দেখা যায়, দেখা যায় মসজিদে যেতে। ইন্টারপোলের তো খুব বেশি খোঁজার প্রয়োজন নেই।
নিজ বাসায় মঈনুদ্দীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার বিষয়ে ঔদ্ধত্যপূর্ণ মন্তব্য করেন। তিনি সানকে বলেন, এটা পুরাই ‘রাবিশ’। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারকে ‘প্রহসন’ বলেন তিনি। ইন্টারপোলের রেড নোটিশের বিরুদ্ধে আপিল করেছেন বলেও জানান।
মুক্তিযুদ্ধের পরই ব্রিটেনে পালিয়ে আসেন মঈনুদ্দীন। ব্রিটেনের নাগরিকত্ব লাভ করেন। স্ত্রী ফরিদার (৫৭) ঘরে তার চার জন সন্তান রয়েছে।
ব্রিটিশ প্রিন্স চার্লসের সাথেও মঈনুদ্দীনের একটি ছবিও রয়েছে, যা তোলা হয়েছিলো লেইসেস্টারশায়ারে একটি ইসলামিক ইভেন্টে।
বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের দ্বৈত নাগরিক চৌধুরী মঈনুদ্দীন। বাংলাদেশে তাঁর ঠিকানা ফেনীর দাগনভূঞার চানপুর গ্রাম।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের দুদিন আগে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, চিকিৎসক, শিল্পী, লেখক, সাংবাদিকসহ বহু খ্যাতিমান বাঙালিকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে হত্যা করা হয়। তাতে প্রত্যক্ষ সহযোগিতা করে রাজাকার, আলবদর ও আল শামস বাহিনীর সদস্যরা।
সেই নীলনকশা বাস্তবায়নে নেতৃত্ব দেওয়া দুই বদর নেতা আশরাফুজ্জামান খান ও চৌধুরী মঈনুদ্দীন। বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের ‘দায়িত্বপ্রাপ্ত’ আলবদর বাহিনীর ‘চিফ এক্সিকিউটর’ ছিলেন আশরাফুজ্জামান খান। আর চৌধুরী মঈনুদ্দীন ছিলেন সেই পরিকল্পনার ‘অপারেশন ইনচার্জ’।
জামায়াতে ইসলামী তখনকার সহযোগী সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের এই দুই কেন্দ্রীয় নেতা মুক্তিযুদ্ধের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নয় জন শিক্ষক, ছয় জন সাংবাদিক ও তিনজন চিকিৎসকসহ ১৮ বুদ্ধিজীবীকে অপহরণের পর হত্যা করেন বলে রায়ে উঠে আসে।
রায়ে বলা হয়, ‘আশরাফুজ্জামান খান ও চৌধুরী মঈনুদ্দীন যে মুক্তিযুদ্ধের সময় ১৮ জন বুদ্ধিজীবী হত্যায় জড়িত ছিলেন, তা প্রসিকিউশনের তথ্য-প্রমাণে বেরিয়ে এসেছে।তারা কখনও নিজেরা হত্যায় অংশ নিয়েছে। কখনও জোরালো সমর্থন দিয়েছে ও উৎসাহ যুগিয়েছে।’
সে সময় আলবদর বাহিনীর ওপর ইসলামী ছাত্র সংঘের এই দুই নেতার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ছিল বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়।
from Sylhet News | সুরমা টাইমস http://ift.tt/2lCkQqa
January 02, 2018 at 01:44AM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন