মোঃ আবুল কাশেম, বিশ্বনাথ থেকে :: দীর্ঘ অপেক্ষার পর পূর্নাঙ্গ কমিটি পেল বিশ্বনাথ উপজেলা আওয়ামী লীগ। ১৩ জানুয়ারী শনিবার রাতে বিশ্বনাথ উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের প্রায় আড়াই বছর পর অবশেষে পূর্নাঙ্গ কমিটি অনুমোদন লাভ করে। সকল জল্পনা-কল্পনার অবশেষে উপজেলা আওয়ামী লীগের ৭৬ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির অনুমোদন করে জেলা আওয়ামী লীগ। সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এডভোকেট লুৎফুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী স্বাক্ষরিত ৭৬সদস্য বিশিষ্ট কমিটির অনুমোদন দেন। কমিটি অনুমোদনের পর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। এতে পদপ্রাপ্তি অনেক নেতারা খুশি হলেও,পদ-বঞ্চিত নেতারা ছিলেন নারাজ। তবে অনুমোদিত কমিটি অনুসন্ধানে ও দলীয় একাধিক নেতাদের মাধ্যমে জানাগেছে জেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিক চৌধুরী বলয়ের ৫৭ জন ও যুক্তরাজ্য আ.লীগের যুগ্ম-সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলয়ের ১৫জন নেতা উপজেলা আ.লীগের পূর্নাঙ্গ কমিটিতে স্থান পেয়েছেন। বাকি চারজন কোনো বলয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয় বলে সূত্রে জানাগেছে।
দীর্ঘদিন ধরে বিশ্বনাথ উপজেলা আওয়ামী লীগ দুটিভাগে বিভক্ত রয়েছে। সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি আলহাজ্ব শফিকুর রহমান চৌধুরী বলয়,অপরটি যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান বলয়। উভয় গ্রুপই কমিটি আসার পূর্বেই পৃথক পৃথক বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে। তবে নব-গঠিত পূর্নাঙ্গ কমিটিতে সভাপতি পদে শফিক চৌধুরীর বলয়ের নেতা পংকি খান ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক পদে আনোয়ারুজ্জামান বলয়ের নেতা ফারুক আহমদ স্থান পেয়েছেন। ওই কমিটির বেশিরভাগ পদ-পদবি স্থান পেয়েছেন শফিকুর রহমান চৌধুরী বলয়ের আওয়ামী লীগ নেতারা। তবে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলয়ের নেতারা পদ-পদবি থেকে অনেকেই বঞ্চিত হন।
বিশ্বনাথে সদ্য ঘোষিত উপজেলা আওয়ামী লীগের পূর্নাঙ্গ কমিটিতে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী বলয়ের অধিকাংশ নেতা দলের গুরুত্বপূর্ণ পদ পান। ফলে উপজেলায় শফিক চৌধুরী বলয়ের নেতাকর্মীরা বর্তমানে ফুরফুরে মেজাজে রয়েছেন।
সদ্য অনুমোদিত উপজেলা আওয়ামী লীগের পূর্নাঙ্গ কমিটিতে শফিক চৌধুরী অনুসারী ও আনোয়ারুজ্জামান অনুসারী যারা স্থান পেলেন।
শফিকুর রহমান চৌধুরী বলয়ের বিশ্বনাথ উপজেলা আ.লীগের পূর্নাঙ্গ কমিটিতে যারা স্থান পেলেন-সভাপতি আলহাজ্ব পংকি খান, সহ-সভাপতি শাহ আসাদুজ্জামান আসাদ, হাজী ইরন মিয়া, সমছু মিয়া, সেলিম আহমদ সেলিম, আখদ্দুছ আলী, হাজী আসাদুজ্জামান আসাদ, সিনিয়র যুগ্ম-সম্পাদক আমির আলী চেয়ারম্যান, শাহ ফয়েজ আহমদ সেবুল, মখদ্দছ আলী, সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কালাম জুয়েল, আবদুল আজিজ সুমন, আইন বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট গিয়াস উদ্দিন, কৃষি বিষয়ক সম্পাদক আবদুল মন্নান, তথ্য ও গবেষনা সম্পাদক আনোয়ার হোসেন, দপ্তর সম্পাদক সাহিদুল ইসলাম সাহিদ, ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক আবদুল মতিন, প্রচার সম্পাদক নিখিল পাল, বন ও পরিবেশ সম্পাদক রুনু কান্ত দে, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপিকা রুকিয়া বেগম, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক রনজিত ধর রন, যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক আবদুল বাহার আনা মিয়া, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম সিরাজ, সাংস্কৃতিক সম্পাদক শামিম আহমদ, স্বাস্থ্য সম্পাদক অধ্যাপক জহির হোসেন, সহ-দপ্তর সম্পাদক নুরুল হক মেম্বার, শ্রম বিষয়ক সম্পাদক সাধণ চন্দ্র দাস, সহ-প্রচার সম্পাদক ও প্রকাশনা সম্পাদক শাখাওয়াত হোসেন, অর্থ সম্পাদক নুরুল ইসলাম, সদস্য শফিকুর রহমান চৌধুরী, শাহ ফরিদ আহমেদ, শাহ মোশাহিদ আলী, এস এম নুনু মিয়া, শফিক উদ্দিন স্বপন, কবির আহমদ কুব্বার, অধ্যক্ষ নেহারুন নেছা, জয়ন্ত আর্চায্য, শেখ নূর মিয়া, আফরোজ বক্স খোকন, মখদ্দুছ আলী, মানিক মিয়া, রিয়াজুল হক, আজিজুর রহমান, আহমদ আলী, আকবর আলী, আনোয়ার আলী, তপন দাশ, এমদাদুল হক, শেখ আজাদ, আখতার হোসেন জুনেদ, মিজানুর রহমান, নাজমুল আলম চৌধুরী অপু,ডাক্তার শানুর হোসেন, ফজর আলী মেম্বার, রফিক হাসান মেম্বার, এনামুল হক মেম্বার, আলমগীর চেয়ারম্যান, নিজাম উদ্দিন।
আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলয়ের বিশ্বনাথ উপজেলা আ.লীগের পূর্নাঙ্গ কমিটিতে যারা স্থান পেলেন-সহ-সভাপতি ফখরুল ইসলাম মতছিন, জবেদুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) ফারুক আহমদ, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক ফখর উদ্দিন মাস্টার, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক মাহবুব রহমান লিলু, কার্যনির্বাহী সদস্য আ.ন.ম শফিকুল হক, মজম্মিল আলী, ছয়ফুল হক চেয়ারম্যান, অধ্যক্ষ আবদুল মুকিদ, তাজ উদ্দিন আহমদ, শেখ বাবরুছ আলী, আবদুল জলিল জালাল, আবুল কালাম, আশিক আলী।
দলীয় সূত্রে জানাযায়, ২০১৫ সালের ৮ জুন উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়। ওই সম্মেলনের কণ্ঠভোটে পংকি খানকে সভাপতি ও পুনরায় বাবুল আখতারকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করা হয়। তবে সম্প্রতি ওমরা হজ্ব পালনকালে সৌদিআরবে বাবুল আখতার মৃত্যুবরণ করেন। তারা দু’জনই ছিলেন শফিক চৌধুরী গ্রুপের নেতা। কিন্তু এই কণ্ঠভোটের প্রতিবাদ করেন আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী গ্রুপের নেতাকর্মীরা। তাদের দাবি, গোপন ভোটের মাধ্যমে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করতে হবে। আনোয়ারুজ্জামান গ্রুপের নেতাকর্মীদের দাবির মুখে দীর্ঘ প্রায় আড়াই বছরেও ওই তালিকার কমিটি প্রকাশ করা হয়নি। এ নিয়ে জেলা কমিটির সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক হয়েছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। আর ওই দ্বন্ধের আড়াই বছর ধরে এভাবেই ঝুলে ছিল উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি। অবশেষে উপজেলা আওয়ামী লীগের পূর্নাঙ্গ কমিটি অনুমোদন লাভ করে। এতে শফিক চৌধুরী বলয়ের জয়-জয়কার হয়েছে।
এব্যাপারে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলয়ের নেতা উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহমদ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে যারা আওয়ামী লীগের রাজনীতি করে আসছেন তাদের বাদ দিয়ে পূর্নাঙ্গ কমিটি গঠিত হয়েছে। যে কমিটি গঠিত হয়ে তা গঠনতদন্ত মূলকভাবে হয়নি। দলের গণতন্ত্র অনুযায়ী ৭১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠিত হওয়ার কথা থাকলেও সেখানে ৭৬ সদস্য বিমিষ্ট কমিটি করা হয়েছে। এতে ত্যাগী নেতাদের অপমূল্যায়ন করা হয়েছে। এবিষয়টি আমরা দলের শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দকে অবহিত করব।
শফিক চৌধুরী বলয়ের নেতা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব পংকি খান বলেন, দলের ত্যাগী নেতাদের দিয়েই পূর্নাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী দিনে ওই কমিটি জেলা আ.লীগের নেতৃত্বে আরও সুসংগঠিত হবে।
তিনি বলেন, দলের কমিটিতে স্থান পাওয়া সকলকে নিয়েই উপজেলা আ.লীগ আগামী দিনে আরও শক্তিশালী করা হবে। আমি মনে করি যারা কমিটিতে স্থান পেয়েছেন সকলেই আমরা ভাই ভাই। তাই দলকে এলাকায় আরও চাঙ্গা করতে দলীয় সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
from সিলেট – দ্যা গ্লোবাল নিউজ ২৪ http://ift.tt/2B1Sqvj
January 14, 2018 at 11:41PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন