মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ের পর দ্বিধায় বা সংশয়ে পড়ে গিয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প, অভিষেকের দিনটিও তার ভালো লাগেনি আর হোয়াইট হাউজ নিয়ে তার ভীতি ছিল, সদ্য প্রকাশিত একটি বইয়ে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
আগামী সপ্তাহে বাজারে আসার কথা থাকলেও বইটি নিয়ে বিব্রত ট্রাম্প প্রশাসন বৃহস্পতিবার এক আইনজীবির মাধ্যমে লেখক ও প্রকাশককে আইনি নোটিশ পাঠিয়ে বইটির প্রকাশ বন্ধ এবং ক্ষমা চাইতে বলেছেন। যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক সবগণমাধ্যমই বিষয়টি নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছে।
সিএনবিসি এর প্রকাশিত খবরে বলা হয়, হোয়াইট হাউস এর ভিতর-বাহির ঘটনাবলি নিয়ে লেখা বইটি আগামী মঙ্গলবারে বাজারে আসতে পারে। বইটিতে ট্রাম্পের অন্যতম সহযোগি এবং হোয়াইট হাউসের সাবেক স্ট্রাটেজিস্ট স্টিভ বেনন এর উদ্ধৃত করা এবং অভিজ্ঞতার বর্ণনা রয়েছে। লেখার কিছু অংশ বৃহস্পতিবার নিউইয়র্ক ম্যাগজিনে প্রকাশ পেয়েছে।
আইনজীবির পক্ষ থেকে বইটির লেখককে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, ট্রাম্প বইটির কোন ধরনের প্রকাশ, প্রচার এমনকি অংশ বিশেষ প্রচার না করার এবং এটি অবিলম্বে বন্ধ করার আহবান জানিয়েছেন। বইয়ে ট্রাম্প সম্পর্কে যা লেখা হয়েছে সেজন্য ক্ষমা চাইতে বলা হয়েছে
সাংবাদিক মাইকেল উলফের লেখা ‘ফায়ার এন্ড ফিউরি:ইনসাইড দি ট্রাম্প হোয়াইট হাউজ’ নামের এই বইতে ইভাঙ্কা ট্রাম্পের রাষ্ট্রপতি হওয়ার উচ্চাকাঙ্ক্ষার কথাও তুলে ধরা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে বিবিসির এক প্রতিবেদনে।
ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, দুইশোর বেশি সাক্ষাৎকারের উপর ভিত্তি করে বইটি লেখা হয়েছে। তবে হোয়াইট হাউজের গণমাধ্যম সচিব সারাহ স্যান্ডার্স বলছেন, বইটি অসত্য আর উদ্দেশ্যপ্রণোদিত তথ্য দিয়ে ভরা।
তবে বইটির লেখক বলছেন, অভিষেকের দিন থেকে শুরু করে ট্রাম্পের প্রশাসন গভীরভাবে দেখার সুযোগ তিনি পেয়েছেন। বইটিতে এমন কিছু অভিনব তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে, যেসব বিষয়ে আগে খুব একটা জানা যায়নি।
এখানে এই বইয়ের ১০টি বিস্ফোরক তথ্য:
১. ট্রাম্প জুনিয়রের সঙ্গে রাশিয়ানদের বৈঠক:
বইটির তথ্য অনুসারে, হোয়াইট হাউজের সাবেক কর্মকর্তা স্টিভ ব্যানন বলেছেন, ২০১৬ সালের জুনে রাশিয়ার কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তার সঙ্গে ট্রাম্প টাওয়ারে একটি বৈঠক করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র। সেখানে কোন আইনজীবীকে রাখা হয়নি। ওই বৈঠকে রাশিয়ানরা ট্রাম্প জুনিয়রকে হিলারি ক্লিনটনের বিষয়ে কিছু নেতিবাচক তথ্য তুলে দেন। পুরো ঘটনাটি রাষ্ট্রদ্রোহের মতো বলে মনে করেন ব্যানন। ‘আমাদের সে সময়েই এফবিআইকে ডাকা উচিত ছিল’ তিনি বলছেন।
এ প্রসঙ্গে ট্রাম্প বলেছেন, ব্যাননের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। যখন তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে, তখন তার মাথাও খারাপ হয়ে গেছে।
২. নির্বাচনে জিতে সংশয়ে পড়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প:
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ের কিছু পরেই ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র তার একজন বন্ধুকে বলেছেন, তার বাবাকে দেখে মনে হচ্ছিল যেন তিনি ভুত দেখেছেন। মেলানিয়ার চোখে ছিল জল, কিন্তু আনন্দের নয়। ডোনাল্ড ট্রাম্পকে দেখে স্টিভ ব্যাননের মনে হচ্ছিল তিনি যেন দ্বিধাগ্রস্ত, হতাশ আর ভীত হয়ে পড়েছেন। তারপর হটাৎ করেই যেন তিনি সোজা হয়ে দাঁড়ান এবং বিশ্বাস করতে শুরু করেন যে, এটা তার প্রাপ্যই ছিল।
৩. অভিষেকে নিরানন্দ ট্রাম্প:
অভিষেকের দিনটি উপভোগ করেননি ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রথম সারির বেশিরভাগ তারকা ওই অনুষ্ঠানটি বর্জন করায় তিনি ছিলেন রাগান্বিত, সবকিছু নিয়েই ছিল তার অসন্তোষ। এমনি প্রকাশে স্ত্রীর সঙ্গে তিনি ঝগড়াও করেন। ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পের চোখও যেন জমাট বেধে ছিল অশ্রু। যদিও এসব তথ্য নাকচ করে দিয়েছে মার্কিন ফার্স্ট লেডির দপ্তর।
৪. হোয়াইট হাউজ নিয়ে ভীত আর উদ্বিগ্ন ট্রাম্প:
মাইকেল উলফ লিখেছেন, হোয়াইট হাউজ নিয়ে উদ্বিগ্ন আর খানিকটা ভীত হয়ে পড়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি নিজের জন্য তিনি আলাদা একটি শয়নকক্ষ বেছে নেন। প্রথমদিনেই তিনি রুমে আরো দুইটি টেলিভিশন আর দরজায় তালা লাগানোর নির্দেশ দেন। যদিও তাতে আপত্তি করেছিলেন সিক্রেট সার্ভিস এজেন্টরা, কারণ তাদের মতে নিরাপত্তার জন্য এখানেও তাদের প্রবেশাধিকার থাকা দরকার।
৫. ভবিষ্যৎ প্রেসিডেন্ট ইভাঙ্কা ট্রাম্প?
ডোনাল্ড ট্রাম্পের মেয়ে ইভাঙ্কা ট্রাম্প তার স্বামী জ্যারেড কুশনারের সঙ্গে মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে, ভবিষ্যতে সুযোগ আসলে ইভাঙ্কা প্রেসিডেন্ট পদের জন্য নির্বাচনে দাঁড়াবেন। তাহলে হিলারি ক্লিনটন নয়, তিনিই হবেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট।
৬. ট্রাম্পের চুল নিয়ে মশকরা:
এই বইয়ের তথ্য অনুযায়ী, ডোনাল্ড ট্রাম্পের চুল নিয়ে মশকরা করতেন ইভাঙ্কা ট্রাম্প। কারণ তিনি মাথায় খুলিতে প্লাস্টিক সার্জারি করিয়েছিলেন। যার ফলে তার মাথার কয়েকটি অংশের চুল বিশেষভাবে সাজানো থাকে। তার মাথার চুলের রঙটিও রাসায়নিক কারণে হয়েছে বলে ইভাঙ্কা বলতেন।
৭. হোয়াইট হাউজে সিদ্ধান্তহীনতা:
ডোনাল্ড ট্রাম্পের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা জ্যারেড কুশনারের কাছে হোয়াইট হাউজের ডেপুটি চীফ অব স্টাফ কেটি ওয়ালশ জানতে চেয়েছিলেন অগ্রাধিকারের তালিকায় কোন কাজগুলো থাকবে? কিন্তু তার কোন জবাব দিতে পারেননি কুশনার। উলফ লিখেছেন, পরের ছয় সপ্তাহের মধ্যেও এ বিষয়ে কুশনারের কাছ থেকে কোন জবাব পায়নি হোয়াইট হাউজের কর্মীরা।
৮. রুপার্ট মারডকের জন্য ট্রাম্পের প্রশাসন:
মাইকেল উলফ লিখেছেন, নির্বাচনে জয়ের পর একটি অনুষ্ঠানে রুপার্ট মারডকের আসার কথা ছিল, কিন্তু তার দেরি হচ্ছিল। যখন যখন অতিথিরা চলে যাচ্ছিলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প তাদের আরো খানিকক্ষণ থাকার জন্য অনুরোধ করেন যে, মারডক পথে রয়েছেন। তার সঙ্গে তাদের দেখা করে যাওয়া উচিত।
৯. ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ‘গাধা’ বলেছিলেন রুপার্ট মারডক:
তবে মারডকের জন্য ট্রাম্পের যে ভক্তি শ্রদ্ধাই থাকুক না কেন, তিনি তার প্রতি ততটা সৌজন্য দেখাননি। সিলিকন ভ্যালির নির্বাহীর সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের একটি বৈঠকের আগে রুপার্ট মারডক টেলিফোনে অনুরোধ করেন যে, এইচ-ওয়ানবি ভিসার ব্যাপারটি বিবেচনা করা হয়। ট্রাম্প দেখা যাবে বলে জবাব দিলে তাকে ‘গাধা’ বলে ফোন কেটে দেন মারডক।
১০. ফ্লিন জানতেন রাশিয়া যোগাযোগ কাল হয়ে দাঁড়াবে:
উলফ লিখেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইকেল ফ্লিন নির্বাচনের আগেই বলেছিলেন, কোন বক্তৃতার জন্য রাশিয়ানদের কাছ থেকে ৪৫ হাজার ডলার গ্রহণ করা ভালো হবে না। তবে এটা তখনি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে, যদি আমরা নির্বাচনে জিতে যাই।
from Sylhet News | সুরমা টাইমস http://ift.tt/2qnVnGr
January 05, 2018 at 03:03AM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন