সুরমা টাইমস ডেস্ক :: তদন্ত কমিটির কাছে ডিএমপির সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন মরিয়ম আক্তার ইকোর মা কুইন তালুকদার। লিখিত অভিযোগে তিনি ডিআইজি পদমর্যাদার পুলিশের এই পদস্থ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তার মেয়ের ওপর নির্যাতনের নানা বর্ণনা তুলে ধরেন।
রোববার(১১ফেব্রুয়ারি) বেলা ৩টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত পুলিশ সদর দফতরে তার সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। এ সময় গঠিত লিখিত জবানবন্দি দেয়া ছাড়াও তিনি তদন্ত কমিটির বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবও দেন।
এক পৃষ্ঠার লিখিত জবানবন্দিতে কুইন তালুকদার বলেন, গত ১৮ ডিসেম্বর ডিআইজি মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রত্যাহার করা হয়নি। বরং মেয়ে ইকোর ওপর নির্যাতনসহ নানা বিষয় নিয়ে ডিএমপি কমিশনারের কাছে অভিযোগ করেছিলেন তিনি। এই একই অভিযোগ আরও বিভিন্ন দফতরেও দেয়া হয়। এরপর অভিযোগটি প্রত্যাহার করতে পরিবারকে জিম্মি করা হয়। স্বেচ্ছায় ও সজ্ঞানে ডিআইজি মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন উল্লেখ করে কুইন তালুকদার বলেন, মরিয়ম আক্তার ইকো ডিআইজি মিজানুর রহমানের স্ত্রী। একপর্যায়ে তাকে মিথ্যা মামলায় জেলহাজতে পাঠানো হয়। আবার জেলহাজত থেকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে জামিনে মুক্তও করা হয়। এরপর পারিবারিক সমঝোতার কথা বলে তাকে ও তার পরিবারকে জিম্মি করে অভিযোগ প্রত্যাহারের আবেদনে স্বাক্ষর করানো হয়। বর্তমানে ডিআইজি মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে আগের মতো অস্বাভাবিক আচরণের অভিযোগও করেন কুইন তালুকদার। এমনকি ডিআইজি মিজান তাদের পরিবারকে নতুন করে ফাঁসাতে নীলনকশা করছেন বলেও অভিযোগ করা হয়। এ কারণে তদন্ত কমিটির কাছে তিনি দ্বিতীয় দফা সাক্ষ্য দিতে এসেছেন।
ডিআইজি মিজানের অবৈধ সম্পদের খোঁজে দুদক : পুলিশের আলোচিত সেই ডিআইজি মিজানুর রহমানের অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মিজানের নামে-বেনামে শত কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে দুদকের কাছে। সেই অভিযোগ যাচাই-বাছাইয়ের অংশ হিসেবে দুদকের উপ-পরিচালক ফরিদ আহমেদ পাটোয়ারিকে রোববার অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে দুদকের গণসংযোগ কর্মকর্তা প্রণব কুমার ভট্টাচার্য বলেন, মিজানের সব স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের খোঁজে কাজ শুরু করেছেন দুদকের অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা। অনুসন্ধান শেষে অভিযোগের সত্যতা নিরূপণ সাপেক্ষে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান ওই কর্মকর্তা। এদিকে, দুদক সূত্রে জানা গেছে, ডিআইজি মিজানের ব্যক্তিগত নথি চেয়ে রোববার বিকালে আইজিপিকে চিঠি দিয়েছেন দুদকের অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা।
দুদক সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, এর আগেও মিজানের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান করেছিল দুদক। তখন তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ নথিভুক্তও করা হয়। তবে এবার নতুন করে অনুসন্ধানে তার চাকরি জীবনের সব আয়-ব্যয়, এনবিআরে দেয়া সম্পদের তথ্য, নারীঘটিত বিষয়ে বেশুমার অর্থ খরচের পেছনে টাকার উৎস, বিদেশে পরিবার-পরিজনের জন্য পাঠানো অর্থসহ পুরো বিষয়টি অনুসন্ধানের আওতায় আনা হবে।
জানা গেছে, পুলিশের উচ্চ পদে থেকে মিজান নিয়োগ-বদলি তদবিরসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। চাকরি জীবনে তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে নানা উপায়ে শত কোটি টাকার মালিক হন। তার নামে-বেনামে বিলাসবহুল বাড়ি, গাড়ি, ফ্ল্যাট ও জমি রয়েছে। একাধিক ব্যাংক হিসাবে রয়েছে মোটা অঙ্কের অর্থ ও ফিক্সড ডিপোজিট। এমনকি দেশের বাইরে অর্থ পাচারেরও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এসব অভিযোগ যাচাই-বাছাই কমিটির মাধ্যমে অনুমোদনের পর অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। এরপর অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হয়। অনুসন্ধান কাজ তদারকির দায়িত্বে রয়েছেন দুদকের পরিচালক মীর মো. জয়নুল আবেদীন শিবলী।
দুদক কর্মকর্তারা জানান, আজকালের মধ্যে এনবিআর থেকে ডিআইজি মিজানের আয়কর রিটার্নের নথি সংগ্রহ করবেন তারা। এছাড়া তার ও তার পরিবারের পোষ্যদের নামে থাকা স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের তথ্য চেয়ে চিঠি পাঠানো হবে বাংলাদেশ ব্যাংক, ঢাকা-বরিশাল জেলা রেজিস্ট্রার, বিআরটিএ, রাজউক, রিহ্যাবসহ সংশ্লিষ্ট অন্যসব অফিসে। তথ্য হাতে আসার পর ডিআইজি মিজানকে দুদকে তলব করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
from Sylhet News | সুরমা টাইমস http://ift.tt/2Bnansa
February 12, 2018 at 01:04PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন